প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাস সিজার যে ধরনের আংটি পরতেন তেমনই একটি আংটির খোঁজ মিলল কেরলের এর্নাকুলাম জেলার পাট্টানাম গ্রামে। প্রায় দেড় সেন্টিমিটার  (আদতে ১.২ সেন্টিমিটার) লম্বা সেই আংটিতে রয়েছে সিলমোহরও। যাঁরা খননকাজে জড়িত কেরলের সেই স্থানীয় পামা ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা পি জে চেরিয়ান এই খবর দিয়েছেন।
চেরিয়ান জানিয়েছেন, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে পাট্টানাম গ্রামের ১১১ একর জায়গা জুড়ে গত ১৩ বছর ধরে ৬৬টি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে খননকাজ চালানো হচ্ছে। সেই কাজ করতে গিয়েই এপ্রিলের ২৫ তারিখে এই আংটির খোঁজ মিলেছে।
চ‌েরিয়ান এও জানিয়েছেন, মাটি খুঁড়ে উদ্ধারের পর এই আংটি সম্পর্কে তিন মাস ধরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
রোমের ভার্গাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেকো-রোমান শিল্পকলা ও পুরাতত্ত্বের অধ্যাপক গ্যুলিয়া রক্কা জানিয়েছেন, এমন ধরনের আংটি পরতেন প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাস সিজার। যিনি ২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর ছিলেন।
ওই আংটির উপর খোদাই করা আছে গ্রেকো-রোমান মুখ ও এক মহিলা স্ফিংস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেরিয়ার নদীর কূলে কেরলের গ্রাম থেকে এই আংটি উদ্ধারের পর মনে করা হচ্ছে গ্রামটি রোমান সাম্রাজ্যের ওই পর্বে একটি বন্দর-শহর ছিল। সেটা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে খ্রিস্টের জন্মের পরের চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এমন বন্দর-শহরগুলিকে বলা হোত ‘মুজিরিস’। মিশর দখল করার পর দিকে দিকে এমন ধরনের বন্দর-শহর গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন রোমান সম্রাটরা। লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যের প্রয়োজনে। ওই বন্দর-শহরগুলির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও রোমে পৌঁছত নানা ধরনের মশলাপাতি, মূল্যবান ধাতু, পাথর, রেশম, হাতির দাঁত ও নানা ধরনের মৃৎশিল্প। ওই মুজিরিসগুলিই মধ্যপ্রাচ্য ও রোম থেকে আমদানি করত স্বর্ণমুদ্রা, নানা ধরনের পানীয় ও গম। খ্রিস্টের জন্মের পর চতুর্থ শতাব্দীর কোনও এক সময় থেকে এই বন্দর-শহরগুলি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, রোমান সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তাচলে যেতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই রোমের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করতে শুরু করে লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকাগুলি। তার ফলে, অবলুপ্তির পথে এগিয়ে যায় ওই বন্দর-শহরগুলি। সেই সময়েই অবলুপ্ত হয় পাট্টানামের বন্দর-শহরও।
অন্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ১৩৪১ সালে পেরিয়ার নদীতে ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছিল। তার ফলে সেখানকার বন্দরের একটা বড় অংশ চলে যায় জলের তলায়। ফলে জাহাজ ঢোকার পক্ষে বন্দরটি অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
স্ফিংসের সিলমোহর লাগানো রোমান সম্রাটদের ব্যবহৃত ওই আংটি কী ভাবে এল সুদূর কেরলের পাট্টানামে?

চেরিয়ান বলছেন, ‘‘বণিক ও ব্যবসায়ীরা এই সব আনতে পারেন এখানে। এমন আংটি আরও মিলতে পারে এখানে। এই আংটি রোমান সম্রাট অগাস্টাস নিজে পরতেন। আর তাঁর কয়েক জন ঘনিষ্ঠকে পরার অনুমতি দিতেন। হাতে সই করার পরিবর্তে এই আংটির সিলমোহর ব্যবহৃত হোত। আবার এও হতে পারে এই স্ফিংস পাট্টনামেই বানানো হোত। এই সম্ভাবনাও বেশ জোরালো। কারণ, তারও কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’’

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় পুরাতত্ত্বের অধ্যাপক ক্রিস গসডেনের বক্তব্য, এই আংটির হদিশ মেলায় এটা বোঝা যাচ্ছে, বাণিজ্যের ভূবনায়ন অনেক আগেই হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য ও অন্যত্র। ফলে, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংস্কৃতির লেনদেনও অনেক পুরনো বলেই মনে হচ্ছে।




Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours