উপরাষ্ট্রপতি পদে নাম ঘোষণার সময় থেকেই ধনখড়কে কৃষক পুত্র হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর নাম ঘোষণার সময় জেপি নাড্ডা বলেছেন ‘কিসান পুত্র’। প্রধানমন্ত্রীর টুইটেও একই শব্দবন্ধ।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদে ঘোষণা করেছে এনডিএ। শনিবার সংসদীয় দলের বৈঠকের পর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ধনখড়ের নাম ঘোষণা করেন। তার পর টুইট করে ধনখড়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেশ কয়েকটি ব্যাপারে ধনখড়ের প্রশংসা করেছেন তিনি। উপরাষ্ট্রপতি পদে নাম ঘোষণার সময় থেকেই ধনখড়কে ‘কিসান পুত্র’ (কৃষক পরিবারের ছেলে) হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের নাম ঘোষণা বেশ অবাক করেছে রাজনৈতিক মহলকে। উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে আলোচনাতেও ছিলেন না তিনি। তাঁকে প্রার্থী করার পিছনে আগামী দিনে বিজেপির বেশ কিছু পরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি করার ব্যাপারে বেশ কিছু কারণও উঠে এসেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে গত তিন বছর ধরেই খবরের শিরোনামে থেকেছেন জগদীপ ধনখড়। এই সময় কালে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল সর্বজনবিদিত। সিন্ডিকেট চক্র, ভোট পরবর্তী হিংসা, নিয়োগ দুর্নীতি- বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূল সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্রমাগত সমালোচনা করেছেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর সমালোচনায় ‘বিজেপির সুর’ প্রতিধ্বনিত হয় বলে অভিযোগ ছিল বাংলার শাসকদলের। সে জন্য রাজ্যপাল ধনখড়কে ‘পদ্মপাল’ বলে কটাক্ষ করতেন তৃণমূল নেতারা। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল হিসাবে ধনখড়ের ‘পারফরম্যান্স’ কি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তাঁকে আরও আস্থাভাজন করে তুলেছিল? তারই পুরস্কার হিসাবে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হল তাঁকে? এ প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

উপরাষ্ট্রপতি পদে নাম ঘোষণার সময় থেকেই ধনখড়কে কৃষক পুত্র হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর নাম ঘোষণার সময় জেপি নাড্ডা বলেছেন ‘কিসান পুত্র’। প্রধানমন্ত্রীর টুইটেও একই শব্দবন্ধ। ধনখড়কে ‘কিসান পুত্র’ হিসাবে তুলে ধরার পিছনে বেশ কয়েকটি অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে রয়েছে আগামী বছর হতে চলা রাজস্থানের বিধানসভার ভোট। রাজস্থানে জন্ম জগদীপ ধনখড়ের। তিনি জাঠ। জাঠেরা রাজস্থানে ওবিসি। সে কারণেই কি ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণা করা হল? রাজস্থানে বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেসের সরকার। তার আগে সেখানে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তাই আগামী বছর রাজস্থানে ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া গেরুয়াশিবির। নয়া কৃষি আইন ঘোষণার পর থেকেই কৃষক বিক্ষোভ দেখেছিল গোটা দেশ। শিখদের পাশাপাশি জাঠরা এই কৃষি আইন নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। জগদীপকে প্রার্থী করে করে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা বলে মত রাজনীতির কারবারিদের। তাঁকে কৃষক পুত্র হিসাবে তুলে ধরে বিক্ষুব্ধ কৃষক সমাজকে বার্তা দেওয়া হল। আবার রাজস্থানের জাঠদের বোঝানো গেল যে বিজেপি তাঁদের পাশে, এমনই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে জগদীপ ধনখড়ের নাম ঘোষণার পরই টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর করা দু’টি টুইটের বক্তব্য থেকেও ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী করার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “সংবিধানের ব্যাপারে গভীর জ্ঞান রয়েছে জগদীপ ধনখড়জির। আইনসভার বিভিন্ন ব্যাপারেও তিনি দক্ষ। আমি নিশ্চিত রাজ্যসভা পরিচালনায় তিনি নিজের মুন্সিয়ানা দেখাবেন।” রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উপ রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি এমন এক জনকে চাইছিল, যিনি সংবিধানিক বিষয়ে দক্ষ। যাতে রাজ্যসভা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে (রাজ্যসভায় বিজেপি লোকসভার থেকে কম শক্তিশালী) সুবিধা হয়। রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্যেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, “আগামী দিনে সংবিধান নিয়ে নয়ছয় করার জন্য বিজেপি-র এমন একজনকে প্রয়োজন, যিনি সংবিধানের বিষয়টি ভাল জানেন। ধনখড় সে রকমই এক জন। তাই তাঁকে দিয়ে সংবিধানের ফাঁকফোরক খুঁজে বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে অনেক সুবিধা হবে।”

বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব জগদীপের সমর্থনে বলেছেন, তিনি জনতার প্রতিনিধি। পশ্চিমবঙ্গের জনতার সমস্যার কথা উঠে এসেছে তাঁর গলায়। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য যেমন বলেছেন, “বাংলার অত্যাচারিত মানুষ ধনখড়কে মনে রাখবেন। তিনি সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতাকে তুলে ধরেছেন। সরকারকে সতর্ক করেছেন। এই কাজ তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।” বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আঁটঘাট বেঁধে জগদীপকে উপরাষ্ট্রপতি করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছেন মোদী-শাহরা। অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।



Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours