নিয়োগ-দুর্নীতি (Teacher Recruitment Scam) মামলার চার্জশিটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) মাস্টারমাইন্ড বলে দাবি করল সিবিআই (CBI)। পাশাপাশি এই চার্জশিটে বলা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্যেই, শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে SSC’র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। দুর্নীতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদেরও ষড়যন্ত্রমাফিক সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

শান্তিপ্রসাদই কি ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আসল ঘুঁটি ?

স্কুলের নিয়োগে দুর্নীতির মামলায়, ইডির হাতে প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ঠিক তারপরই সিবিআইয়ের গ্রেফতার হন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা। স্কুল সার্ভিস কমিশনে এই শান্তিপ্রসাদই কি ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আসল ঘুঁটি? তাঁকে সামনে রেখেই কি দুর্নীতির ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী?

জল্পনা উস্কে দিয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিট। এই চার্জশিটে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড। এরপরই শান্তিপ্রসাদ সিন্হার নিয়োগ প্রসঙ্গে চার্জশিটে বলা হয়েছে, শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা সন্দেহজনক। আর এই নিয়োগ হয়েছিল এটা নিশ্চিত করতে, যাতে স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে, নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রভাব খাটানো সম্ভব হয়। 


দুর্নীতি-জালিয়াতি সরাতে ইচ্ছাকৃত অপসারণ

চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, শুধু শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে নিয়োগ নয়, তাঁর রাস্তা পরিষ্কার করতেও সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সিবিআইয়ের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে, যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় একেবারে ষড়যন্ত্রমাফিক, কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা ছাড়া, এবং SSC’র বিধিবদ্ধ নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারপার্সনের পদ থেকে শর্মিলা মিত্রকে সরিয়ে দেন। যাতে শান্তিপ্রসাদ সিন্হা নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত জালিয়াতি চালিয়ে যেতে পারেন। 

তদন্তে জানা গেছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এই মামলার অন্যান্য অভিযুক্তর সঙ্গে মিলে, SSC’র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছিলেন, যাতে পর্ণা বসুকে পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে সাদার্ন রিজিওনাল কমিশনে বদলি করা হয়। সিবিআই সূত্রে দাবি, যাঁরা যাঁরা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার পথের কাঁটা হতে পারতেন, তাঁদের একে একে কমিশন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিবিআইয়ের চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর, জাল সুপারিশপত্র জারি করায়, ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর, শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে শোকজ করেছিলেন SSC’র তৎকালীন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার। এই দুর্নীতিতে তাঁর সায় নেই বুঝতে পেরে, চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারকেও পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। সৌমিত্র সরকার দুর্নীতির কথা জানানোর পরও, পার্থ চট্টোপাধ্যায় শান্তিপ্রসাদ সিন্হার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। বরং ১৯৯৭ সালের SSC আইনের ৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে, তিনি সৌমিত্র সরকারের জায়গায় অশোককুমার সাহাকে বসান। 

শান্তিপ্রসাদ সিন্হার সঙ্গেই অশোক সাহাকেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এর আগে বাগ কমিটির রিপোর্টেও বলা হয়েছিল, SSC’র গ্রুপ C’র প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর, ৩০০’র বেশি সুপারিশপত্র ছাপানো হয়েছিল। আর এই কাজ হয়েছিল SSC’র তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার নির্দেশে। কিন্তু, শান্তিপ্রসাদকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন কে? এজেন্সির তদন্তে কি তা সামনে আসবে?
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours