আমেরিকার ফ্লরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উড়ান দেবে শুভাংশুদের মহাকাশযান। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ৩৯এ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের সাহায্যে ড্রাগনকে মহাকাশে পাঠানো হবে।

 নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা, ক্লাস টুয়েলভের পরই জীবনের মোড় ঘোরে একটা ঘটনায়! মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লার অতীত ভাবাতে বাধ্য করবে আপনাকেও
কে এই শুভাংশু শুক্লা


ছোট থেকেই গগনচুম্বী স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। আর আজ, তাঁর হাত ধরেই গগনচুম্বী ভারত। বুধবার, ২৫ জুন. ২০২৫, দুপুর ১২.০১- মহাকাশে পাড়ি শুভাংশু শুক্লার। আমেরিকার ফ্লরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উড়ান দিল শুভাংশুদের মহাকাশযান। ৩৯ বছরের এই যুবককে ঘিরেই কার্যত আকাশছোঁয়ার স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর।


আমেরিকার ফ্লরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উড়ান দেবে শুভাংশুদের মহাকাশযান। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ৩৯এ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের সাহায্যে ড্রাগনকে মহাকাশে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে আইএসএস-এ পৌঁছোবেন শুভাংশুরা। রাকেশ শর্মার চার দশক পর শুভাংশু শুক্লা। আরও একবার ঐতিহাসিক অধ্যায় গড়তে চলেছে ভারত।



তৃণমূল নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিল কোর্ট, শোনা মাত্রই মিষ্টিবিলি তৃণমূলেরই
শুভাংশু শুক্লা- তাঁর বাচনভঙ্গি, তাঁর দৈহিক পরিভাষা, তাঁর বলিয়ান দৃষ্টি, স্বপ্ন- সবটাই মুগ্ধ করেছে গোটা দেশকে। জানেন এই শুভাংশু শুক্লার অতীত?

শুভাংশু শুক্লা, তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে পরিচিত ‘শুভ’ নামে। ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর, লখনউয়ের একটা অত্যন্ত সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন শুভাংশু। বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা সরকারি চাকরি করতেন, মা আশা একজন গৃহবধূ। আর পাঁচ জন সাধারণ গৃহবধূর মতোই সংসারের সমস্ত কাজ সামলে ব্যস্ত থাকতেন ছেলে-মেয়ে, সন্তানকে নিয়েই। শুভাংশু এক ছোট বোনও রয়েছে। তাঁর বাবা যখন অফিসের কাজে বেরিয়ে যেতে, সকালের কাজ সামলে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতেন শুভাংশু মা। স্কুল থেকে ফের দুই সন্তানের পড়াশোনা। দু’কামরার এক তলা বাড়িতে বসেই এক চিলতে আকাশ দেখতেন শুভাংশ। আর সেখান থেকে মনে বুনেছিলেন আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন।

লখনউয়ের সিটি মন্তেশ্বরী স্কুলে তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই শিক্ষকরা বলতেন, এ ছেলে কেবল পড়াশোনাতেই নয়, বিভিন্ন হাতের কাজ, স্কুলের সমস্ত প্রজেক্টে মাঠে নেমে কাজ করতে পারদর্শী! প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল, সেখানেও তাঁর দুর্দান্ত পারফরমেন্স। হতে পারতেন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন যে তখনও চোখে।

সেই স্বপ্ন পূরণেই ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন শুভাংশু। প্রথমবারেই সফল! নিজের অধ্যাবসায়, কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা আর স্বপ্নপূরণের তীব্র ইচ্ছা- শুভাংশুকে একজন সফল নৌসেনা আধিকারিকে পরিণত করে। ২০০৫ সালে NDA- থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি বিটেক করেন। তাঁর কারিগরি এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা আরও তীক্ষ্ণ হয়। এখান থেকেই তিনি একজন ফাইটার পাইলট, টেস্ট পাইলট হিসাবে ডানা মেলতে শুরু করেন।

২০০৬ সালে শুভাংশু যুক্ত হন ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে। উড়ানে চমৎকার দক্ষতায় সকলের নজর কেড়ে নেন তিনি। এক বছরের মধ্যেই তিনি Su-30 MKI, MiG-21, MiG-29, Jaguar এবং Dornier 228 সহ বেশ কয়েকটি বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেন। প্রায় ২০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

এরই মাঝে দন্ত চিকিৎসক ড. কামনা শুভা শুক্লার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন শুভাংশু। ২০২০ সালে আসে তাঁর একমাত্র ছেলে কিয়াস! আজ বাবার আকাশছোঁয়ার স্বপ্নে যে সে-ও সামিল।

২০১৯ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, ইসরো গগনযান মিশনের জন্য নির্বাচিত করে শুভাংশুকে, এটাই ভারতের প্রথম মানব মহাকাশযান মিশন। রাশিয়ার ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি প্রশিক্ষণ নেন।

অ্যাক্সিয়াম মিশন ৪ – ২০২৪ সাল! ‘এক্স-ফোর’- এর পাইলট হিসেবে নির্বাচিত হন শুক্লা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) এর একটি ব্যক্তিগত মিশন।

শুভাংশু বর্তমান আয় মাসিক ৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে উপার্জন এই মহাকাশ অভিযান। নাসার ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ অভিযানে পাইলটের ভূমিকায় রয়েছেন শুভাংশু। তিনিই মহাকাশযানটি পরিচালনা করবেন।

আজ ছেলের সাফল্যে চোখে জল শুভাংশুর বাবা-মায়ের। শুভাংশু-র বাবা বললেন, “আজ ওর জন্য অনেকের প্রার্থনা রয়েছে। ওর মিশন সম্পূর্ণ হোক। আমার বাচ্চা আজ এত বড় মিশনে যাচ্ছে, আজ গোটা লখনউ, গোটা দেশ ওর কথা বলছে। এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় প্রাপ্তি।” আর শুভাংশু মা… তিনি আজও চিন্তিত, মায়ের মন তো। বললেন, “মায়ের থেকে সন্তান যখন দূরে যায়, চিন্তা তো হয়। আর ও তো মহাকাশে যাচ্ছে। তবে ওর জীবনের একটা লক্ষ্য রয়েছে। উড়ান! আজ ওর স্বপ্নপূরণের দিন।” বলাই বাহুল্য, শুভাংশুর হাত ধরে আজ গোটা দেশের স্বপ্নপূরণের আশায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours