বৃহস্পতিবার শেষ হল দুয়ারে সরকারের চলতি বছরের কর্মসূচি। নবান্নের হিসাব বলছে এই ১ মাসে রাজ্যের ৩ কোটি ৫৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ যোগদান করেছেন এই শিবিরে। আর রাজ্যজুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ৯১,৮৬৮টি শিবিরে সব থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে যে প্রকল্পটির জন্য তার নাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এখনও অবধি প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি মহিলারা লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৬৫ লক্ষেরও বেশি। খাদ্যসাথী প্রকল্পে আবেদন জমা পড়েছে ২৭ লক্ষেরও বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে বিরোধীরা যতই এই কর্মসূচিকে আক্রমণ শানাক না কেন বঙ্গবাসী এই শিবিরে এসে নানাবিধ সরকারি পরিষেবা নিতে পিছুপা হয়নি। আর এখানেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠত্ব। তিনিই বাংলার সরকারকে এনে দিয়েছেন মানুষের দুয়ারে।


গত ১৬ অগস্ট শুরু হয়েছিল চলতি বছরের দুয়ারে সরকারের দ্বিতীয় কর্মসূচি। গতবছর ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় দুয়ারে সরকার প্রকল্প যা বাংলা তো বটেই দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক জগতের নজর টেনে নিয়েছিল। অনেকেই মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই কর্মসূচি কার্যত বিজেপির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তৃণমূল সুপ্রিমোর এক মাস্টারস্ট্রোক। প্রথমে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ও পরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, এই দুই প্রকল্প দিয়েই মমতা বাংলার মানুষকে তাঁর সরকারের সঙ্গে বেঁধে ফেলেছেন। মানুষ এখন নিজ প্রয়োজনেই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। বিজেপি থেকে বামেরা এই কর্মসূচি নিয়ে বিস্তর নিন্দামন্দ করলেও এবারে দ্বিতীয় দফার কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে বাম ও বিজেপির কর্মী ও সমর্থকেরা যেমন সরকারের কাছ থেকে পরিষেবা নেওয়ার জন্য শিবিরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তেমনি দুই দলের নেতারাও পরিষেবা নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি দুই দলের অনেক কর্মী আমজনতাকে এই পরিষেবা নিতে সাহায্যও করেছেন। সব মিলিয়ে দুয়ারে সরকার সুপারহিট মমতার রাজত্বে।

তবে উদ্বেগও আছে। এবারের দুয়ারে সরকারের শিবিরে রাজ্যের ১ কোটি ৮০ হাজার মহিলার 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প-এর আবেদন গৃহীত হয়েছে। আগামিদিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন নবান্নের আধিকারিকরা। বর্তমান অর্থবর্ষের বাজেটে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। তাই এই বছরে এই প্রকল্পের হাত ধরে আবেদনকারীদের টাকা পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে না। তবে আগামী আার্থিক বছরে এই প্রকল্পের জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন রয়েছে। সেই টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা ছড়িয়েছে নবান্নে। তবে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী অর্থবর্ষের জন্য এখন থেকেই ওই টাকা কোথা থেকে জোগাড় করা যাবে তা নিয়ে অর্থ দফতরের আধিকারিকদের যেন ভাবনাচিন্তা করেন। সেই সঙ্গে অনান্য দফতরগুলিকেও নির্দেশ দিয়েছেন খরচ যতটা সম্ভব কম রাখার জন্য। উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়েই যে রাজ্যের নানা সামাজিক প্রকল্পের কাজ আগামী অর্থবর্ষেও চালানো হবে সেটা মোটামুটি বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours