দশ বোনের সংসার। ওপার বাংলার মেয়েটি এপারে এসে পড়েছিলেন প্রবল অর্থকষ্টে। শখ ছিল পান খাওয়ার।


দশ বোনের সংসার। ওপার বাংলার মেয়েটি এপারে এসে পড়েছিলেন প্রবল অর্থকষ্টে। শখ ছিল পান খাওয়ার। স্কুলের যাতায়াতের ভাড়া বাঁচিয়ে রাসবিহারীর মোড়ে রাংতা মোড়া পান খেতে বেজায় ভালবাসত সে। গলায় ছিল বাঙাল টান। কথাও বলতেন উচ্চস্বরে। এ সবই নজর করতেন এক ‘রোগা ঢ্যাঙা’ লোক। এক দিন মানুষটি এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন ‘আমরা একটা থিয়েটার করছি। তুমি পার্ট করবে?’ মেয়েটি বলে, ‘এ সব আমাকে বলছেন কেন? আমার বাবার সঙ্গে গিয়ে কথা বলুন।’ বাবা রাজি হলেন, ওই শুরু। মেয়েটি সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়– বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক লিভিং লেজেন্ড যার সঙ্গে শট দিতে সতর্ক থাকতেন খোদ মহানায়ক। আর ওই রোগা লোকটি আর এক কিংবদন্তী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সাবিত্রীর জন্মদিন, জন্মদিনে উপচে পড়ছে শুভেচ্ছা বার্তা। তবে জানেন কি প্রথম যেদিন থিয়েটার করতে যান, পায়ে ছিল না জুতোও। কিনে দিয়েছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নতুন ইহুদি’ নাটক দিয়েই হাতেখড়ি সাবিত্রীর। পড়শির ধার করা শাড়ি পরে করতে নাচের শো-ও। অভাবের সংসারে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এরকমই একদিন নাটক দেখতে এলেন উত্তমকুমার। উত্তমকুমার এসেছেন শুনে সাবিত্রীদেবী আনন্দে আটখানা। কিন্তু তাঁকে দেখতে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি। ভাঙা ট্রাঙ্কে হোঁচট খেয়ে পড়েছিলেন সাবিত্রী। এরপর হাত-পা কেটে রক্তারক্তি কাণ্ড। যদিও হাত-পা কাটার কষ্ট ফিকে হয়ে গিয়েছিল সুদর্শন মানুষটিকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়ার আনন্দেই। বহু সাক্ষাৎকারেই সেই মুহূর্ত বারেবারে তুলে ধরেছেন তিনি। ওই দিনই তাঁর প্রথম কথা উত্তমকুমারের সঙ্গে। নিজের নাটকের দলে কাজ করার প্রস্তাব দেন উত্তমকুমার। যদিও এবারেও সাবিত্রীদেবী বলেন, তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলতে। উত্তমকুমার পৌঁছে দিয়ে যাবেন– এই মর্মে বাবা রাজি হলেন ঠিকই তবে সেদিন বাবার জন্য নাক-কান কার্যত কাটা গিয়েছিল সাবিত্রীর। কাজের কথা হওয়ার পরেই উত্তমকুমারের কাছে ‘অ্যাডভান্স’ চেয়ে বসেন তাঁর বাবা। লজ্জায় সেদিন মাথা হেঁট হয়ে গিয়ে ছিল সাবিত্রীর। যদিও বাবা যুক্তি দিয়েছিলেন, সংসার চলে না যেখানে, সেখানে কাজ করলে টাকা চাইতে দোষ কিসের?


আজীবন একাকী জীবন কাটিয়েছেন সাবিত্রী। বিয়ে করেননি। বোনের সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন। তবে প্রেম নিয়ে বরাবরই সোজা সাপটা ছিলেন তিনি। উত্তমকুমারের প্রতি তাঁর অনুরাগ নিয়েও লুকোছাপা করেননি। তবে নিজেই বারংবার বলেছেন কারও ঘর ভাঙতে চাননি তিনি। তাই গৌরীদেবীর থেকে উত্তমকুমারের সরে আসাও তাঁর মোটেও পছন্দ ছিল না। এখনও স্বমহিমায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে চলেছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। এসেছিলেন শূন্য হাতে। তবে ‘বাঙাল মাইয়া’র ঝোলা এখন পরিপূর্ণ। তাঁর গুণগ্রাহীর সংখ্যা যে অসীম।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours