বাংলাদেশ বন্যা, পানি সংকট ও লবণাক্ততা সমস্যায় ভুগছে জানিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পানি নিরাপত্তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ফলাফলভিত্তিক ও সমন্বিত ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী 

শুক্রবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় পানি ও দুর্যোগ বিষয়ে ‘বিল্ডিং ব্যাক বেটার টুওয়ার্ডস মোর রেজিলেন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবল পোস্ট-কোভিড-১৯ ওর্য়াল্ড’ শীর্ষক জাতিসংঘের পঞ্চম থিমেটিক সেশনে (ভার্চ্যুয়াল) দেওয়া ভিডিওবার্তায় এ আহ্বান জানান।

পানি নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী  বলেন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা- এ তিনটি শক্তিশালী নদীর মোহনা অবস্থিত বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিচু নদী তীরবর্তী দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি বিষয়ে দু’টি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার মুখোমুখি- পানির ঘাটতি এবং অধিক পানি প্রবাহ (বন্যা)।

তিনি বলেন, বর্ষায় ৯০ শতাংশ পানি সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের লোকালয়গুলো প্লাবিত করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। শুষ্ক মৌসুমে সারা দেশে খরার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করে। তারওপর সমুদ্রের লবণাক্ত পানি উজানের দিকে ওঠে আসায় উপকূলে নিরাপদ সুপেয় পানির অভাব নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি সম্পর্কিত দুর্যোগ প্রশমনে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টি করতে আমাদের সবার একটা দায়-দায়িত্ব রয়েছে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমরা আমাদের সময়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। মহামারির কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির কারণে টেকসই উন্নয়ন অগ্রগতি কমে গেছে। ক্রমবর্ধমান পরিষ্কার সুপেয় পানির অভাবের কারণে কলেরা, টাইফয়েডের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শান্তি ও উন্নয়নের জন্য নিরাপদ পানির প্রয়োজনীয়তার কথা।

(ভারত থেকে আসা বিভিন্ন নদীতে বাঁধের ফলে শুষ্ক মৌসুমে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র পানি অভাব সৃষ্টি হয় এবং দক্ষিণে উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্রে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি উজানের দিকে উঠে আসে। )

পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে পাঁচটি পরামর্শ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী 

১. পানি নিরাপত্তার জন্য আমাদের একটি বিস্তৃত (পড়সঢ়ৎবযবহংরাব), ফলাফল ভিত্তিক, দৃঢ় ও অভিযোজিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

২. রাজনৈতিক সচেতনতা, ভাল অনুশীলন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পানি ব্যবস্থাপনা, পানি নীতি এবং উপরের ও নি¤œ অববাহিকার দেশগুলোর মধ্যে পানি ব্যবহারের বিষয়টি সমন্বয় হওয়া উচিত।

৪. আমাদের সেনডাই ফ্রেমওয়ার্ক (ঝবহফধর ঋৎধসবড়িৎশ), এসডিজি ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে মনোযোগী উচিত।

৫. ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পাওয়া নিশ্চিত করতে অর্থায়ন প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েকটি দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি- চলমান এ  মহামারির মধ্যে সুপার স্লাইকোন আম্পান ও মৌসুমি বন্যায় ৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র কারণে ২৭টি উপজেলায় ফসল, মৎস্য সম্পদ ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম একটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও নদী ভাঙন এখন আরও বেশি হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থা নিয়েছে।

নিরাপদ, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জনে 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০' প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেন টানা তিনবারের সরকার প্রধান।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু স্থিতিশীল প্রকল্প বাস্তবায়নে 'মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান' প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানান 

আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে সারাদেশের ভূমিহী ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিহীন, গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আবাসনের জন্য আমাদের সরকার ৮ লাখ ৮৫ হাজার দুযোর্গ সহনীয় বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

সরকার ১৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ, ১২ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও ২ লাখ হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন করেছে বলে জানান সরকার প্রধান।

৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ শক্তিশালী ও উঁচু করার কাজ চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

 বলেন, সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি, লবণাক্ততা ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে লাখ লাখ মানুষকে সুরক্ষা দিতে উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে সরকার।
ে দেশে ৩০ মিলিয়ন গাছের চারা রোপণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রিনবেল্ট উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours