তবে মনে রাখবেন, গাড়ি চুরি হয়ে গেলে বিমার সুবিধা পাওয়া যায় না। দু'চাকা বা চার চাকার ঋণের কিস্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মালিকের নামে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়।


অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় কলকাতার EM বাইপাসে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন অভিষেক। লাল সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকার সময় একটা গাড়ি তাঁর গাড়িতে এসে ধাক্কা মারে। অভিষেকের যত না সেই গাড়ির চালকের রাগ হল তার থেকে বেশি রাগ হল নিজের ওপরে। কারণ গড়িমশি করতে করতে তিনি গাড়ির ইনসিওরেন্স রিনিউ না করানোয় সেটি ল্যাপস্ হয়ে গিয়েছে। এখন অভিষেককে গাঁটের টাকা খরচ করে গাড়ি সারাতে হবে। ঠিক এই কারণে সময়ে সময়ে গাড়ির ইনসিওরেন্স রিনিউ করানো খুব জরুরি।



বিমা ল্যাপস হলে গুণতে হবে জরিমানা

গাড়ির বিমা ছাড়াই গাড়ি চালানোর সময় ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কী হবে জানেন? ২০১৯ সালের Motor Vehicles Act অনুসারে দু’চাকা এবং চারচাকা উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। প্রথমবার ধরা পড়লে ২ হাজার টাকা জরিমানা থেকে ৩ মাসের জেল বা দুটোই হতে পারে। পরের বার ধরা পড়লে দ্বিগুণ জরিমানা অর্থাৎ ৪ হাজার টাকা এবং ৩ মাসের হাজতবাস বা দুটোই হতে পারে।

পলিসি ল্যাপস্ হওয়ার অসুবিধা

বিমা ল্যাপস হয়ে গেলে গাড়ির মালিককে নিজের গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি সমস্ত থার্ড পার্টি ড্যামেজের খরচও বহন করতে হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সবধরনের গাড়ির ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি ইনসিওরেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যিনি গাড়ি চালান তাঁর দুর্ঘটনার বিমা কভারেজকে থার্ড পার্টি ইনসিওরেন্স বলে। দুর্ঘটনার যাবতীয় খরচ মেটানো হয় এই থার্ড পার্টি ইনসিওরেন্স থেকে। থার্ড পার্টি বিমার আওতায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কভার পাওয়া যায়।

পলিসি ল্যাপস হয়ে গেলে থার্ড পার্টি ড্যামেজের সমস্ত ব্যায়ভার দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির মালিককেই বহন করতে হয়। একইধারে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডও হতে পারে।

তবে মনে রাখবেন, গাড়ি চুরি হয়ে গেলে বিমার সুবিধা পাওয়া যায় না। দু’চাকা বা চার চাকার ঋণের কিস্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মালিকের নামে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়। কিন্তু পলিসি ল্যাপস হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশন আটকে যায়।

পলিসি কভারে ছেদ

সময়মতো পলিসি রিনিউ না করা হলে পলিসিতে ছেদ পড়বে। বিমা কোম্পানিগুলি সাধারণত ডিউ ডেট থেকে ১৫ থেকে ৩০ দিনের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে থাকে। তবে বিমার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ৯০ দিন পরেও সেটি রিনিউ না করালে নতুন বিমা পলিসি কেনা ছাড়া কোনও গত্যন্তর থাকে না। নতুন পলিসি কিনতে গেলে ফের গাড়ি পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া বোনাস হিসেবে যে ছাড় পাওয়া যায় সেই সুবিধাও পাওয়া যাবে না।

পলিসি ল্যাপস হওয়ার হাত থেকে বাঁচাবেন কীভাবে?

খুব সাধারণ কয়েকটি পদক্ষেপের মাধ্যমে আপনি বিমা পলিসি ল্যাপস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। আপনি মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার সেট করে রাখতে পারেন। নতুন গাড়ির জন্য দীর্ঘ মেয়াদি থার্ড পার্টি ইনসিওরেন্স বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। চার চাকা গাড়ির ক্ষেত্রে ৩ বছরের থার্ড পার্টি কভার বাধ্যতামূলক। দু’চাকার ক্ষেত্রে সেটি পাঁচ বছর।

2০১৮ সালের আগে গাড়ি কিনলে আপনাকে পৃথকভাবে থার্ড পার্টি ইনসিওরেন্স কিনতে হবে। নিজের গাড়ির কভারেজের জন্য যে বিমার সুবিধা পাওয়া যায়, তা বাধ্যতামূলক নয়। তবে এই বিমা কেনা থাকলে দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours