রাজ্যপাল বললেন, 'যে অশান্তির ঘটনা ঘটছে বিগত কয়েকদিন ধরে, তা আমরা সবাই জানি। এই ধরনের কাজ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না।'

Rishra Chaos Update রিষড়ার অশান্তিতে আহতর জন্য আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা রাজ্যপালেরএসএসকেএম হাসপাতালে রাজ্যপাল
কলকাতা: শিবপুরের অশান্তি এবং তারপর রিষড়ায় গতরাতের গোলমালের পর রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলার সাংবিধানিক প্রধান। শিলিগুড়িতে জি-২০ প্রস্তুতি বৈঠক ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এসেছেন সিভি আনন্দ বোস। কলকাতায় পৌঁছেই রাজভবনে নয়, গাড়ি নিয়ে সোজা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রাজ্যপালের কনভয় পৌঁছে গিয়েছে রিষড়ার গণ্ডগোল কবলিত এলাকায়। সরেজমিনে ঘুরে দেখলেন সেখানকার পরিস্থিতি। রেলগেট চত্বর এবং রিষড়া স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি। কড়া বার্তা দিলেন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন কোনওভাবে বরদাস্ত করা হবে না।



রাজ্যপালের কনভয়

কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল নিজের উদ্বেগের কথা শুনিয়েছেন। বললেন, ‘যে অশান্তির ঘটনা ঘটছে বিগত কয়েকদিন ধরে, তা আমরা সবাই জানি। এই ধরনের কাজ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। সাধারণ মানুষের শান্তিতে বাঁচার অধিকার রয়েছে, সেই অধিকার হনন করা যাবে না। বাংলার মানুষ অনেক সহ্য করেছে। যারা এই ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
 রাজ্যপাল বলেছেন, ‘সমাজে এই ধরনের অশান্তি চিরকালের জন্য বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আমরা মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই যে তাঁরা শান্তিতে থাকতে পারবেন এবং রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ হবে।’

রাজ্যপাল কোথায় কোথায় যাবেন, সেই বিষয়টি এখনও জানা যায়নি। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তারা একেবারে প্রস্তুত রয়েছেন। রিষড়া থানায় দেখা গিয়েছে আইপিএস পদমর্যাদার অফিসাররা নিজেদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। এদিন সকালেও বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে রিষড়ার বিভিন্ন এলাকায়।
রিষড়ার ৪ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কনভয়। গতরাতে এই এলাকায় অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশের বিশাল বাহিনী। সিপির সঙ্গে কথা বলে গোটা ঘটনার বিবরণ নিয়ে নিচ্ছেন রাজ্যপাল।

রিষড়ায় এলাকা পরিদর্শনে রাজ্যপাল

পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি রেলের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলে নিচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। চার নম্বর রেল গেট চত্বরে গতরাতে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি কেমন রয়েছে, তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল।

রিষড়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝে নিচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস

গতরাতে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, গতকাল কত পুলিশ ছিল, বর্তমানে কত বাহিনী পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, সেই সব বিষয়গুলি পুলিশের কর্তাদের থেকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
রিষড়ায় গিয়ে ফের একবার কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যপাল। সংবাদমাধ্যমের সামনে বাংলার সাংবিধানিক প্রধান বললেন, ‘আমরা কোনওভাবেই এমন পরিস্থিতি মেনে নেব না। দুষ্কৃতীদের কোনওভাবে আইন নিজেদের হাতে নিতে দেওয়া চলবে না। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। এই কালো শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলার মানুষের শান্তিতে বাঁচার অধিকার রয়েছে এবং সেই অধিকার রক্ষা করা হবে। বাংলার মানুষ বহুদিন ধরে রাজনীতির ‘দুর্বৃত্তায়ন’-এর জন্য ভুক্তভোগী। এর একটা শেষ দরকার।’
রাজ্যপালের আশ্বাস, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দোষীদের অবশ্যই জেলে পাঠানো হবে।’
এদিকে রিষড়া চার নম্বর রেলগেট চত্বর থেকে রাজ্যপালের কনভয় বেরোতেই সংবাদমাধ্যমকে আটকে দেওয়া হয়। কেন আটকে দেওয়া হল, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের তরফে জানানো হয়, নিরাপত্তার প্রোটোকলের কারণে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
রিষড়া ৪ নম্বর রেলগেট চত্বর পরিদর্শনের পর রাজ্যপাল এবার পৌঁছে গিয়েছেন রিষড়া রেল স্টেশনে। স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে যান। সেখানে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গতরাতের অশান্তিতে রেলের কতটা ক্ষতি হয়েছে, সেই সব বিষয়গুলি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল। এরপর এক নম্বর প্লাটফর্মেও যান বাংলার সাংবিধানিক প্রধান। রিষড়ায় স্টেশন মাস্টারের ঘরে ঢুকেও কথা বললেন তিনি।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রিষড়া রেল স্টেশনে

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর শ্রীরামপুরে যাওয়ার কথা ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। কিন্তু শ্রীরামপুর যাওয়ার পথে নওগাঁয় তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। আর এতেই পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট সুকান্ত মজুমদার। বললেন, ‘পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও জুতসই জবাব দিতে পারছে না। এখানে তো ১৪৪ ধারা নেই। রাস্তা দিয়ে গাড়িও যাচ্ছে। পুলিশ কোনও সঠিক উত্তর দিতে পারছে না। ইউ-টার্ন তো পুলিশ যে কোনও জায়গা থেকেই করাতে পারে। ইউ-টার্ন তো পুলিশ যে কোনও জায়গা থেকেই করাতে পারে।’ পুলিশের উদ্দেশে সুকান্ত বলেন, ‘আপনারা চলুন সঙ্গে, আমরা হাঁটতে হাঁটতে যাব।’
এদিকে রিষড়া স্টেশন চত্বর পরিদর্শনের পর সংলগ্ন রাস্তায় চলে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেখানে বেশ কিছু স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের কী কী অসুবিধা হচ্ছে, সেই সব বিষয়ে খোঁজখবর নেন রাজ্যপাল। কোনও সমস্যা হলে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল।
এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলার পর রাজ্যপাল সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রতিক্রিয়া দিলেন, ‘জিও, অউর জিনে দো।’
রিষড়ার পরিস্থিতি ঘুরে দেখে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে রিষড়ার অশান্তির এক ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি ভর্তি রয়েছে ট্রমা কেয়ার ইউনিটে। দুপুর ২টো ১৫ মিনিট নাগাদ রাজ্যপাল এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে সোজা ঢুকলেন ট্রমা কেয়ার ইউনিটে।
আহত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে রাজ্যপাল জানালেন, ওই ব্যক্তির মাথায় সামান্য চোট রয়েছে। ওই ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours