গত চার মাস ধরে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনার জন্য সরাসরি চিন কেই দায়ী করল নয়াদিল্লি। আজ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, গত চার মাস ধরে লাদাখে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে জন্য দায়ী চিন। সেই সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, কূটনীতির পথেই সমস্যার সমাধান হবে বলে তাঁর বিশ্বাস। এরই মধ্যে রাশিয়ায় চলা সাংহাই রাষ্ট্রগোষ্ঠীর বৈঠকের সময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলাদা বৈঠক করতে চেয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে খবর। সরকারি সূত্রের মতে, একমাত্র শুক্রবারই ওই বৈঠক হওয়া সম্ভব
লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার জন্য চিনকে দায়ী করে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী ও সেনা কর্তারা আলোচনা চালিয়ে ঐকমত্যে এসেছিলেন যে, সীমান্তের বিষয়টি মীমাংসা করা প্রয়োজন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘কিন্তু গত চার মাস ধরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, লাদাখ সীমান্তে পরিস্থিতির অবনতির জন্য চিনই দায়ী। চিন একতরফা ভাবে সীমান্তের স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে। যার ফলে গত তিন দশকে সীমান্তে যে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় ছিল, তা বিঘ্নিত হয়েছে। ভারত বিশ্বাস করে সমস্ত বকেয়া বিষয়গুলি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে মেটানো সম্ভব।’’ একটি অনুষ্ঠানে খোদ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘সীমান্তে যা ঘটবে, তার প্রতিফলন দেখা দেবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। চিনা বিদেশমন্ত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। কূটনৈতিক পথেই সমাধান খুঁজতে হবে।’’ জবাবে ভারতে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং জানান, ‘‘সীমান্তের বিষয়টির শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য বেশ কিছু দিন ধরে কথাবার্তা চালু রয়েছে। ভারত-চিন সীমান্তে যুক্তিগ্রাহ্য, ন্যায্য এবং উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সূত্র বার করার জন্য চিন বরাবরই সক্রিয়।’’
লাদাখ সীমান্তে সংঘাতের পরিস্থিতির জন্য চিনকে দায়ী করে মুখ খুলেছেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়তও। আজ ‘ভারত-আমেরিকা শীর্ষ বৈঠক’ নামের আলোচনাচক্রে রাওয়ত জানান, ‘‘সীমান্ত সামলানোর জন্য চিনের সঙ্গে ১৯৯৩ সালে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝেই চিনের পক্ষে সীমান্তে আগ্রাসন লক্ষ্য করা গিয়েছে। ভারত সব ধরনের আগ্রাসন রুখতে সক্ষম।’’ 
দু’দিন আগেই পেন্টাগন মার্কিন কংগ্রেসে রিপোর্ট দিয়েছিল— ভারতকে চাপে ফেলতে এ বার তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলিতেও সেনা ঘাঁটি ও সেনা পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে চিন। বেজিংকে চাপে রাখতে ভারতও যে পিছিয়ে নেই, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাওয়ত। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে অবাধ যাতায়াত ও বাণিজ্যের লক্ষ্যে আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত— এই চার দেশ মিলে যে অক্ষ গড়া হয়েছে, সেটি আগামী দিনে ওই অঞ্চলে কার্যকরী ভূমিকা নিতে চলেছে বলেই মনে করেন তিনি। 
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে ফের অশান্ত করতে চাইছে পাকিস্তান। রাওয়ত বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখায় সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরেও যদি পাকিস্তান কোনও দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ করার দুঃসাহস করে, তা হলে তাদের বড় মাপের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’’ 
গত ক’দিন ধরে উত্তেজনা থাকলেও গত কাল থেকে মোটের উপর স্থিতাবস্থা বজায় রয়েছে লাদাখ সীমান্তে। লাদাখের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ দু’দিনের সফরে সেখানে গিয়েছেন সেনাপ্রধান এম এম নরবনে। সেনা সূত্রের খবর, সেখানে নেমে আজ শীর্ষ সেনা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। অন্য দিকে এ দিন অরুণাচলে চিন সীমান্তে বায়ুসেনার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন বাহিনীর প্রধান আর কে এস ভাদৌরিয়া।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours