বালুচিস্তানে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্বর্ণ ভাণ্ডার রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এখানে প্রায় ১৭০০ টন সোনা মজুত রয়েছে। এছাড়া প্রচুর তামাও মজুদ রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১৭৮ লক্ষ কোটি টাকা।
বালুচিস্তান না থাকলে সত্যি সত্যিই ভিখারি হয়ে যাবে পাকিস্তান! কীভাবে জানুন
বালোচিস্তান আলাদা হলে পাকিস্তানের কী হবে?
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। লাগাতার হামলা চালিয়েই যাচ্ছে পাকিস্তান। বাইরে যখন যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে, সেখানেই পাকিস্তানের ঘরই কিন্তু বেসামাল। ক্রমেই বেড়ে চলেছে বিদ্রোহ। মাথা চাগার দিয়ে উঠেছে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি। তাদের লক্ষ্য একটাই- পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা। ইতিমধ্যেই তারা নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে আলাদা দেশের স্বীকৃতি দাবি করছে। ভারতেও দূতাবাস খুলতে চেয়েছে। সত্যিই যদি বালোচিস্তান পাকিস্তানের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তবে কতটা ধাক্কা খাবে পাকিস্তান?
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় দ্বিখণ্ডিত হয় ভারত-পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আবার ভাঙে। জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ৩৪ বছর পর ফের একবার ভাঙনের মুখে পাকিস্তান। এবার তার থেকে জন্ম নিতে পারে বালুচিস্তান। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ই আলাদা হওয়ার কথা ছিল বালুচিস্তানের, কিন্তু মহম্মদ আলি জিন্নাহর বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তারা আলাদা হতে পারেনি। এখন আবার বিদ্রোহে নেমেছে বালুচরা। একের পর এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী সরাসরি পাক সেনার উপরেই হামলা করছে।
পাকিস্তানি সেনা এখন ক্ষমতার আস্ফালনেই ব্যস্ত। ভারতে আঘাত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এইদিকে সেই সুযোগেই হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে বালোচ আর্মি। বালুচিস্তান যদি সত্য়িই পাকিস্তানের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তবে তা পাকিস্তানের জন্য বড় আঘাত হবে, কারণ তাদের আসল সম্পদ তো লুকিয়ে এখানেই।
বালুচিস্তান হল পাকিস্তানের খনিজের ভাণ্ডার। বিপুল পরিমাণ সোনা, তামা ও অন্যান্য বহুমূল্য ধাতু মজুত রয়েছে বালুচিস্তানের মাটির নীচে। পাকিস্তানের সবথেকে বড় প্রদেশ বালুচিস্তান। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই প্রদেশের অবস্থান এই অঞ্চলটিকে পাকিস্তানের জন্য কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
বালুচিস্তান ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যা পাকিস্তানের মোট জমির প্রায় ৪৪ শতাংশ। বালুচিস্তান পাকিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি বালুচিস্তান আলাদা হয়ে যায়, তবে পাকিস্তান ব্যাপক জ্বালানি সঙ্কটের মুখোমুখি হবে, কারণ তাদের তখন বাইরে থেকে জ্বালানি আমদানি করতে হবে।
এছাড়া বালুচিস্তানে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম স্বর্ণ ভাণ্ডার রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এখানে প্রায় ১৭০০ টন সোনা মজুত রয়েছে। এছাড়া প্রচুর তামাও মজুদ রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১৭৮ লক্ষ কোটি টাকা।
বালুচিস্তান যদি আলাদা হয়ে যায়, তবে পাকিস্তানের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। আফগানিস্তানে তালিবান শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই চাপে রয়েছে পাকিস্তান। তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে প্রায় সময়ই তাদের সংঘর্ষের খবর মেলে। বালুচিস্তানই এতদিন ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের মাঝে দুর্গের মতো কাজ করত। যদি বালুচিস্তান না থাকে, তবে আফগানিস্তান যেকোনও সময়ে আগ্রাসন দেখাতেই পারে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।
এই প্রদেশ আবার ফলের ঝুড়িও। চেরি, আঙ্গুর, বাদাম, আখরোট, পিচ ফল উৎপাদিত হয়। পাকিস্তানে উৎপাদিত খেজুরের ৭০ শতাংই বালুচিস্তান থেকে আসে। পাকিস্তান আবার এই ফল বিভিন্ন দেশে বিক্রি করেই নিজেদের বাণিজ্যিক অর্থনীতি সচল রাখে।
বালুচিস্তানে পর্যটনেরও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ কোটি টাকার আয় হয় এখান থেকে। ফলে পাকিস্তান থেকে বালুচিস্তান আলাদা হয়ে গেলে, পাকিস্তান কার্যতই ভিতর থেকে ফাঁপা বা শূন্য হয়ে যাবে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours