চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যান্সার নতুন করে বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। সুস্থ হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারেন রোগী। সুস্থ কোষে দাঁত-নখ বের করতে থাকে কর্কট-কোষ। সেই নরক-যন্ত্রণা থেকে এবার মিলবে মুক্তি? কী জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা?

১০০ টাকা ওষুধেই 'ক্যান্সার-মুক্তি', যুগান্তকারী গবেষণা টাটা ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের
প্রতীকী ছবি

ক্যান্সার। এই একটা নাম শুনলে যেন শরীরে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়। অভাবের সংসারে অনেকে চিকিৎসার করানোর কথা ভাবতেই পারেন না। আবার পকেটের জোর থাকলেও যে রোগী সুস্থ জীবনে ফিরে আসবেন, এমন আশাও থাকে না সবসময়। আধুনিক চিকিৎসায় ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হলেও জটিলতা বাড়ায় ‘সাইড এফেক্ট’। সুস্থ হওয়ার পরও কঠিন হয়ে ওঠে বেঁচে থাকাটাই। মারণ ব্যাধিকে জব্দ করতে নিরন্তর গবেষণা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এবার ক্যান্সার আক্রান্তদের নতুন দিশা দেখাচ্ছে ভারতের টাটা ইন্সটিটিউট। ১০ বছর ধরে গবেষণার পর ওষুধ আবিষ্কার করেছেন ভারতীয় চিকিৎসকেরা। কী আছে সেই ওষুধে? ক্যান্সার কি সত্যিই সেরে যাবে?


কী করলে বা কী খেলে ক্যান্সার হবে না, এই উত্তর বোধ হয় নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের তাবড় বিশেষজ্ঞদের কাছেও। সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে যে সুস্থ হওয়া সম্ভব, সেই উদাহরণ তৈরি হয়েছে আগেই। তবে ক্যান্সার থেকে কি আদৌ মুক্তি পাওয়া যায়?

চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যান্সার নতুন করে বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। সুস্থ হওয়ার পরও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারেন রোগী। সুস্থ কোষে দাঁত-নখ বের করতে থাকে কর্কট-কোষ। সেই সম্ভাবনা যাতে আর না থাকে, নির্ভয়ে যাতে বাকি জীবনটা কাটানো যায়, সেই ওষুধই আবিষ্কার করেছে টাটা মেডিক্যাল।


এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসক ড. রাজেন্দ্র বাদভে জানিয়েছেন, ১০ বছর ধরে গবেষণা করে সফল হয়েছেন তাঁরা। ওষুধের দামও খুব বেশি নয়।

চিকিৎসক বর্ণনা করেন, গবেষণার জন্য ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছিল মানুষের শরীরে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রথমে টিউমার তৈরি হয়। তারপর চিকিৎসা করে সেই টিউমার সারানোর পর দেখা যায়, ক্যান্সারের কোষগুলো মরে যায়। সেগুলো ভেঙে ছোট ছোট পার্টিকল তৈরি হয়। রক্তের সঙ্গে সেগুলো ছড়াতে থাকে সুস্থ কোষে। তারপরই কর্কট-কোষের নতুন খেলা শুরু হয়। সুস্থ অঙ্গ আক্রান্ত হতে শুরু করে।

ইঁদুরের শরীরে প্রো-অক্সিড্যান্ট ট্যাবলেট দিয়ে দেখা গিয়েছে কাজ হচ্ছে। ট্যাবলেটের সঙ্গে রেজভেরাট্রোল ও কপার (R+Cu) দিয়ে দেখা গিয়েছে, পার্টিকলগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেগুলো আর এক অঙ্গ থেকে আর এক অঙ্গে যেতে পারছে না। গবেষকরা এই ওষুধকে বলছেন- Magic of R+Cu।। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই ওষুধে দ্বিতীয়বার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমবে, সেই সঙ্গে রেডিয়েশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হ্রাস পাবে অনেকটা।

এই ওষুধ কাজ করবে ফুসফুস, পাকস্থলী ও মুখের ক্যান্সারেও। আপাতত এফএসএসআই (Food Safety and Standards Authority of India)-র অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই ওষুধ। অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জুন-জুলাই মাস থেকেই সেটি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

ড. রাজেন্দ্র বাদভে আরও বলেন, ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় যখন কয়েক লক্ষ বা কোটি টাকা খরচ হয়, সেখানে এই ওষুধের দাম হবে ১০০ টাকা, পাওয়া যাবে সর্বত্র।’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারে কি না, সেই পরীক্ষা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে মানুষের শরীরে। তবে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া আটকাতে কতটা কার্যকর হবে এই ওষুধ, তা প্রমাণ করতে আরও ৫ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours