দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের তরফে অভিযোগ উঠছিল, একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। অপরদিকে, কেন্দ্রের দাবি, বাংলায় এই প্রকল্পে বেলাগাম দুর্নীতি হয়েছে।


বড় ধাক্কা কেন্দ্রের, একশো দিনের প্রকল্প চালুর নির্দেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বললেন, 'এ ভাবে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না'
বড় নির্দেশ প্রধান বিচারপতির



রাজ্যে ফের ‘একশো দিনের’ প্রকল্প চালু করতে হবে। আগামী ১ অগস্ট থেকেই বাংলায় ফের এই প্রকল্প চালুর নির্দেশ কেন্দ্রকে দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বুধবার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের মন্তব্য, ‘কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে অনন্তকালের জন্য ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না।’ একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির এও নির্দেশ, ‘দুর্নীতি রোধে যে কোনও ধরনের শর্ত আরোপ করতে পারবে কেন্দ্র।’


দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের তরফে অভিযোগ উঠছিল, ‘একশো দিনের কাজের টাকা’ আটকে রেখেছে কেন্দ্র। অপরদিকে, কেন্দ্রের দাবি, বাংলায় এই প্রকল্পে বেলাগাম দুর্নীতি হয়েছে। ঘটনার তদন্তে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও। মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী। নোভাল অফিসারও জানান, তাঁরা পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ, দার্জিলিং মতো একাধিক জেলায় সমীক্ষা করে ‘একশো দিনের কাজের’ টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন। এই চার জেলা থেকে মোট ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

এটিও পড়ুন
হানিমুনে গিয়ে ফ্লাইট ধরে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন ইমন চক্রবর্তী! পাহাড়ের বুকে কী ঘটেছিল?
খালি হয়ে আসছে ইজরায়েলের ভাণ্ডার, ইরানের হাইপারসনিক মিসাইলেই হবে 'গেম ওভার'?
টাবুর সঙ্গে নাগার্জুনের পরকীয়া? মুখ খুলেছেন নাগার্জুনের স্ত্রী
বুধবার এই মামলার শুনানি ছিল। সওয়াল-জবাবের পর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ শর্ত আরোপ করতে পারবে কেন্দ্র। যে কোনও ধরনের নিয়ম তৈরি করতে পারবে কেন্দ্র। বিচারপতি এও বলেন, “কেন্দ্র চাইলে কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমের সরাসরি নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবে। দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাতে পারবে কেন্দ্র। পাশাপাশি রাজ্যের সব জেলাতেই তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে কেন্দ্র।”

এক নজরে মামলার ব্যাকগ্রাউন্ড

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ‘একশো দিনের কাজের’ মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। মামলাকারী ‘পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজদুর সমিতির’ আবেদন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৪ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক। এমনকী বাকি থাকার দরুণ প্রতিদিন ০.০৫ শতাংশ সুদও দেওয়া হোক। ওই প্রকল্পের ফান্ড পুনরায় রাজ্যে বরাদ্দ করুক কেন্দ্র।
ওই প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এরপর মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আদালতের সিবিআই তদন্তের আবেদন জানান।
৯ মার্চ, ২০২২

মনরেগা (MGNREGA) আইনের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফান্ড বন্ধ রাখার কথা জানায় কেন্দ্র।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, নিজের সোর্স থেকে ওই প্রকল্পের টাকা দেবে রাজ্য।
৬ জুন ২০২৩

কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী জানান, রাজ্যের দেওয়া অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই ওই প্রকল্পের টাকা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নতুন অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এমনকী, অনুরোধ জানানো হয়েছে, টাকা বন্ধ নিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য।
তখন কোর্ট নির্দেশ দেয়, রাজ্যের ব্লকে-ব্লকে এই প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ নিতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।
১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

‘পঞ্চায়েত এবং গ্রামীণ উন্নয়ন দফতর’-এর সচিব হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় দল ৬১৩ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য ২১০.৩৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে।
এরপর হাইকোর্ট মনে করে, ওই প্রকল্পের দুর্নীতি হয়েছে।
চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় আদালত।
জেলা অনুযায়ী প্রকৃত উপভোক্তাদের তথ্য যাচাই করে ওই কমিটি।
কমিটিতে ছিলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এক জন করে প্রতিনিধি, এ ছাড়াও ছিলেন ক্যাগ (অডিটর অ্যান্ড কম্পট্রোলার জেনারেল) এবং অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের একজন করে প্রতিনিধি।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours