এদিকে ভারতের পড়শি দেশ চিন, তাদের সঙ্গে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক-যুদ্ধটা এই সময়কালে চরমে উঠেছিল। কখনও হামলা চালিয়ে চিনা পণ্যে কয়েক শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই একটা দাবি মানলে অনাহারে মরতে হবে ভারতের চাষিদের
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। কানে আসছে ‘টিক-টিক’ শব্দ। সময় এবার ফুরিয়ে এল বলেই। কিন্তু বাণিজ্যিক সমঝোতা? তার কী অবস্থা। মাস কতক আগেই বিশ্বজুড়ে একটা সংকটের আবহ তৈরি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত-সহ একাধিক দেশের উপর শুল্কের খাঁড়া নামিয়ে এনেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য ৯০ দিনের একটা রেহাইও দিয়েছিলেন। মূলত সমঝোতা করার জন্য এই সময় দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আপাতত সেই সময়ই শেষ হওয়ার পালা। তবু সমঝোতা বাকি রয়ে গেল ভারতের। কথা-বার্তা এখনও চলছে।
এদিকে ভারতের পড়শি দেশ চিন, তাদের সঙ্গে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক-যুদ্ধটা এই সময়কালে চরমে উঠেছিল। কখনও হামলা চালিয়ে চিনা পণ্যে কয়েক শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। তার পাল্টা আবার মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়াচ্ছিলেন শি জিনপিং। এই তাপ-উত্তাপের মাঝেই বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, ভারত নিরাপদ। ট্রাম্পের মাথা ব্যথা যত চিন বাড়ায়, ভারতের বাজারের জন্য তা ততই ভাল।
স্কুল ব্যাগে কী থাকতে পারে বই-খাতা-পেনসিল... কিন্তু মেয়েটার ব্যাগে যা ছিল, চোখ কপালে উঠল পুলিশের
জ্যোতি-স্মরণ শমীকের, নেপথ্যে কোন অঙ্ক?
কিন্তু হঠাৎই একদিন সব থেমে গেল। সুর নরম করল চিন। মাথা ঠান্ডা হল আমেরিকার। বসল বৈঠক। আলোচনার মধ্যে দিয়ে একটা বাণিজ্য়িক সমঝোতায় নেমে পড়ল চিন। দর কষাকষি করে আমেরিকার সঙ্গে বোঝাপড়া সেরে নিয়েছে ভিয়েতনামও। কিন্তু ভারত? বোঝাপড়ার খেলায় কি পিছিয়ে গেল? নাকি ট্রাম্পকে পেরিয়ে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই তাড়াহুড়ো করছে না নয়াদিল্লি?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনার জন্য যাওয়া প্রতিনিধিদের একটি দল আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তাদেরই একজন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাণিজ্যিক সমঝোতা কোনও তারিখ বা সময়সীমার উপর নির্ভর করে হয় না। উভয় দেশকেই তখনই কোনও চুক্তি স্বাক্ষর করবে, যখন তা উভয়ের পক্ষেই লাভ জনক।
ইঙ্গিত স্পষ্ট। আর ইঙ্গিত বলেই নয়। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিজেও সেই কথাটাই স্বীকার করেছেন। শুক্রবারই তিনি বলেন, ‘ভারত ডেডলাইন মেনে চলার জন্য যে কোনও বাণিজ্যিক চুক্তিকে চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে পারে না। আমরা তখনই এই সমঝোতায় সহমত জানাব, যখন তা উভয় পক্ষকেই লাভ দেবে। এখানে দেশের স্বার্থটাই সবার শীর্ষে। আমেরিকা ছাড়াও একাধিক দেশের সঙ্গেই আলোচনা চলছে।’
অর্থাৎ ট্রাম্পের কাছে কোনও ভাবেই মাথা নোয়ানো নয়। সম্মানের সঙ্গে সমঝোতায় আসা। ভারতের নীতি আপাতত স্পষ্ট। আর সেটাই হওয়া উচিত বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। পাশাপাশি, শুধু আমেরিকার উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি যে একদমই সুবিধের নয়, তা টের পাচ্ছে নয়াদিল্লি। সেই জন্যই কথা চলছে অন্য সকল দেশের সঙ্গেও। কথা চলছে বাণিজ্যিক মুক্তাঞ্চল তৈরির।
কোন কোন কারণে হোঁচট খাচ্ছে ভারত-আমেরিকা সমঝোতা?
এই আলোচনা ধাক্কা খাওয়ার একটা অন্যতম কারণ স্টিল বা ইস্পাতের ব্যবসা। ভারত বিশ্বে স্টিল উৎপাদনে অন্যতম। প্রতিবছর এই দেশ থেকে প্র্রচুর পরিমাণ ইস্পাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা হয়ে থাকে। যাতে ট্রাম্প আসার পর থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। কারণ, একটাই তাদের দেশেও স্টিল উৎপাদনের মাত্রা অনেকটাই।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটা দেশ, যারা শুধুই আমদানি করে ‘সংসার চালায়’। সেখানে স্টিল বা ইস্পাত তাদের তৈরি একটি অন্যতম পণ্য। তাই সেক্ষেত্রে দেশের চাহিদা দেশের অন্দরে থাকা উৎপাদনকারীদের দিয়েই মেটাতে চান ট্রাম্প। সেই কারণে বিদেশ থেকে আসা স্টিলে চাপিয়েছেন ২৫ শতাংশ শুল্ক। সূত্রের খবর, ভারত সেই ট্যারিফের পরিমাণ ১২ শতাংশ সীমিত রাখার আবেদন জানিয়েছে।
সমঝোতা হোঁচট খাচ্ছে কৃষি-পণ্যের কারণেও। ট্রাম্প চান ভারতে মার্কিন কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের অবাধ প্রবেশ ঘটাতে। কিন্তু নয়াদিল্লি তাতে রাজি নয়। ওয়াকিবহাল বলছে, সমঝোতায় জটেরও এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। এ দেশের ৪০ শতাংশ জনগণ কৃষিকাজ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য উৎপাদনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আমেরিকার কৃষকদের মতো ভারতীয় চাষিরা আকাশছোঁয়া ভর্তুকি পান না। কিন্তু সরকার সহযোগিতাতেও কমতি রাখে না। আর সেখানেই আসল খেলাটা খেলতে চায় আমেরিকা।
ট্রাম্পের প্রতিনিধিদের সাফ দাবি, ভারতে মার্কিন আপেল, দুগ্ধজাত পণ্য, সোয়াবিনের মতো পণ্য ট্যারিফ কমাতে হবে। যাতে ভারতীয় বাজারে মার্কিন কৃষকরা নিজেদের জায়গা করতে পারেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লি সম্মতি জানালে দেশের কৃষকরা অনাহারেই মারা যাবে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন কৃষকরা তাদের সরকারের থেকে প্রতি বছর ফসলের বিনিময়ে ৬১ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ৫২ লক্ষ টাকা ভর্তুকি পেয়ে থাকেন। যেখানে ভারতীয় কৃষকদের ভর্তুকির পরিমাণ মাত্র ২৮২ মার্কিন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ২৪ হাজার টাকা। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ফাঁদে পা দেওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা।
অন্যদিকে আবার বেশ কয়েকটি পণ্য মার্কিন বাজারে শুল্ক-মুক্ত ‘এন্ট্রি’ চাইছে ভারত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, চামড়ার পণ্য, বস্ত্র, ওষুধ, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য় ও অটো-মোবাইল যন্ত্রাংশ ইত্যাদি। যাতে আবার অখুশি ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা। তাদের সাফ দাবি, এই পণ্যগুলিকে এখন কোনও মতেই শুল্ক-মুক্ত করতে পারবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভবিষ্যতেও আশা নেই এমনটা নয়। যার ভিত্তিতে ভারতীয় প্রতিনিধিদের দাবি, শুল্ক-মুক্ত না করা গেলেও, ১০ শতাংশ বেস ট্যারিফ সহ্য সীমার মধ্যে। কিন্তু তাতেও রাজি নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে একটা বড় জট। যা হয়তো ৯ তারিখের মধ্যে কাটার সম্ভবনা খুবই কম।
এদিক আবার সোমবার অর্থাৎ আগামিকাল ১২টি দেশের জন্য় নতুন শুল্ক কাঠামো চালু করতে চলেছেন ট্রাম্প। এতে কি থাকবে ভারতের নাম? নজর এখন সেই দিকেই।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours