এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিন দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে চিন্তা যে রয়ে যাচ্ছে, এটা অস্বীকার করছেন না তাঁরাই। ত্রুটির জায়গাটা ঠিক কোনখানে, সেটাই গত ৮-১০ দিনও বুঝে উঠতে পারলেন না জনপ্রতিনিধিরা।


বিন্দুমাত্র আমরা খবর পাইনি’, চারদিকে ৪ MLA-MP-র বাড়ি! সেদিন কেউ কিছু টেরই পেল না?
কী বলছেন জনপ্রতিনিধিরা?


এলাকায় বসবাস তৃণমূল সাংসদের। চারপাশে যে ক’জন বিধায়ক, তাও তৃণমূলের। তাহলে কেন তাণ্ডবের আগাম আঁচ দলের জনপ্রতিনিধিরা পেলেন না? এখানে সামান্য জমিতে বাউন্ডারির কাজ শুরু হলে দলের কর্মীরা পৌঁছে যান, সেখানে এই ধরনের পূর্বপরিকল্পনামাফিক হামলার ঘটনা দল জানতে পারল না? নাকি তৃণমূল জনপ্রতিনিধির সঙ্গে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের জনসংযোগে কোথাও বিচ্যুতি ঘটেছে? মুর্শিদাবাদে বেগালাম হিংসার পর উঠছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন।  


দলীয় বিধায়ক থেকে সাংসদ, প্রত্যেকে স্বীকার করছেন আঁচ পাননি। কেউ জানাননি। কেন? এই অবস্থা কেন দাঁড়ালো যে দলের এলাকার দণ্ডমুন্ডের কর্তারাই জানতে পারলেন না? এই প্রশ্নই এখন দলের মধ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে কোনও খোঁজ-খবর না থাকায় দলের সুপ্রিমোর ক্ষোভ বেড়েছে। 

জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস, ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম তিনজনেরই বাড়ি রতনপুরে। সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের বাড়ি পুঁটিমারি। ওয়াকফ আন্দোলনের নামে যে তাণ্ডবলীলা চলেছিল, তা কিন্তু এই এলাকার আশপাশেই। তাহলে কেন খোঁজ ছিল না? প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের এই জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও। শুধুমাত্র বহিরাগত বলে গোটা পরিস্থিতিকে ‘লঘু করার চেষ্টা’ হলেও আদতে জনসংযোগের ব্যর্থতার যে রয়েছে তা কিন্তু ঘনিষ্ঠতম হলে মেনে নিচ্ছেন নিজেরাই। বাইরন বলছেন, “আমরা আগে থেকে আঁচ করতে পারিনি। আগে থেকে খবর পেলে তো এ ঘটনা ঘটতেই দিতাম না। কিন্তু বিন্দুমাত্র আমরা খবর পাইনি। বড় শিক্ষা হল এটা থেকে। আর যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখব।”  


এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিন দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে চিন্তা যে রয়ে যাচ্ছে, এটা অস্বীকার করছেন না তাঁরাই। ত্রুটির জায়গাটা ঠিক কোনখানে, সেটাই গত ৮-১০ দিনও বুঝে উঠতে পারলেন না জনপ্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে গোটা পর্বই যে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে সেটাই ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন জনপ্রতিনিধিরা। খলিলুর রহমান যেমন বলছেন, “আমাদেরও সন্দেহ চক্রান্ত হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি কারা এটা করেছে তাঁদের খুঁজে বের করা হোক। আমরা এটা কখনও দেখিনি। আমাদের আগামী প্রজন্ম যাতে সুনাগরিক হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সর্বতভাবে এটা আটকাতে হবে।” 

এদিকে গত লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সামশেরগঞ্জ বিধানসভায় প্রায় ১৫ হাজার ভোটে বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী থেকে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এমনকি, লোকসভা নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতে ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় তৃণমূল ছিল তৃতীয় স্থানে। তাহলে কি সেটাই ছিল ইঙ্গিত? তৃণমূল স্তর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাই কি তাহলে ফলেই প্রভাব ফেলছিল? সেটাই বড় আকার ধারণ করল এই তাণ্ডবের ঘটনায়? এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা জঙ্গিপুর, সামশেরগঞ্জ, সুতি এলাক ঘিরে। 
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours