করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে পরিচ্ছন্নতার সংজ্ঞা। সাবানের ব্যবহার বা বিশেষ করে যে স্যানিটাইজারের ব্যবহার ছিল অনেকের ক্ষেত্রে নিতান্তই কম, তাই এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাজারেও চলে এসেছে বিভিন্ন রকমের স্যানিটাইজার। চাল, ডালের সঙ্গে যা কিনে নিয়ে আসছেন প্রায় সকলেই। হঠাৎ করে চাহিদা তৈরি হওয়াতে স্যানিটাইজার তৈরির জন্য রাতারাতি অনেক সংস্থাও তৈরি হয়েছে। এর ফলে নিয়ম না মেনে স্যানিটাইজার তৈরি করছেন অনেকেই। প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই তৈরি হওয়া রঙচঙে মোড়কে এই স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে পাড়ার দোকান বা কখনও বড় দোকানেও। অবৈজ্ঞানিকভাবে তৈরি হওয়া বাজার চলতি কিছু স্যানিটাইজার ডেকে আনতে পারে বিপদ। জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। 
কী ধরনের স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত? স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের (এসটিএম) চিকিৎসক অধ্যাপক গৌতম ব্যানার্জি জানিয়েছেন,  স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল থাকতে হবে ৭০ শতাংশ। যা হাতকে জীবাণুমুক্ত করবে। এর থেকে বেশি মাত্রায় অ্যালকোহলের ব্যবহারে হাতের চামড়া শুকিয়ে গিয়ে ক্ষতি হতে পারে। স্যানিটাইজারে যদি ৬০ শতাংশ ইথানল এবং ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপানল থাকে তবে সেটা যথেষ্ট কার্যকরী।
অ্যাবসলিউট অ্যালকোহলের থেকে মিথানলের দাম কম। অভিযোগ উঠছে, বেশি লাভ করতে গিয়ে কেউ কেউ এই মিথানল দিয়ে স্যানিটাইজার বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গৌতম। তিনি বলেন, মিথানল বার্নিশ করতে বা অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর বিষক্রিয়ায় হতে পারে বমি ভাব, ক্লান্তি বা মাথাঘোরার মতো সমস্যা। দৃষ্টিশক্তিতেও সমস্যা হতে পারে। ফলে স্যানিটাইজারে মিথানল ব্যবহার না করাই ভাল। কেনার আগে স্যানিটাইজারের গায়ে যে লেবেল থাকে সেই লেবেল পড়ে দেখে নিতে হবে কী কী উপকরণ এতে ব্যবহার করা হয়েছে।
মিথানল নিয়ে সতর্ক থাকার সঙ্গে রঙিন এবং সুগন্ধী স্যানিটাইজারের ব্যবহার এড়িয়ে চলতেই পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক চিকিৎসক অভিষেক দে বলেন, যে স্যানিটাইজারে রং বা সুগন্ধী মেশানো থাকে সেই স্যানিটাইজার থেকেও হাতের চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে এই ধরনের জিনিস এড়িয়ে চলাই ভাল। স্যানিটাইজার কেনার সময় দেখে নিতে হবে সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়েছে কি না। বাজারে এখন অনেক স্যানিটাইজার ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমার পরামর্শ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি যে স্যানিটাইজার তৈরি করছে সেগুলিই ব্যবহার করা উচিত। কারণ, এদের একটা নির্দিষ্ট পরিকাঠামো আছে।
তবে ঘরে থাকার সময় স্যানিটাইজার ব্যবহার না করে সাবান ব্যবহার করতেই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কারণ, বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহার ডেকে আনছে হাতের চামড়ার অন্য সমস্যা। অভিষেক জানিয়েছেন, করোনার এই সময়ে অনেকেই হাত পরিষ্কার রাখতে ঘনঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। এর ফলে হাতের চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এখন এই ধরনের অনেক রোগী আমাদের কাছে আসছেন।
চিকিৎসক গৌতম এবং অভিষেক যেমন স্যানিটাইজার কেনার আগে সতর্ক থাকতে বলেছেন তেমনি দু’‌জনেই পরামর্শ দিয়েছেন স্যানিটাইজার ব্যবহার করার ফলে হাতের চামড়ার যে খসখসে ভাব তৈরি হয় সেটা এড়াতে কোল্ড বা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম মাখতে। অভিষেক জানিয়েছেন, চামড়ার খসখসে ভাবটা এড়াতে নারকেল তেলও ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা বা অন্য কোনও ময়েশ্চারাইজিং উপাদান দিয়ে তৈরি স্যানিটাইজার ব্যবহারের পক্ষেই মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours