কল্য়াণ-মদনের মন্তব্য আপাতত সেই প্রশ্নগুলোকে উস্কে দিচ্ছে। কিন্তু উত্তর কে দেবে? উত্তর দেওয়ার লোক না মিললেও নিন্দার মিলেছে। যা করেছে খোদ তাদের দলই।
কসবা-কাণ্ডে কল্যাণ-মন্তব্যে 'নিন্দা' দলের, ঘি ঢাললেন মহুুয়া! তেলে-বেগুনে শ্রীরামপুরের সাংসদ
হেসে হেসে নিশানা করা শ্রীরামপুরের সাংসদের বরাবরের অভ্যাস। তবে শনিবার দলেরই একটি পোস্টে তিনি যখন অমত পোষণ করে কমেন্ট করছিলেন, তখন হয়তো সেই হাসি মুছে গিয়েছিল তাঁর মুখ থেকে।
যত বচসার সূত্রপাত শুক্রবার। কসবায় হওয়া নৃশংসা ঘটনা প্রসঙ্গে ‘বিরুপ’ মন্তব্য করে বসেন তৃণমূলের শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা সবই রয়েছে। একজন বন্ধু যদি বান্ধবীকে ধর্ষণ করে তা হলে নিরাপত্তা কী করে দেবে? কলেজের ভিতরে যদি করে সেখানে পুলিশ কীভাবে থাকবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ থাকবে? নিরাপত্তা তো সহকর্মীরা দেবে। কিন্তু তারাই তো রেপ করছে।’
'আপনি কি পাশে আছেন?', কসবায় গণধর্ষণে মূল অভিযুক্তের বান্ধবী বললেন...
শুধু কল্যাণ নয়। মন্তব্যের বাহারে নজর কেড়েছেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও। তাঁর আবার বক্তব্য, ‘উনি যখন যাচ্ছিলেন সেই সময় যদি সঙ্গে করে আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে যেতেন বা কাউকে জানাতেন এটা ঘটত না। যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁরা তো সুযোগেরই ব্যবহার করেছেন।’
নিরাপত্তা প্রদানের দায় কার? প্রশাসন নাকি কোনও ব্যক্তির নিজেরই? ধর্ষণের কি কোনও কারণ বা ব্যাখ্যা থাকতে পারে? কল্য়াণ-মদনের মন্তব্য আপাতত সেই প্রশ্নগুলোকে উস্কে দিচ্ছে। কিন্তু উত্তর কে দেবে? উত্তর দেওয়ার লোক না মিললেও নিন্দার মিলেছে। যা করেছে খোদ তাদের দলই।
শনিবার নিজেদের সমাজমাধ্য়মে কল্যাণ-মদনের মন্তব্যের নিন্দা করে তৃণমূল জানিয়েছে, ‘ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনা প্রসঙ্গে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্র যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। দল তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে কোনও ভাবেই একমত নয় এবং এই মন্তব্যগুলিকে কড়াভাবে নিন্দা করছে। এই ধরনের বক্তব্য কোনও ভাবেই দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না।’
দলের লাইনে সুর চড়িয়েছেন সাংসদ মহুয়াও। ওয়াকিবহাল মহল বলে, তাঁর সঙ্গে আবার কল্যাণের তেলে-বেগুনে সম্পর্ক। তিনি কারওর নাম না করেই ইঙ্গিতে কল্যাণ-মদনকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এদিন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মহুয়া লিখেছেন, ‘নারীবিদ্বেষ দলীয় সীমানা দেখে না। কিন্তু যারা এমন মন্তব্য করেন, তাদের নিন্দা করতেও তৃণমূল কংগ্রেস পিছপা হয় না।’
সমাজমাধ্যমে যখন দলীয় লাইন ‘সেট’ করছে তৃণমূল। সেই সময়ই তাঁর নিন্দা করেই দলের করা পোস্টে গিয়ে কমেন্টে অমত পোষণ ও বিরোধিতা করলেন কল্যাণ। লিখলেন, ‘দলের এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করি না। তারা কি ঘুরপথে অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া নেতাদের সমর্থন করছে? যে সকল নেতারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।’
তাঁর সংযোজন, ‘এর থেকেও দুর্ভাগ্যজনক, যে সকল নেতারা ২০১১ সালে পর এসেছে তারাও কিন্তু এই ধরণের অপরাধের জন্য মাঝে মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। তবে আমি তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাই, যারা এই অপরাধীদের উৎসাহ দেয়। আমার বিবৃতির আসল অর্থ বুঝতে হলে, একটি নির্দিষ্ট স্তরের নৈতিক ও বৌদ্ধিক দীপ্তি প্রয়োজন। যা আপাতত অনুপস্থিত বলেই মনে হচ্ছে।’
Post A Comment:
0 comments so far,add yours