করোনার জেরে মানসিক চাপ বেড়েছে সবার। সেই চাপ কাটাতে কেউ আবার মদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। কেউ খাচ্ছেন এই আশায় যে, অ্যালকোহলে নাকি করোনার আশঙ্কা কমে। অ্যালকোহল যখন হাতের ভাইরাস মারতে পারে, মুখ ও গলার ভাইরাসও মারতে পারবে, এমন সব ভ্রান্ত ধারণাও ছড়িয়ে পড়ছে।
কেউ ভাবছেন, মাঝেমধ্যে দু-চার পেগ খেয়ে নিলেই হল। ফলে যাঁরা আগে মদ্যপান করতেন না বা ন-মাসে ছ-মাসে খেতেন, তাঁরাও এখন শুরু করেছেন নিয়মিত মদ্যপান। তাতে উপকার তো হচ্ছেই না, বরং বিপদ বাড়ছে। কারণ হাতে লাগা ভাইরাস অ্যালকোহলে মরলেও, তার শরীরে ঢোকার রাস্তাটা অত সরল নয় যে মদ তাকে মারবে। বরং বেশি মদ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে বিপদ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
‘’স্ট্রেস কমাতেও অতিরিক্ত মদ্যপানের কোনও ভূমিকা নেই,’’ একথা জানালেন মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায়। “অল্প দু-এক পেগ খেলে শরীরে ভাললাগার হরমোন ডোপামিনের ক্ষরণ বেড়ে মন একটু ফুরফুরে হয় ঠিকই, ঘুমও ভাল হয় অনেকের, কিন্তু সেটা সাময়িক। কিছুক্ষণই পরই এর প্রভাব কেটে যায়। সঠিক উপায়ে চাপ না সামলে যদি মদকে সঙ্গী করে কিছু ভুলতে চান, দিনে দিনে তার মাত্রা বাড়বে। তার হাত ধরে বাড়বে মানসিক চাপ ও অন্যান্য অসুখ।”

মদের প্রভাব

১. ২০১৫ সালে 'অ্যালকোহল রিসার্চ জার্নাল'-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত মদ্যপান করলে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে ফুসফুসে সংক্রমণ তথা নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বাড়ে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি স্ট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএস ও সেপসিসের আশঙ্কা। অর্থাৎ কোভিড ১৯-এর রোগীর যে যে কারণে রোগের জটিলতা বাড়ে, অতিরিক্ত মদ্যপানেও ঠিক সেইগুলির আশঙ্কাই বাড়ে। অর্থাৎ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ফলে সংক্রমণ একবার হলে তার বাঁকাপথে যাওয়ার আশঙ্কা প্রতি পদে।

২. "বেশি মদ খেলে মনের প্রতিরোধ ভেঙে যায়। ফলে তাঁরা এমন অনেক বিপজ্জনক কাজ করেন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় করার কথা ভাবেন না। করোনা সংক্রান্ত নিয়ম না মানাও আছে তার মধ্যে। তার হাত ধরে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।" জানালেন শিলাদিত্যবাবু।

৩. সংক্রমণের ভয় ও একাকীত্বের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপান যুক্ত হলে গার্হস্থ্য হিংসার প্রকোপ বাড়তে পারে। বাড়ে মানসিক চাপ। সব মিলে বাড়ে করোনার আশঙ্কা।

৪. যত বেশি মদ ও তার অনুষঙ্গে এটা সেটা খাওয়া, তত ওজন বাড়া, হাই প্রেশার-সুগার-কোলেস্টেরল বা হৃদরোগ থাকলে তার প্রকোপ বাড়া। এর প্রত্যেকটাই কোভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর, জানান মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়।

৫. মদ্যপানের সঙ্গে ধূমপান যুক্ত হলে বিপদ আরও বাড়ে, এ কথাও উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা

অতএব

একাকীত্ব ও মানসিক চাপ কমানোর অছিলায় অতিরিক্ত মদ্যপান করবেন না। মদ খেলে, খান রয়েসয়ে। মাঝেমধ্যে এক-আধ পেগ, যেমন আগে করতেন। বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছেন বলে বা স্রেফ বিরক্ত লাগছে বলে সপ্তাহান্তের মদ্যপানের রুটিনকে নিয়মিত করে ফেলবেন না।  যদি মনে হয় সব বুঝেও মাত্রা রাখতে পারছেন না, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সবাই অনলাইন কনসালটেশন করছেন, কাজেই চেম্বারে গিয়ে লাইন দিতে হবে, এমনও নয়। সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours