এলাকার নাম জগদীশপুর না হয়ে বোধহয় 'গোবিন্দপুর' হলেভাল হত। জগদীশপুরে তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান তথা বর্তমান বিজেপি  নেতা গোবিন্দ হাজরাকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই বলছেন তদন্তকারীরা। ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁর সম্পত্তির বহর দেখে তাঁদের এমন মন্তব্য। পুলিশ জানতে পেরেছে, কীভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ বিক্রেতা থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এই পঞ্চায়েত প্রধান।

পুলিশ সূত্রে খবর, এই কোটিপতি হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক সাধারণ মানুষের চোখের জল। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করার একের পর এক অভিযোগ দায়ের হয়েছে লিলুয়া থানায়।
তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় রীতিমতো তৈরি হয়ে গিয়েছে নাগরিক মঞ্চ। হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে জিনিস কিনে টাকা না দেওয়া কিংবা চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণা, সব অভিযোগই রয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে। এমনকী, সরকারি খাস জমি বিক্রি করে সেখানে নিজের সম্পত্তি বানানোর অভিযোগও এই নেতার বিরুদ্ধে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানতে পেরেছে, কমল চন্দ্র নামে জগদীশপুরের বাসিন্দা এক হার্ডওয়্যারের দোকানদারের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার জিনিস কিনেছিলেন গোবিন্দ। কিন্তু কোনও টাকাই তাঁকে দেননি। লিলুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। মানস চক্রবর্তী নামে জগদীশপুরের মাঝেরহাটের আরেক বাসিন্দার কাছ থেকে দোকানঘর দেওয়ার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু দোকানঘর না মেলায় তিনিও পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পূর্ণ পাত্র নামে পাকুড়িয়ার এক যুবকের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েও তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়নি বলে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের নামে লিলুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

তবে গোবিন্দ হাজরার নামে প্রথম লিলুয়া  থানায় অভিযোগ দায়ের হয় ১৯৯৪ সালে। তখন তিনি সক্রিয় রাজনীতি করতেন না। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সেইসময় তিনি ডালের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। চুরি করা ডাল নিয়ে তিনি বাজারে বিক্রি করছিলেন, এমন একটি অভিযোগ তখন থানায় জমা পড়েছিল। জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীরপাড়া ৩ নম্বর এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ হাজরা নয়ের দশকে প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ বিক্রি করতেন। এর পরই শুরু করেন ডালের ব্যবসা। ডাল চুরি থেকেই গোবিন্দবাবুর আর্থিক প্রতারণার শুরু বলে মনে করছে পুলিশ।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours