গত বুধবার রাতে বাঁকুড়া সদর থানার বগা গ্রামে নিজের ঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে শুয়েছিলেন পেশায় জনমজুর প্রশান্ত বাউরী ও তাঁর স্ত্রী মুন্নি বাউরি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম ভাঙতে এক্কেবারে অন্য ছবি।
৪ বছর ধরে ছিল না শারীরিক সম্পর্ক, তারপরেও স্ত্রী গর্ভবতী! বাঁকুড়ায় শিশুর কঙ্কালকাণ্ডে ভয়ঙ্কর মোড়
উঠে আসছে ভয়ঙ্কর অভিযোগ
ঘনাচ্ছিল রহস্য, বাড়ছিল চাপানউতোর। তিনদিন পর অবশেষে পুলিশি জেরায় নিজেরই সন্তানকে খুনের দায় স্বীকার করল বাঁকুড়ার দম্পতি। ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁকে খুন করার কথা জেরায় স্বীকার করেছে ওই দম্পতি। আর তারপরেই দম্পতিকে গ্রেফতার করে আজ বাঁকুড়া জেলা আদালতে পাঠাচ্ছে পুলিশ। স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক থাকার সন্দেহ এবং তাকে ঘিরে দাম্পত্য কলহের জেরেই এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। কিন্তু কেন কলহ?
ঠিক কী ঘটেছিল?
বাংলা কম্পালসারি'! শহরের দোকানে দোকানে গেল নির্দেশিকা, জানালেন ফিরহাদ
বাতিল হয়ে গেল মেট্রোর চুক্তি, '১০ বছর পিছিয়ে গেল শহর', আক্ষেপ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর
গত বুধবার রাতে বাঁকুড়া সদর থানার বগা গ্রামে নিজের ঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে শুয়েছিলেন পেশায় জনমজুর প্রশান্ত বাউরী ও তাঁর স্ত্রী মুন্নি বাউরি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম ভাঙতে এক্কেবারে অন্য ছবি। তাঁদের দাবি, ছিল বাকি দুই সন্তান ঘুমিয়ে থাকলেও আর খোঁজ মেলেনি দেড় বছরের শিশুকন্যার। বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হতেই তড়িঘড়ি তদন্তে নামে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় আড়াই দিন ধরে গ্রামের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি।
এদিকে জোরকদমে চলতে থাকে জিজ্ঞাসাবাদও। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শিশুর মা-বাবাকে। কিন্তু, তাঁদের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা যাওয়ায় বাড়তে থাকে পুলিশের সন্দেহ। অবশেষ শনিবার পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়েন দম্পতি। পরবর্তীতে তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে একটি ঝোপ-ঝাড় থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঝোঁপঝাড় দেখিয়েছিল দম্পতিই। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ছিল সেগুলি নিখোঁজ শিশুরই। পাঠানো হয় ফরেনসিকে।
কিন্তু বুধবার খুনের পর এত তাড়াতাড়ি কঙ্কাল কীভাবে?
বুধবার থেকে খোঁজ না মিললেও শনিবার অর্থাৎ মাত্র চারদিনের মথ্যে দেহটি কঙ্কালে রূপান্তরিত হল কীভাবে? প্রশ্ন ঘুরলেও প্রাথমিক তদদন্তে পুলিশের অনুমান ১০০ ঘণ্টারও বেশি ঝোপ-ঝাড়ে পড়ে থাকার পর শিয়াল-কুকুরে দেহাংশ খুবলে খেয়ে ফেলেছে। সূত্রের খবর, জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে স্ত্রীর বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই সন্দেহ ছিল প্রশান্তর। সন্দেহের জেরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ লেগেই ছিল। এমনকী দীর্ঘ চার বছর ধরে নাকি তাঁদের মধ্যে কোনও শারীরিক সম্পর্কও ছিল না। এরই মধ্যে বছর আড়াই আগে মুন্নির গর্ভে সন্তান আসে। তাতে সন্দেহ আরও তীব্র হয় প্রশান্তর। স্ত্রীর গর্ভপাত করানোরও চেষ্টা করে। কিন্তু বিফল হয়। পরবর্তীতে সন্তান প্রসব হলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ফাঁদতে শুরু করে।
জেরাতেই পুলিশ জানতে পেরেছে, বুধবার রাতে স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লে মদ্যপ অবস্থায় দেড় বছরের কন্যা শিশুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। যদিও চিৎকার-চেঁচামেঁচি শুনে ঘুম ভেঙে যায় স্ত্রীর। ভোরের দিকে শিশুটির দেহ বাড়ি থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে পুকুর পাড়ে ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসে। বাড়ি ফিরে ফেঁদে ফেলে নিখোঁজের গল্প। চোখ জল নিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে স্বামীর কুবুদ্ধিতে সায় দেয় স্ত্রীও। পুলিশ জানিয়েছে ধৃত দম্পতিকে হেফাজতে নিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নিমাণ করা হবে। একইসঙ্গে সন্তানকে খুনের পিছনে আসল কারণ কী তা জানার চেষ্টা করা হবে।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours