এলাকাবাসীদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে দরজায় এসে লাথি মারছে। আধার কার্ড দেখালেও তাদের 'বাংলাদেশি' তকমা দিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। টেনেহিঁচ়ড়ে নিয়ে যাচ্ছে থানায়। তারপর আটক।
রাতের অন্ধকারে দরজায় ধাক্কা! বাঙালি বস্তিতে এখন 'ডিটেনশন-ভয়', ঘরছাড়া একাধিক
বাংলা বলা অপরাধ? সম্প্রতি অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আদমসুমারির ফর্মে যারা বাংলাকে নিজের মাতৃভাষা বলে লিখবেন, তাদের সংখ্যা দেখলেই অসমে বিদেশিদের সংখ্য়া কত বোঝা যাবে। একজন মুখ্যমন্ত্রীর এমন নিদান নিয়ে বিতর্ক চড়েছিল। তবে শুধুই অসম নয়। বাঙালি যেন ‘বিদেশি’ হয়েছে হরিয়ানাতেও।
গুরুগ্রামে ইতিমধ্যেই ১০ জনকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যা ঘিরে আতঙ্কের আবহ সেখানকার বাঙালি পরিযায়ী বস্তিগুলিতে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে দরজায় এসে লাথি মারছে। আধার কার্ড দেখালেও তাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। টেনেহিঁচ়ড়ে নিয়ে যাচ্ছে থানায়। তারপর আটক।
এমনই ‘ভয়ের’ শিকার মালদার এক বাসিন্দাও। নাম আঞ্জারুল। পাঁচ বছর আগে তিনি হরিয়ানা যান। পেটের দায়ে। সেখানে টিগরগাঁওতেই থাকেন তিনি। রঙের কাজ করে জীবন চলে। দিন তিনেক আগেই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। আঞ্জারুল জানিয়েছেন, টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কারণ কী, তিনি নাকি ‘বাংলাদেশি’। আঞ্জারুল কিন্তু আধার কার্ড দেখিয়েছিল। কিন্তু তাতে মান্যতা দেয়নি পুলিশ। আপাতত তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সেই মান্যতা না দেওয়া আঞ্জারুলের আধার কার্ডটি নিজেদের কাছেই জমা রেখে দিয়েছে হরিয়ানা পুলিশ।
মারধরের অভিযোগ তুলেছেন আঞ্জারুলে স্ত্রীও। তার দাবি, ‘আমাকেও মেরেছিল। আধার কার্ড দিয়েছিলাম। বলেছিলাম পরিচয়পত্র দেখার দেখে নিন। এত রাতে কেন তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই কথা বলতেই সেই পুলিশ সজোর চড় মারে আমাকে। যার জেরে ডান কানে কম শুনছি।’
পুলিশি অতিসক্রিয়তায় অতিষ্ঠ হয়েছে ওই বাঙালি বস্তির বাসিন্দারা। যারা রয়ে গিয়েছেন, তারা পালানোর কথা ভাবছেন। আর বাকি সব ঘরগুলিতে ঝুলছে তালা। পালিয়েছে তারা। ওই বস্তিরই এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাড়ি মালদায়। তাই এখান থেকে চলে যাচ্ছি। ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছি।’
কিন্তু যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কোথায় যাচ্ছেন? স্থানীয়রা বলছেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে। এই ডিটেনশন ক্যাম্প কোথায় গড়ে উঠল? গুরুগ্রামের সেক্টর ৪০-এর একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেটাই এখন পরিণত হয়েছে ‘ডিটেনশন সেন্টারে’। স্থানীয়দের দাবি, গত পাঁচদিন ধরে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক হওয়া ১০০-এর অধিক বাঙালিকে এনে রাখা হয়েছিল সেই সরকারি কমিউনিটি হলেই। তবে আপাতত সেটিও ফাঁকা। হাতেগোনা দু-এক জন থাকলেও, সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আটক বাঙালিদের।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours