এক্স হ্যান্ডেলে কলেজ বোমা ইলন মাস্ক। টেসলা কর্তার অনুরোধ, জেফ্রি এপস্টেইন ফাইলে ডোনাল্ডের নাম আছে। সেই কারণে এই ফাইল জনগণের সামনে আনা হচ্ছে না। তাঁর এই দাবি যে সত্যি, তা বলেই


ট্রাম্প-মাস্কের ঝগড়ায় 'প্রাণ' দিতে হবে উলুখাগড়াদের?


সিনেমার পর্দায় হিট ছিল জয়-বীরুর বন্ধুত্ব। ‘বাস্তবের জয়-বীরু’ হয়ে উঠছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ও টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক (Elon Musk)। তবে জোড়ি হিট হওয়ার আগেই ফাটল। চরম বিবাদ ইলন মাস্ক-ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এমনই ঝগড়া যে মুখ দেখাদেখিই বন্ধ। দুজনে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। তবে ট্রাম্প-মাস্কের এই বিবাদ নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্বই। এদের ঝগড়া দীর্ঘস্থায়ী হলে তা ধাক্কা দেবে আমেরিকার অর্থনীতিকেই। কোথা থেকে সূত্রপাত হল এই ঝগড়ার? বিবাদ বাড়লেই বা কী কী হতে পারে?

দ্বিতীয়বার যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখনই সামনে আসে ট্রাম্প-মাস্কের বন্ধুত্বের কথা। বন্ধুত্বের খাতিরে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন ইলন মাস্ক। ঢেলেছিলেন বিপুল টাকা। সেই বন্ধুত্বের প্রতিদান দিয়েছেন ট্রাম্পও। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেই স্টেজে দাঁড়িয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন টেসলা কর্তাকে। তাঁর জন্য আলাদা একটি বিভাগও তৈরি করে দেন, যার দায়িত্ব ছিল ইলনের কাঁধেই।

DOGE ছাড়লেন মাস্ক-
ইলন মাস্কের জন্য ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ তৈরি করে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বিভাগের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা যাচাই করা, দক্ষতা বাড়ানো এবং সরকারের খরচ কমানো। টেসলা কর্তা দায়িত্ব নিতেই বিশাল কাটছাঁট করেন। অনেকেরই চাকরি যায়। তবে সবাইকে চমকে দিয়েই গত ২৮ মে মাস্ক ঘোষণা করেন যে ‘DOGE’ ছাড়ছেন তিনি। পরে যদিও জানা যায়, ইলন মাস্ককে বিশেষ সরকারি কর্মী হিসাবেই নিয়োগ করা হয়েছিল। এই পারমিটে বছরে ১৩০ দিন কোনও ব্যক্তি সরকারের জন্য কাজ করতে পারেন। মে মার্চের শেষভাগেই তাঁর পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আগেভাগেই নিজে বিদায় নিয়েছেন মাস্ক।

বন্ধু ইলন মাস্কের জন্য এই দফতর তৈরি করায় কম কটাক্ষ-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তাঁর বিরুদ্ধে যেমন আমেরিকার দিকে দিকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তেমনই মাস্ককে নানা করছাড় ও সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাঁর কোম্পানির তৈরি গাড়ি বয়কটের ডাকও দেন লোকজন।

বিগ বিউটিফুল বিলেই যত সমস্যা-
মার্কিন মুলুকের অন্দর মহলে জল্পনা শোনা যাচ্ছিল, ট্রাম্পের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নাপসন্দ ইলন মাস্কের। এদিকে, ইলন মাস্কের নাক গলানো নিয়ে আবার গোঁসা হচ্ছে ট্রাম্পের। সম্প্রতিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘বিগ বিউটিফুল বিল’-র কথা বলেন। এই বিলে এমন শর্ত দেওয়া হয় যা গোটা বিশ্বের আর্থিক গতি-প্রকৃতিই বদলে দিতে পারে। ২২ মে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ২১৫-২১৪ মার্জিনে বিল পাশ হয়ে যায়। এই বিলে বলা হয়েছে, আমেরিকা থেকে বাইরে যে অর্থ যাচ্ছে, তাতে ৩.৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। ট্রাম্প প্রথমে এই কর ৫ শতাংশ করতে চেয়েছিল। এতে আমেরিকায় বসবাসকারী বিদেশিরা, গ্রিন কার্ড হোল্ডার ও অস্থায়ী ভিসায় থাকা কর্মীরা দেশে টাকা পাঠালে, তাদের পাঠানো অর্থের উপরে কর দিতে হবে।

এই বিলের তীব্র নিন্দা করেছিলেন ইলন মাস্ক। বলেছিলেন, “আমি মনে করি একটা বিল হয় বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে। দুটো একসঙ্গে হতে পারে কি না, জানিনা”। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনকল্যাণ বিলকে অত্যন্ত খারাপ পদক্ষেপ বলার পরই নিজের প্রশাসনিক পদ ছেড়ে দেন ইলন মাস্ক। এদিকে ট্রাম্প তাঁর এই আচরণকে ‘হতাশাজনক’ বলেন।

এপস্টেইন ফাইলে ট্রাম্পের নাম?
এক্স হ্যান্ডেলে সরাসরি বোমা ফেলেন ইলন মাস্ক। টেসলা কর্তার দাবি, জেফ্রি এপস্টেইন ফাইলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম আছে। সেই কারণে এই ফাইল জনগণের সামনে আনা হচ্ছে না। তাঁর এই দাবি যে সত্যি, তা কিছুদিনেই প্রমাণ হবে বলেও জানিয়েছেন মাস্ক। যদিও একদিন পরেই সেই পোস্ট ডিলিট করে দেন। ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ‘এপস্টেইন ফাইলস’ আসলে কোনও একটি ফাইলের নাম নয়। কয়েক হাজার পাতার নথি, প্রচুর ভিডিয়ো ও একগুচ্ছ তদন্তমূলক প্রতিবেদন, যেগুলি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল ২০২৪ থেকে প্রকাশ্যে আনতে শুরু করেন। জেফ্রি এপস্টেইন আসলে একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, ধনকুবের। বিল ক্লিনটন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনকী প্রিন্স অ্যান্ড্রিউ-র মতো নামীদামি ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। দিন-রাত এইসব বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের নানা পার্টিতে আমন্ত্রণ জানাতেন। নিজের ব্যক্তিগত দ্বীপে সমাজের বিশিষ্ট মানুষদের আমন্ত্রণ জানাতেন, তাঁদের সঙ্গে নাবালিকাদের জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করতেন ও সে সবের ভিডিয়ো শ্যুট করে রাখতেন। নিউ ইয়র্ক, ফ্লোরিডা-সহ তাঁর বিভিন্ন বাড়িতে অন্তত ২৫০ জন নাবালিকাকে জোর করে যৌন দাসী করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ।

মাস্ক মুখ খোলার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে ইলন মাস্কের কোম্পানির সঙ্গে সরকারি যাবতীয় চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হবে। এর ঘণ্টাখানেক পরই মাস্কও পাল্টা জবাবে স্পেসএক্সের (SpaceX) ড্রাগন স্পেসক্রাফ্ট তৈরি স্থগিত করে দেওয়ার কথা জানান।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলি যে পরিমাণ অর্থের সরকারি সাহায্য পায়, তা অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। বাইডেন কেন করেননি, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। সেখানেই ইলন মাস্ক আবার দাবি করেছেন, তিনি না থাকলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততেই পারতেন না ট্রাম্প।

ঝগড়া চললে কী হবে?
দুই ‘প্রাক্তন বন্ধু’র সংঘাত কোথায় গিয়ে থামে, তাই-ই দেখার। টেসলা কর্তা ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের বন্ধুত্বে দুইজনই উপকৃত হয়েছেন। তবে বন্ধুত্ব ভাঙলে দুইজনই একে অপরের বড় ক্ষতি করে দিতে পারেন। যেমন-

ইলন মাস্কের কী ক্ষতি করতে পারেন ট্রাম্প?
মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ইলন মাস্কের সংস্থাগুলির যে চুক্তি রয়েছে, সব বাতিল করে দিতে পারেন।
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের বিস্ফোরক অভিযোগ রয়েছে, সেই ঘটনারও তদন্ত শুরু করাতে পারেন ট্রাম্প।
ইলন মাস্কের ইমিগ্রেশন নিয়েও তদন্ত শুরু হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম ইলন মাস্কের, এদিকে তিনি আমেরিকার নাগরিক। তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের কী কী ক্ষতি করতে পারেন ইলন মাস্ক?
এক্স-কে ব্যবহার-
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (টুইটারের নতুন নাম)-কে ব্যবহার করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এক্সের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২০ মিলিয়নেরও বেশি (২২ কোটি)। এখানে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মতামত তৈরি করে, গোটা প্রশাসনকেই চাপে ফেলতে পারেন।

নিজের রাজনৈতিক দল- ট্রাম্পের সঙ্গে ঝামেলার পরই ইলন মাস্ক এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোল তৈরি করেন। তাতে ৮০ শতাংশই ইলন মাস্কের নতুন দল তৈরি করা উচিত বলে মতামত দেয়। জল্পনা শোনা যাচ্ছে, দ্য আমেরিকান পার্টি নামে নিজস্ব একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করতে পারেন মাস্ক।

ব্যবসায় সমস্যা-
বিশ্বের সবথেকে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। একদিকে তাঁর স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা দেয় বিশ্বের নানা প্রান্তে, অন্যদিকে মহাকাশ অভিযানে ভরসা স্পেসএক্স। চিনে টেসলার উৎপাদন হাব তৈরি করে ট্রাম্প তথা গোটা মার্কিন প্রশাসনকেই ধাক্কা দিতে পারেন।

নাসার জন্য সমস্যা-
নাসার সঙ্গে যৌথভাবে একাধিক কাজ করছে স্পেসএক্স। যদি মাস্ক ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, তবে সমস্যা হতে পারে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours