গত বছর অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বুকে দাঁড়িয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দাবি করেন, অটোকের মাটির নীচে নাকি গ্যাস ও তেলের ভাণ্ডার রয়েছে। শুধুই শেহবাজ নয়। পাকিস্তানের নানা সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন ঘুরে-ফিরে এসেছে এই তেলের ভাণ্ডারের কথা।
আমেরিকাকে 'তেল দিয়ে' কোন কাজ আদায় করতে চায় পাকিস্তান?
মধ্য জুন। ভারতের তখন মধ্যরাত। স্বাভাবিক নিয়মেই আমেরিকায় ভরা দুপুর। আর সেই দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাঁর বিপরীতে বসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। দু’জনের একান্ত বৈঠক। ওয়াকিবহাল মহল বলল, কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ভিন দেশের সেনাপ্রধানের আলাপ কার্যত বেনজির। আর যখন সেদেশের শীর্ষে একজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, তাও তাঁকে পেরিয়ে সেনাপ্রধানের বাড়তি ‘গুরুত্ব’ সত্যিই নাকি দেখা যায় না।
কিন্তু সেই বৈঠকের নির্যাস কি ছিল? তা আজও জানা সম্ভব হয়নি। তবে সেই বৈঠকের পর থেকে হওয়া কতগুলি ঘটনা ধীরে ধীরে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় থেকে যেন পর্দা সরিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে গত দু’দিনে ট্রাম্পের ঘোষণা ও তাতে ঝরে ঝরে পড়া পাক প্রীতি।
ভুরু খানিক সংকুচিত হয়েছে? সেটাই স্বাভাবিক। কারণ পাকিস্তানের তেলেই এখন ‘পা নরম’ হয়েছে ট্রাম্পের।
স্বপ্ন বুনছেন ট্রাম্প
গত বছর অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বুকে দাঁড়িয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দাবি করেন, অটোকের মাটির নীচে নাকি গ্যাস ও তেলের ভাণ্ডার রয়েছে। শুধুই শেহবাজ নয়। পাকিস্তানের নানা সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন ঘুরে-ফিরে এসেছে এই তেলের ভাণ্ডারের কথা।
একাংশের ধারণা, পাকিস্তানের বালোচিস্তান সংলগ্ন উপকূলবর্তী এলাকা, করাচি সংলগ্ন এলাকা ও পঞ্জাবের একাধিক এলাকায় মাটির নীচে তেলের ভাণ্ডার রয়েছে। এমনকি, ২০১৫ সালে আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে তারা দাবি করে যে পাকিস্তানের মাটির নিয়েছে ৯০০ ব্যারল তেল রয়েছে। তবে এটা যে সম্ভবনা সেই কথাটাও রিপোর্টে উল্লেখ করে সেই মার্কিন দফতর।
কিন্তু হঠাৎ করেই পাকিস্তানের মাটির নীচের তেল নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে কেন? কারণটা ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “আমরা ইতিমধ্য়ে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করে নিয়েছি। ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটন সেদেশের বিশালাকার তৈল ভান্ডারের উন্নতিতে যৌথভাবে কাজ করবে। বর্তমানে আমরা এমন একটা সংস্থা খুঁজছি, যারা আমাদের যৌথ উদ্যোগকে ভারসাম্যের সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলবে। কে জানে, ওরাই হয়তো একদিন ভারতকে তেল বিক্রি করবে।”
স্বপ্ন বুনছেন ট্রাম্প। যে স্বপ্ন আমেরিকা আগেও বুনেছিল ইরাক, আফগানিস্তানে। সেই স্বপ্নই আবার বুনছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তেলের স্বপ্ন। অন্য দেশের তেলে নিজেদের ভাঁড়ার বাড়ানোর স্বপ্ন।
স্বপ্নের বৃষ্টি কি হবে?
ট্রাম্প ‘স্বপ্ন’ দেখছেন। আমেরিকায় থাকা পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে ট্রাম্পের করা ‘বাণিজ্য চুক্তির’ কথা নিশ্চিত করেছে ইসলামাবাদের দূত। তিনি জানিয়েছেন, এই বাণিজ্যিক চুক্তি পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও শুল্ক কমাতে সাহায্য করবে।
স্বপ্ন সত্যি হবে? পাকিস্তানের মাটির নীচে তেলের ভান্ডার রয়েছে কিনা তা বিতর্কের বিষয়। কারণ এই নিয়ে না রয়েছে কোনও সরকারি বিবৃতি। না রয়েছে কোনও রিপোর্ট। যে টুকু রয়েছে, তা গোটাটাই সম্ভবনা। তবে আপাতভাবে এই তেলের ভান্ডারকে হাতিয়ার করে নিজেদের জন্য ট্যারিফের চাপ কমিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু কতক্ষণ?
এই তেলের ভান্ডারের একটা বড় অংশ নাকি রয়েছে বালোচিস্তান সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে ইতিমধ্য়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চিন। বিগত কয়েক মাসেই আগের তুলনায় আরও ভয়াবহ হয়েছে বালোচ লিবারেশন আর্মি। ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তানি সেনার উপর। নিজেদের স্বাধীন করতে অতিসক্রিয় হয়েছে তারা। যার প্রভাব পড়ছে চিনের উপরেও। কারণ, ওই এলাকা হয়ে নিজেদের চিনা বেল্ট অ্য়ান্ড রোডের কাজ করছে বেজিং। আর সেখানেই এত অতিসক্রিয়তার জেরে রীতিমতো কাজে বাঁধা পড়ছে তাদের। একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বালোচ নেতাদের সঙ্গে গোপনে বেশ কয়েকবার বৈঠক করে বেজিংয়ের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।
এবার সেই বালোচিস্তানেই নিজের স্বপ্নের তেলে ভান্ডার গড়ার কথা ভাবছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, বালোচিস্তানকেও হাতের মুঠোয় আনতে ট্রাম্পেই আস্থা ইসলামাবাদের। এবার যদি ধরেও নেওয়া যায়, পাকিস্তান ও আমেরিকার সব দাবি সত্যি। কিন্তু বালোচিস্তান? তাদের কীভাবে প্রতিহত করবেন ট্রাম্প? কীভাবে তাদের এড়িয়ে তেলের ভান্ডার তৈরি করবে মার্কিন সংস্থা? সেটাই এখন দেখার বিষয়।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours