এক পাকিস্তানি কিশোরীর ঘাড় সোজা করে দিলেন এক ভারতীয় ডাক্তার। তাও একেবারে বিনামূল্যে।

এক পাকিস্তানি কিশোরীর ঘাড় সোজা করে দিলেন এক ভারতীয় ডাক্তার। তাও একেবারে বিনামূল্যে। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে চার-চারটি অস্ত্রোপচারে এই অসাধ্য সাধন করেছেন দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাক্তার রাজগোপালন কৃষ্ণন। যার ফলে ওই পাক কিশোরীর পরিবার এখন ডাক্তার কৃষ্ণনকে ‘ফেরেস্তা’র থেকে কম কিছু মনে করছে না। হ্যাঁ, এ এক ফেরেস্তার কাহিনিই বটে।

এই কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের বাসিন্দা আফসিন গুল তখন মাত্র ১০ মাসের শিশু। সেই সময় একদিন তাঁর বোনের কোল থেকে পড়ে গিয়েছিল সে। বিবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী দুর্ভাগ্যজনক ওই দুর্ঘটনায় ওই কিশোরীর ঘাড় ৯০ ডিগ্রি বেঁকে গিয়েছিল। আফসিন গুলের বাবা-মা তাকে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় কোনও লাভ হয়নি। গুল পরিবারের পক্ষে আর চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। ফলে ওইভাবেই থেকে গিয়েছিল আফসিন।

১২ বছর ধরে ঘাড় বাঁকা থাকার কারণে না পেরেছে সে স্কুলে যেতে, না পেরেছে কোনও বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে। ওই অবস্থার কারণে, খাওয়া, হাঁটা, কথা বলার মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও তার অসুবিধা হত। সেই সঙ্গে সে সেরিব্রাল পালসিতেও ভুগছে। যার ফলে পড়াশোনাতেও বরাবর পিছিয়ে ছিল সে। এই অবস্থায় ডা. কৃষ্ণনের সঙ্গে আফসিনের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন জনৈক ব্রিটিশ সাংবাদিক আলেকজান্দ্রিয়া থমাস। তিনি আফসিনের কাহিনি তাঁর লেখায় তুলে ধরেছিলেন। সেই লেখার পড়ে আফসিনের পরিবারের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন ডাক্তারবাবু। জানিয়েছিলেন ভারতে আসলে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করবেন।
৯০ ডিগ্রি বাঁকা ঘাড় এখন সোজা

২০২১ সালের নভেম্বরে গুল পরিবার আফসিনের চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিল। এরপর, অস্ত্রোপচারের খরচ জোগার করতে, ডাক্তার কৃষ্ণনের উদ্যোগে অনলাইনে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল। ডাক্তারবাবু নিজে অবশ্য একটি টাকাও নেননি। র সাহায্যে গুলের করা হয়। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফসিন মাসকিউলার রোটেটরি কন্ডিশন নামে এক বিরল সমস্যায় ভুগছিল। ডাক্তার রাজগোপালন কৃষ্ণন পরপর চারটি জটিল অপারেশন করে তার ঘাড় সোজা করে দিয়েছেন। তবে এই অস্ত্রোপচারগুলিতে অত্যন্ত ঝুঁকি ছিল। আফসিনের ভাই ইয়াকুব কুম্বার বিবিসি নিউজকে বলেছেন, “ডাঃ কৃষ্ণন আমাদের বলেছিলেন যে, অপারেশনের সময় ওর হৃদপিণ্ড বা ফুসফুস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে তাঁর প্রচেষ্টা এবং তত্ত্বাবধানের কারণে, অপারেশন সফল হয়েছে।”
এখন আর আর পাঁচজন কিশোরীর থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না তাকে

সফল অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তার কৃষ্ণান জানিয়েছেন, সঠিক চিকিত্সা না হলে আফসিন বেশি দিন বাঁচত না। ডাক্তারবাবুর মতে, আফসিনের মতো ঘটনা, সম্ভবত বিশ্বে আগে কখনও ঘটেনি। তবে, ঘাড় সোজা হওয়ার পর আফসিনের মুখে হাসি ফিরেছে বলে জানা গিয়েছে। কথা বলতেও তার আর কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। পরিবারের সঙ্গে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে সে। তবে, ডা. কৃষ্ণনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। প্রতি সপ্তাহেই ভিডিয়ো কল করে, আফসিনের স্বাস্থ্যের খবরাখবর নেন ডাক্তারবাবু। আর আফসিনের ভাই ইয়াকুব কুম্বার কতথায়, “ডাক্তারবাবু আমার বোনের জীবন বাঁচিয়েছেন। আমরা খুব খুশি। উনি একজন ফেরেস্তা।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours