অন্যতম ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে প্রায় এক ডজন মিগ-২৯ ফাইটার জেট দেবে। এর ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে চলেছে ন্যাটো।


প্রবল পরাক্রমী রাশিয়াকে স্থলযুদ্ধে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে ইউক্রেন। কিন্তু, আকাশপথে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এখনও রাশিয়া অনেকটাই এগিয়ে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এই ক্ষেত্রে পশ্চিমী শক্তির সাহায্য চাইছে কিয়েভ। কিন্তু, যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়বে, এই যুক্তিতে এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমী শক্তিগুলি ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করতে অনিচ্ছুক ছিল। কিন্তু, পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে বৃহস্পতিবার। অন্যতম ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে প্রায় এক ডজন মিগ-২৯ ফাইটার জেট দেবে। এর ফলে যুদ্ধের গতি অনেকটাই বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।


পোল্যান্ডের ঘোষণা

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ),পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ ডুদা ঘোষণা করেছেন, কিয়েভকে সোভিয়েত-নির্মিত ১২টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দেবে ওয়ারশ। এর মধ্যে চারটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। বাকিগুলির সার্ভিসিং প্রয়োজন। সেগুলি কয়েকদিন পরে পাঠানো হবে। বিমানগুলি তাদের কার্যক্ষমতার শেষ প্রান্তে থাকলেও, এখনও অত্যন্ত কার্যকরী অবস্থায় আছে। আরেক ন্যাটো সদস্য স্লোভাকিয়াও আগামী কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান

গত কয়েক দশক ধরে মিগ-২৯ বিমান ব্যবহার করছে ইউক্রেন। এটি একটি মাল্টিরোল ফাইটার জেট। তৈরি করেছিল সোভিয়েত রাশিয়া। সোভিয়েতের পতনের পর কয়েক ডজন মিগ-২৯ বিমান উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিল কিয়েভ। এই সোভিয়েতের তৈরি যুদ্ধবিমানগুলি ১,৪৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে এবং সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে। ১৯৮৫ সালে প্রথম এই একক-সিট এবং টুইন-ইঞ্জিনে বিশিষ্ট ফাইটার জেটগুলি সেনা বাহিনীতে যুক্ত করেছিল সোভিয়েত রাশিয়া। আকাশপথে যুদ্ধে এই যুদ্ধবিমানগুলি আজও অত্যন্ত কার্যকরী।

ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল, সেই সময় কিয়েভের হাতে প্রায় ১২০টি যুদ্ধবিমান ছিল। সেগুলির বেশিরভাগই ছিল রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ এবং সুখোই-২৭। ডাচ মনিটরিং গ্রুপ ওরিক্সের প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন প্রায় ৫৩টি যুদ্ধ বিমান খুইয়েছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহের জন্য ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমী শক্তিগুলির কাছে উন্নতমানের যুদ্ধবিমানের জন্য অনুরোধ করে আসছে কিয়েভ। আসন্ন বসন্তে রুশ আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিয়েভের মতে সেই সময় দ্রুত গতির ফাইটার জেটগুলি রাশিয়ান আক্রমণকে ভোঁতা করে দিতে পারে। তাদের চাহিদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান।

দ্বিধায় পশ্চিম

ইউক্রেনের এফ-১৬-এর অনুরোধ অবশ্য বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলেছে, এই যুদ্ধবিমান পরিচালনার জন্য ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে অনেক বেশি সময় লাগবে। তাছাড়া, রুশ বিমান বিধ্বংসী সিস্টেম সহজেই এই বিমানগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। গত বছরই ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল পশ্চিমী শক্তিগুলির মধ্যে। ন্যাটোর মিত্রশক্তিগুলি বিরোধিতা বলেছিল, এর ফলে যুদ্ধে ন্যাটো জোটের ভূমিকা বেড়ে যাবে। ব্রিটেন এবং জার্মানিও ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান পাঠাবে না বলে জানিয়েছে। পোল্যান্ডের সিদ্ধান্তের পরও, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন যে, যুদ্ধবিমান প্রদান নিয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি।

যুদ্ধ বদলে দিতে পারে কি মিগ বিমানগুলি?

পোল্যান্ডের এই ১২টি মিগ-২৯ বিমান ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে খুব বেশি উন্নত করতে পারবে না। তবে, পোল্যান্ডের এই সামরিক সহায়তার অন্য প্রভাব পড়তে পারে যুদ্ধের উপর। যুদ্ধের শুরু থেকেই পোল্যান্ড, ইউক্রেনকে শুধু ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্যই করেনি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কিয়েভের হয়ে মিত্রশক্তিগুলির সঙ্গে কথা বলেছে তারা। এখন, পোল্যান্ড কিয়েভে ফাইটার জেট পাঠানোয় অন্যান্য ন্যাটো সদস্যদের উপরও চাপ বাড়বে যুদ্ধবিমান পাঠানোর জন্য। প্রথমে প্রত্যাখ্যানের পরও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি যেভাবে ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই রকমই যুদ্ধবিমান নিয়েও অবস্থান বদলাতে পারে তারা। আর সেই ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্য়াটোর সরাসরি জড়িয়ে পড়বে ন্যাটো। সেই সম্ভাবনা কিন্তু ক্রমে উজ্বল হয়ে উঠছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours