মাইক বেঞ্জ বলেন, "আমেরিকা শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয় নিয়ে খুশি ছিল না। বিএনপি বরং মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে বেশি খাপ খায়। তাদের কীভাবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়েছিল। আমেরিকার বিদেশনীতির সঙ্গে হাসিনার অনেক ক্ষেত্রে মিল ছিল না।
হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে আমেরিকা! প্ল্যান শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে! বিস্ফোরক তথ্য
হাসিনাকে উৎখাত পুরোটাই প্ল্যানিং?
কোনও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নয়, পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্র করেই উৎখাত করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে? বাংলাদেশের সরকার পতন ও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনলেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা মাইক বেঞ্জ। দাবি করলেন, আমেরিকাই পরিকল্পনা করে হাসিনাকে দেশ থেকে উৎখাত করেছে। হাসিনাকে সরিয়ে বিএনপি-কে ক্ষমতায় আনার জন্যই কীভাবে বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা ফাঁস করে দিলেন তিনি।
সাংবাদিক টকার কার্লসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা মাইক বেঞ্জ বলেন যে বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি তৈরিতে হাসিনা আপত্তি করাতেই তাঁকে উৎখাতের পরিকল্পনা করা হয়। আমেরিকার প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশে ‘সামরিক ঘাঁটি’ নির্মাণের।চিনের আধিপত্যকে প্রতিরোধের জন্যই এই সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা তাদের এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। এর জন্যই ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমেরিকা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিল। তাতেও তারা ব্যর্থ হয়। শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের সুদীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত USAID সংস্থার মাধ্যমে বেশ কিছু সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ফেইসবুকার, ইউটিউবার, র্যাপার এবং বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলন করা ব্যক্তিদের টার্গেট করা হয়। USAID-এর মাধ্যমে তাদের পিছনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। যার ফলাফল হল অগস্ট মাসে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত।
মাইক বেঞ্জ বলেন, “আমেরিকা শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয় নিয়ে খুশি ছিল না। বিএনপি বরং মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে বেশি খাপ খায়। তাদের কীভাবে তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়েছিল। আমেরিকার বিদেশনীতির সঙ্গে হাসিনার অনেক ক্ষেত্রে মিল ছিল না। উইকিলিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে হিলারি ক্লিনটন যখন বিদেশমন্ত্রী ছিলেন, তখন হাসিনার ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।”
“হাসিনা নিজেও বলেছিলেন যে মার্কিন ঘাটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই তাঁকে গদিচ্যুত করা হয়েছে। কোনও দেশই নিজের দেশে বিদেশি সেনা পছন্দ করে না। রোমানিয়াতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কে পছন্দ করবে নিজের দেশে ৫০০ একর জমি দিয়ে দিতে। হাসিনা আপত্তি করেছিল মার্কিন সামরিক ঘাঁটি তৈরি নিয়ে। তখন বিদেশ নীতি নির্ধারকরা সরকার বদল করার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশে অস্থিরতা তৈরি করে এবং হাসিনা সরকারকে দুর্বল করে। তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যাতে পরের নির্বাচনে এরা জয়ী হতে পারে বা আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনাকে উৎখাত করা যায়। দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।”
গত অগস্টে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাত করা কার্যত সামরিক অভ্যুথান ছিল বলেই তিনি উল্লেখ করেন। এটিকে কালার রেভিলিউশনের স্পষ্ট উদাহরণ বলেন তিনি। প্রাক্তন মার্কিন কর্তা জানান যে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মার্কিন সরকার হাসিনার জয় নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। একাধিক রিপোর্ট-মূল্যায়ন জমা পড়ে, যেখানে বিএনপিকে শক্তিশালী করার কৌশল তৈরি করা হয়, যা মার্কিন স্বার্থের জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করা হয়।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এনডিআই ও আইআরআই-কে ব্যবহার করা হয়। আইআরআই ২০১৯-২০ সালেই বিএনপি-কে সমর্থন করতে বলেছিল। ১৭০ অ্যাক্টিভিস্ট, ৩০৪ তথ্য সরবরাহকারীদের ব্যবহার করে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের বেছে নেয়, যাদের হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়। এলজিবিটিকিউ, দুটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে, যারা আন্দোলনে সামিল ছিল। র্যাপ গানের মধ্যে দিয়ে তরুণদের প্রভাবিত করা হয়। আমেরিকার জনগণের করের টাকা ব্যবহার করে বিভিন্ন মিউজিক ভিডিয়ো তৈরি করে, যাতে সরকারের উপরে মানুষের বিরক্তি তৈরি হয়। গানগুলিতে সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে পথে নামতে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন সমীক্ষা করে দেখা যায়, র্যাডিকাল অ্যাক্টিভিস্ট, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা সরকার ফেলতে সাহায্য করতে পারে, যেমন ২০০৯ সালে কিউবা নিয়ে একটি মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে আফ্রো-কিউবান সম্প্রদায়কে ব্যবহার করা হয়েছিল সরকার বিরোধী মনোভাব উস্কে দেওয়ার জন্য।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours