Mamata Banerjee in Digha: কিছু নিন্দুক বলে গোবরে সোনা পায়, ব্যাঙ্কে গোবর রাখুন, টাকা থাকলে নিয়ে নেবে: মমতা
 সেই কারণে সোমবার থেকেই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার চাদরে মোড়া হয়েছে পুরোনো দিঘা। আজ একাধিক কর্মসূচি মমতার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব মেদিনীপুর সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
Mamata Banerjee in Digha: কিছু নিন্দুক বলে গোবরে সোনা পায়, ব্যাঙ্কে গোবর রাখুন, টাকা থাকলে নিয়ে নেবে: মমতাধরনা মঞ্চে মমতা
পূর্ব মেদিনীপুর: চার দিনের জেলা সফরে পূর্ব মেদিনীপুর এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে খেজুরিতে প্রশাসনিক বৈঠকের পর হেলিকপ্টার করে দিঘা চলে আসেন তিনি। রাত্রিবেলা ওল্ড দিঘায় রাত্রি যাপন করেন। সেই কারণে সোমবার থেকেই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা চাদরে মোড়া হয়েছে পুরোনো দিঘা। আজ একাধিক কর্মসূচি মমতার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব মেদিনীপুর সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এক নজরে মমতার সারাদিন– (প্রথম দিক থেকে সর্বশেষ তথ্য)

মমতা বলেন, “সবাইকে এক হয়ে চলতে হবে। আমি একা করব আর কেউ করবে এমনটা হবে না। পঞ্চায়েতে দক্ষ কর্মী চাই। ভাল মানুষ চাই। একটা পার্টির একজন টিকিট পাবেন। কেউ না পেলে আবার বিজেপির কোটায় দাঁড়াবেন না। আমরা অন্যভাবে পাশে থাকব। এটা পার্টি দেখবে। উচ্চ-নেতৃত্ব এলাকায় যান।”
মমতা বলেন, “যে ছেলেটা বন্দুক নিয়ে নৃত্য করছিল সে বাংলার কেউ নয়। মুঙ্গের থেকে এনেছে।”
মমতা বলেন, “কিছু নিন্দুক আছে যারা বলে গোবরে সোনা পায়। ব্যাঙ্কে গোবর রাখুন। টাকা থাকলে নিয়ে নেবে।”
মমতা বলেন, “একটা সময় ছিল যখন ১ তারিখে সরকারি কর্মীরা বেতন পেতেন না, পেনশন পেতেন না। মাসের পর মাস কেটেছে। সবাংলা বাদে সব জায়গায় পেনশন উঠেছে। তাই বিজেপি সিপিএম এর কথায় সরকারি কর্মচারিরা মাথা নত করবে না।”

মমতা বলেন, “আমি অনেক অন্যায় অত্যাচার দেখেছি।যাঁরা রাজ্যের টাকা বন্ধ করতে চাও তাদের একদিন মানুষ বন্ধ করে দেব। তুমি বিজেপি করো বলে বাইরের টাকা চুরি করে এনে খাবে? ওই তো একজন কর্মী মারা গেছে। কই মুখ খুলছেন না তো। বলুন কারা কারা ছিল হোটেলে। কোন মন্ত্রীরা। কাদের কাদের টাকা দিয়েছেন। কোন পার্টিকে সাহায্য করতেন?কই এ ব্যাপারে কিছু বললেন না কেন?”
মমতা বলেন, “১০০ দিনের কাজে বাংলা পাঁচবার প্রথম হয়েছে। আমরা দেখলাম গতকাল একজন বিজেপি নেতা বলেছেন বিহারে ক্ষমতায় ফিরলে দাঙ্গাবাজদের উল্টো করে ঝোলাবো। দাঙ্গা বিজেপি করছে। আমার সব আদিবাসী ভাল। দু’একটা আদিবাসীকে কিনে নিচ্ছে। এরা আগে পিপড়ে খেয়ে থাকত। এখন অনেক ভাল রয়েছে।”
মমতা বলেন, “আমি ৪৮ ঘণ্টা ধরনায় বসলাম। আর তো এক বছর টিমটিম করে জ্বলবি। তারপর বিদায় নিবে ভারত থেকে। গ্যাসের দাম ১১৪৯ টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল। বাহ নন্দলাল। নতুন ভাবে রাস্তা তৈরি করছি।”
মমতা বলেন, “এখনও পর্যন্ত এক হাজার ছেলে জেলে আছে। যেদিন তৃণমূল তৈরি হয়েছিল তখন অখিল গিরি দাঁড়ায় কন্টাই থেকে ওই বাবুরা নয়। ওরা ছাগলের তৃতীয় ছানা হয়ে ছিল। এরা ক্ষমতা দেখে। বাংলা দখলের ক্ষমতা নেই দিল্লি দখল করবে। মানুষের ঘরে ভালো সন্তানের পাশাপাশি কুলাঙ্গার জন্মায়। এই কুলাঙ্গারদের কাজ দাঙ্গাগিরি করা।”
মমতা বলেন, “দিদি ও দিদি বলে গেল। বলল আপকি বার ২০০ পার। যখন পেল না তখন কী করল? তখন নন্দীগ্রাম লুঠ করল। যে কটা সিট পেয়েছে তা লুঠ করে। আগামীতে বিচার হবে। আমি কোর্টে গেছি। আমি প্রমাণ করতে চাই তিন ঘণ্টা কেন লোডসেডিং হয়েছিল?”
মমতা বলেন, “এরা ভাবছে মমতাকে তো হারানো যাচ্ছে না। তাই প্রথমে চরিত্রহনন করতে হবে। যেটা সিপিএম করেছিল। নন্দীগ্রামে নির্বাচনের সময় আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। এখনও আমার বাঁ পা ফোলা রয়েছে। সেই দিন আমার মাথা ব্যথা করছিল। য্ন্ত্রণা হচ্ছিল। কলকাতায় যেতে হত। নয়ত হার্ট অ্যাটাক হতে পারত। যাতে প্রচারে না পারি সেই কারণে এই সব করেছিল। কিন্তু ওরা আমায় চেনে না। ওনা বুনো ওল হলে আমিও কচু। আমি হুইল চেয়ারে বেরলাম। সেই সময় পুলিশের ভাইরা-বোনারা সাহায্য করে। সেই সময় খেলা হবে স্লোগান দিয়েছিল।”
মমতা বলেন, “আমিও হিন্দু। আমি স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু। আমি সর্বধর্ম সম্মোন্বয়ে বিশ্বাসী।”
মমতা বলেন, “এ জেলা ক্ষুদিরামের জেলা। মাতঙ্গিনী হাজরার জেলা। আজকে লজ্জা লাগে এখানকার কিছু হার্মাদ আমাদের থেকে সব কিছু নিয়েছে। ওদের হাত থেকে আমরা চাকরি গুলো দিয়েছিলাম। ওরা আমাদের হাত থেকে চাকরি নিয়ে বিক্রি করেছে। আমরা জানতাম না। পুরুলিয়ায় একটাও দেয়নি। ওইখানকার চাকরি এখানে বেচে দিয়েছে। আজকে সিবিআই ইডি নিয়ে বড় বড় কথা বিজেপি নেতাদের।”
মমতা বলেন, “সিপিএম এর সময় কিছুই ছিল না। মৎস্যজীবীদের জন্য অনেক করেছে সরকার। আজকে বুথে বুথে ক্যাম্প হচ্ছে দুয়ারে সরকারের।”
মমতা বলেন, “আজকে সিপিএম বড়-বড় কথা বলছে। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করে। ওরা বডি পুড়িয়ে দিয়ে বলে মেয়েটির বাবা ধর্ষণ করেছে।”
মমতা বলেন, “তমলুক থেকে চণ্ডীপুরে পৌঁছই। মার খেতে-খেতে এগোই। ঢিল খেতে- এগোলাম। নন্দীগ্রামে টিয়ার গ্যাস চালাল। তার আগে আমি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে অনশন করেছিলাম। আমার শরীরের অনেক অঙ্গ ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। আমার বারণ ছিল। আমি যেন রাস্তায় না বের হই। আমি নন্দীগ্রামে অজ্ঞান হয়ে যাই। নন্দীগ্রাম হাসপাতাল থেকে ওরা আমায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত কলকাতায় পৌঁছে দিল।”
মমতা বলেন, “আমি তমলুক হাসপাতালে যাব বলে হাঁটতে শুরু করলাম।ওরা রাস্তায় বসে পড়ল আমায় আটকাতে। হাঁটতে-হাঁটতে তমলুক হাসপাতালে গেলাম। রাতে সাধারণ মানুষের থাকার হোটেলে থাকলাম। এক কাপড়ে বেরিয়েছিলাম। দাঁত মজনও ছিল না আমার সঙ্গে। ব্রাশ ছিল না। চিত্ত মাইতি ও তাঁর বউ শিখা মাইতি ছিলাম। সেই সময় চিত্ত মাইতি সব নিয়ে এসে সাহায্য করেন।”
মমতা বলেন, “আমি আনিসুরের মটোর বাইকে চড়ে গ্রামে-গ্রামে যাচ্ছিলাম। তখন সেখানে সিপিএম এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর গালাগালি দিচ্ছে। এক অক্ষর থেকে বারো অক্ষর পর্যন্ত গালাগালি দিচ্ছিল। তার আগের দিন কোলাঘাটে পেট্রল বোমা রেখেছিল মারার জন্য। সেই সময় রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণগান্ধী রাত্রিবেলা ফোন করে আমায় খবর দিয়ে বলেছিলেন, আপনি ওইখান থেকে চলে যান। ওরা পেট্রল বোমা মেরে উড়িয়ে। এরপর রাজ্যপালের কথা শুনে কোলাঘাট গেষ্ট হাউসে উঠলাম। দেখালাম বড়-বড় বাস দিয়ে গেস্ট হাউসের দরজা বন্ধ করা। আমি তো গ্রামের মেয়ে। জন্ম গ্রামে। আণি সাঁতার কাটতে পারি, গাছে উঠতে পারি। ধান কাটতে পারি, তুলতে পারি, মাছ ধরতে পারি। তাই ওরা কী করবে? আমি ডাবল ডেকার বাস বেয়ে উঠে লাফ দিয়ে ঢুকলাম। ওই রাতে লাগেজ নিয়ে ঢুকলাম। পরের দিন আমরা চালাকি করে ভিতরের রাস্তা দিয়ে এলাকায় গেলাম।”
খেজুরি, তমলুকের কথা মনে আছে তো? আমার মনে আছে আমি হলদিয়ায় একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলাম।আমায় মাইক্রোফোন পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়নি। আমি কলকাতা থেকে মাইক নিয়ে গিয়েছিলাম। নন্দীগ্রামে সূর্যদ্বয়ের পর যখন আমায় রাস্তায় আটকে দেয়। আনিসুর বলে একটি ছেলে ছিল। সে এখন জেলে। আমি ওকে বলি তোর বাইক আছে? বলল হ্যাঁ। সেই সময় আণায় তমলুক-নন্দীগ্রামে যেতেই হত। কারণ তমলুক হাসপাতালে অনেকে ভর্তি। তার আগের দিন কালীপুজো ছিল। আমার মনে আছে, সুফিয়ান ফোনে আমায় বলে বন্দুকের শব্দ শুনুন দিদি। সুফিয়ান-আমায় বাদ দিয়ে নন্দীগ্রাম হয় না। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।”
এ দিন বক্তব্যের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন। বলেন, “সারাক্ষণ আমায় পড়ে থাকতে হয়। কখন বিজেপি গিয়ে দাঙ্গা করবে। এরা বোঝে না, বাংলার মানুষ দাঙ্গা ভালবাসে না। মানুষ দাঙ্গা করে না। বিজেপি দাঙ্গা করার জন্য গুন্ডা ভাড়া করে। এটা ক্রিমিনালদের নিয়ে অশান্তি করা। যে ছেলেটার ছবি আপনারা দেখছেন সে বন্দুক নিয়ে নৃত্য করছে রাম-নবমীর মিছিলে। রাম কখনও এমন বলেনি।”
মঙ্গলবার সকালে বাড়তি নিরাপত্তা দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা জলপথে কোস্টাল পুলিশের নজরদারি। দু’টি স্পিডবোর্ড করে জলপথে নজরদারি চালাচ্ছেন তাঁরা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে ওল্ড দিঘার কটেজেই রয়েছেন।
এ দিন সকালে প্রাতঃভ্রমন সেরেছেন তিনি। সৈকত আবাসের সামনে হাঁটেন ও চেয়ারে বসেন কিছুক্ষণ। সুসজ্জিত পরিবেশ উপভোগ করেন কিছুক্ষণ। এ দিন, সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা নাগাদ সভার উদ্দেশে বেরোবেন বলে জানা যাচ্ছে। যদিও দুয়ারে সরকারে ক্যাম্পে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেখানে যাচ্ছেন না বলে খবর। মুখ্যমন্ত্রীর বদলে যাচ্ছেন মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী সহ বেশ কিছু সচিব পর্যায়ে আধিকারিক। এদিন দুপুরে দিঘার হেলিপ্যাড ময়দানে জেলার কর্মী ও নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সম্মেলন হবে।
গতকাল খেজুরির সভা থেকে একযোগে বিজেপি ও সিপিএম-কে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও আক্রমণ শানালেন তিনি। পাশাপাশি সিপিএম-এর সময় তৎকালীন খেজুরির পরিস্থিতি নিয়েও সকলকে অবগত করেন।
এ দিন মমতা বলেন, “নন্দীগ্রামে সূর্যোদয়ের নামে দশদিন কাউকে বেরতে দেওয়া হয়নি। ১৪ মার্চ যখন গুলিতে মারা গিয়েছিল, সেই সময় খেজুরি দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হত না। সেই সময় গদ্দাররা মাঠে ছিল না। লুকিয়ে বসেছিল। আমি সেই সময় ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। ১৪ মার্চের গুলিকাণ্ডের পর আমি ছুটে এসেছিলাম। চণ্ডীপুরে আমার গাড়ি আটকে পেট্রল বোমা মারতে গিয়েছিল। কোলাঘাটে আমার গাড়িতে মদের বোতল ছোড়া হয়েছিল। আমার উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। আমি যত দিন বাঁচব আমার আন্দোলন কেউ রুখতে পারবে না। আমার সংগ্রামী জীবন কেউ রুখতে পারবে না। আমি মানুষের সঙ্গে ছিলাম আছি থাকব।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours