অসহ্য গরমে পানীয় জলের কষ্ট বাড়ছে কলকাতায়। কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার। ৯৫, ৯৮ এবং ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই জল সংকট তীব্র। বাধ্য হয়ে পুরসভার জল-ই কিনে খেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বুস্টার পাম্পিং স্টেশন চালু হলে সমস্যার সমাধান হবে আশ্বাস বরো কো-অর্ডিনেটরের।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিটি বাড়িতেই জলের ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে। বারবার হাত ধোয়ার সঙ্গে জামা কাপড় ধোয়া। এসবের জন্য অতিরিক্ত জলের চাহিদা প্রতিটি বাড়িতেই। অন্যদিকে প্যাচপেচে বর্ষার গরমে নাজেহাল বাসিন্দারা। এই অবস্থায় দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের চাহিদা যেমন বাড়ছে তেমনি কলকাতা পুরসভার জল পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটায় কষ্টে আছেন বাসিন্দারা।
কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কথাই ধরা যাক। গাঙ্গুলি বাগান দিয়ে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকলেই লুনার মোড়। এখানে সেই কবে থেকে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু শেষ হয়নি। আর এলাকার বাসিন্দাদের জল দুর্ভোগেরও তাই সমাধান হয়নি।
এই ওয়ার্ডের রামগড় এলাকার একাংশ এবং বিদ্যাসাগর কলোনির একাংশের বাসিন্দারা দিনের পর দিন বছরের পর বছর কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন। পুরসভার জল পরিষেবা কম থাকায় বাধ্য হয়েই পুকুরের জল ব্যবহার করতে হচ্ছে কোথাও কোথাও। আবার কোথাও জল কিনে খেতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। কেউবা সাতসকালে উঠে জার হাতে লায়েল-কা বা আরও দূরে ই-ব্লকে চলে যাচ্ছেন পরিশ্রুত গার্ডেনরিচের পানীয় জল আনতে। রামগড় ও বিদ্যাসাগর কলোনিতে মিষ্টি জলের যে বড়ই অভাব।
বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা শ্যামলী সাহা অভিযোগ করেন, বারবার জানিয়েও ওয়ার্ড কো-অডিনেটর কিংবা পুরসভার কর্তাব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন, কাজের কাজ হয়নি। করোনার জন্য বারবার হাত ধুচ্ছে বাড়ির লোকজন, আবার বাইরে গেলেই জামাকাপড় ধোওয়া হচ্ছে। এসবের জল কোথায় পাব? প্রশ্ন গৃহিণীর!
বিদ্যাসাগর কলোনির অনেকের বাড়ির রিজার্ভারে জল পৌঁছচ্ছে না। বাধ্য হয়েই পুরসভার কাছ থেকেই পানীয় জল কিনতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এক ট্যাঙ্ক পানীয় জলের দাম ৪৫০ টাকা। বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা রাজু গুহ জানালেন, প্রতিমাসে ৪ ট্যাঙ্ক জল লাগছে অর্থাৎ মাসে প্রায় ২০০০ টাকা তাঁকে রেকারিং খরচ করতে হচ্ছে পানীয়জল কেনার জন্য।
বিদ্যাসাগর কলোনিতে এমনই অবস্থা যে এক বস্ত্র ব্যবসায়ী তার দোকানে পানীয় জলের "জার" রেখেছেন। সেই খালি জার দেদার বিকোচ্ছে। একই অবস্থা রামগড়ের একাংশের। কাছেই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কবে যে কাজ শেষ হবে আর পানীয় জল সরবরাহ ঠিকঠাক হবে সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন বাসিন্দারা।
একই অবস্থা ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি নগর, গান্ধী কলোনী-সহ বিভিন্ন এলাকায়। ১০ নম্বর বরোর কো-অর্ডিডিনেটর যিনি সেই তপন দাশগুপ্ত যে এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর সেই ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। বিজয়গর, আজাদগড়, অরবিন্দ নগর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ সেই মাসের পর মাস বছরের পর বছর। পানীয় জলও তারের মতো সরু হয়ে পড়ছে। আর পুরসভার পরিশ্রুত মিষ্টি পানীয় জল? যেন আকাশ কুসুম কল্পনা এই এলাকার বাসিন্দাদের।
প্রতিশ্রুতি পেতে পেতে হতাশ হলেও হাল ছাড়ছেন না পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন , ওই এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই ফেরুল পরিষ্কার পর্যন্ত করেছেন তবুও জলের স্পিড বাড়েনি এলাকায়। অনেকদিনের দাবি মেনে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হলেও সামান্য কিছু পাইপ লাইনের কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এলাকার বাসিন্দারা বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের জল পাবেন। পুরসভাকে বারবার বললেও কাজের গতি এগোয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
লকডাউনের সময় কাজের গতি অনেকটাই কমেছে স্বীকার করে নিলেন দশ নম্বর বরোর কো-অর্ডিনেটর তপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন ইতিমধ্যেই ৯৫ ও ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। এক বছরের মধ্যে এই সমস্ত এলাকায় পানীয় জলের আর কোন সমস্যাই থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তপন বাবু। এই এলাকায় কলোনি অনেকটাই বেশি আর তাই কলোনিতে পরিবার যেমন বেড়েছে তেমনি পানীয় জলের চাহিদাও বেড়েছে। আগের থেকে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে এখন পানীয় জল পরিষেবা অনেকটাই ভাল বলেও দাবি করেন তপন দাশগুপ্ত।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours