তৃণমূল পার্টি অফিসে তাঁকে গলা টিপে প্রাণে মারার চেষ্টা হয়।

বোলপুর: দুবরাজপুরের তৃণমূল নেতা শিবঠাকুর মণ্ডল মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলাসভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল পার্টি অফিসে তাঁকে গলা টিপে প্রাণে মারার চেষ্টা হয়। কারণ তিনি নাকি অন্য দলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগের ঘটনায় সোমবার দুবরাজপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান শিবঠাকুর। ঠিক যেদিন দিল্লির বিশেষ আদালত যখন স্পষ্ট করে দেয়, গরু পাচার মামলায় তদন্তের স্বার্থে দিল্লি যেতে হবে অনুব্রতকে। ঘটনাচক্রে ঠিক তার পরেরদিনই অনুব্রতর বিরুদ্ধে শিবঠাকুরের এই অভিযোগ চাঞ্চল্যকর মোড় নেয়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার গ্রেফতার হন অনুব্রত। আদালতে তোলা হলে তাঁকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা যখন প্রায় পাকা, ঠিক এক দিন আগে শিবঠাকুর মণ্ডল কেন অভিযোগ দায়ের করলেন? সে দিন কী ঘটেছিল? এ প্রসঙ্গে  বাংলাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জবাব দেন শিবঠাকুর মণ্ডল।
বালিগুড়ি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রথম পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন শিবঠাকুর। নিজেই জানাচ্ছেন, অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে তিনি। প্রধান হওয়ার পর তিনি ভালভাবেই পঞ্চায়েত চালাচ্ছিলেন। হঠাৎই তাঁর নামে অনাস্থা আসে। অনাস্থাতে কিছু হয়নি। ‘কেষ্টদা’ই নাকি তাঁকে পঞ্চায়েত থেকে সরে যেতে বলেন বলে দাবি শিবঠাকুরের। প্রধান পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা কখনই মেনে নিতে পারেননি। তাঁর কথায়, “ভগবানকে সেসময় সবটা বলতাম। হনুমানজিকে জানাতাম। ঠাকুরের আর্শীবাদে আমি আবার পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবেই ফিরে আসি।” প্রধান হিসাবেই তিনি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করেন। এরপরে ওই আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যায়। সে কারণে তিনি পাঁচটা টিকিট দলের কাছে চেয়েছিলেন। পঞ্চায়েতের অনাস্থা রুখতেই তিনি এটা করেছিলেন বলে দাবি তাঁর। তাঁকে দল দুটো টিকিট দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি নেননি।

শিবঠাকুর জানাচ্ছেন, তখন থেকেই তিনি দল করবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি অন্যদলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেটা ‘কেষ্টদা’ জেনে গিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, “অভিযোগটা অত্যন্ত বড়। আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিল দুবরাজপুরের পার্টি অফিসে। আমাকে বলে দল কেন ছাড়বি? দলের কাছ থেকে আমি কী পেয়েছি, বঞ্চনা ছাড়া, আমি এটাই বলেছিলাম। বলেছিলাম, আপনি(অনুব্রত) বললে আমি বসে যাচ্ছি, কোনও দলেই যাব না। এই কথাটা শুনে রেগে আমার গলা চেপে ধরেন। প্রাণে মারার চেষ্টা করেন।”

বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঘটনাটি ঘটেছিল বলে দাবি শিবঠাকুরের। ঘটনার সময়ে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে অনুব্রতর মণ্ডলের এক নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, এ দিন পুলিশের গ্রেফতারে আদালতে জামিনের আবেদনই করেননি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন দুবরাজপুর আদালতের বিচারক। শিবঠাকুরের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতারে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন বিরোধীরা। সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “এরা দুর্নীতির এতটাই গভীরে পৌঁছে গিয়েছে, যে কোনও তদন্তকেই ভয় পাচ্ছে। যে চেষ্টা এরা করছে, তা যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে হাস্যকর বলে মনে হবে। যে মামলায় তাঁকে তোলা হচ্ছে, তার কোনও গুরুত্ব আছে কি না, কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কি না এসব তো বিচার করতে হবে। বিচারকও গুরুত্ব উপলব্ধি করে ওদের এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে।”

বীরভূমের তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিবঠাকুর মণ্ডল দুবরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলার পরই প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট চাওয়া হয়েছিল আসানসোল থেকে। আজই দুবরাজপুর কোর্টে তোলা হয়। ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত চাওয়া হয়। বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত দেন।”



Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours