এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। গত মে মাসেও একবার দুই দেশের সেনা ফের সংঘাতে জড়ায়। এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যু হয়েছিল এই সংঘাতে। তবে এবারের মতো ভয়ঙ্কর সংঘাত সাম্প্রতিক ইতিহাসে কখনও হয়নি।
মধ্য প্রাচ্যের সংঘাতের আঁচ এখনও নেভেনি, তার মধ্যেই আরও একটি সংঘর্ষ। এবার লড়াইয়ের ময়দানে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। পর্যটন কেন্দ্রিক দুই দেশই, বিদেশি পর্যটকই চালাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্বের কাছেও তারা পরিচিত শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে। তাহলে হঠাৎ কী হল যে রীতিমতো সামরিক বিমান, গোলা-বারুদ নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামল দুই দেশ? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই জেগেছে গতকালের সংঘাতের পর। তবে এর উত্তর কিন্তু লুকিয়ে আছে কয়েকশো বছর পিছনে।
বাড়ি তৈরি করলে দিতে হবে 'তোলা'! ভয়ঙ্কর পরিণতি বৃদ্ধের, অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে
টলিপাড়ার বিশিষ্টজনেদের উপস্থিতিতে ‘গৃহপ্রবেশ’-এর বিশেষ স্ক্রিনিং
বর্ষাকালে গলা খুশখুশ? ডাক্তারের কাছে ছোটার আগে কাজে লাগান 'হেঁশেলের হিরো'কে!
বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎই জানা যায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে বিমানহানা শুরু করেছে থাইল্যান্ড, দাবি সেনার। সরাসরি সেনা ক্য়াম্পেই হামলা করা হয়েছে। একটি বিমান কম্বোডিয়াতে হামলা করে সেনাঘাঁটি ধ্বংস করেছে বলে দাবি। আবার কম্বোডিয়ার ছোড়া রকেটে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। থাইল্যান্ডকে জবাব দিতে সুরিন প্রদেশে রকেট হামলা চালিয়েছে কম্বোডিয়া। সীমান্তে ৬টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে থাইল্যান্ড। দফায় দফায় এই সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে কম্বোডিয়ার দিক থেকে মৃত্যুর খবর মেলেনি।
এবার এই সংঘাতের সূচনা জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর। থাইল্যান্ডে যেমন প্রচুর বৌদ্ধ মন্দির আছে, তেমনই হিন্দু দেব-দেবীর মন্দিরও আছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ায় পর্যটকরা যান সেখানে থাকা অঙ্কোরভাট মন্দির থেকে শুরু করে একাধিক মন্দির।
শিব কার, লড়াই তা নিয়েই-
কম্বোডিয়ার দানগ্রেক পাহাড়ে অবস্থিত ৯০০ বছরের পুরনো প্রেয়া বিহার মন্দির। এটি শিবের মন্দির, খামের রাজত্বে তা তৈরি হয়েছিল। শুধুমাত্র কম্বোডিয়ার বাসিন্দারাই নন, থাইল্যান্ডের মানুষরাও এই মন্দিরে পুজো করতে আসেন। এই মন্দির থেকেই আবার ৯৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে তা মোন থম মন্দির। ১২০০ শতকে তৈরি হয়েছিল এই শিবের মন্দির।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত বিবাদ পুরনো। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের মধ্য়ে যে এলাকা রয়েছে, তা এমারেন্ড ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত। এখানে একাধিক প্রাচীন মন্দির রয়েছে। ‘পান্না ত্রিভুজ’ বা এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গেলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে থাকা এই মন্দিরের দখল ঘিরেই বারবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।
কম্বোডিয়া যখন ফরাসি আধিপত্য থেকে স্বাধীন হয়, তারপর দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত তৈরি হয়। তবে তা নিয়ে বিতর্ক, বিবাদ ছিল অনেক। পরিস্থিতি খারাপ হয় ২০০৮ সালে, যখন কম্বোডিয়া এই বিতর্কিত অংশে অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরকে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করার আবেদন জানায়। এতে আপত্তি জানায় থাইল্যান্ড।
আদালতের রায়-
১৯৬২ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস কম্বোডিয়ার পক্ষে রায় দেয়, থাইল্যান্ডের সেনা প্রত্য়াহার করতে বলা হয়। ১৯৫৪ সালের পর যা যা স্থাপত্য় মূর্তি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাও ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। থাইল্যান্ড প্রথমে এই সিদ্ধান্তে রাজি হলেও, পরে দাবি করে যে সীমান্ত নির্ণয়ে ভুল হয়েছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়েছিল সীমান্ত লাইন। তবে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস সেই দাবি খারিজ করে দেয়।
২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্য়ে সংঘাত বাধে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস তারপরও রায় বদল করেনি। বরং কম্বোডিয়ার ওই মন্দির ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাও তাদের অধীনে বলেই ঘোষণা করে। থাইল্যান্ডকে সেনা সরাতে বলে।
এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। গত মে মাসেও একবার দুই দেশের সেনা ফের সংঘাতে জড়ায়। এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যু হয়েছিল এই সংঘাতে। তবে এবারের মতো ভয়ঙ্কর সংঘাত সাম্প্রতিক ইতিহাসে কখনও হয়নি।
থাইল্য়ান্ডর দাবি, কম্বোডিয়ান সেনা ড্রোন ওড়াচ্ছিল ওই মন্দিরের আশেপাশে, থাই সেনার অবস্থান জানার জন্য। সেনা তাদের ফিরে যাওয়ার বার্তা দেয়, তবে তা হয়নি। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। থাইল্যান্ডের দাবি, আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালায়। অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার দাবি থাইল্য়ান্ডই সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।
সীমান্তবর্তী এলাকা ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৮৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার স্থানীয় বাসিন্দাদের। ব্যাঙ্কক থেকে দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে ফেলেছে কম্বোডিয়া। পাল্টা কম্বোডিয়া বহিষ্কার করেছে থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিদের। থাইল্যান্ডের অভিযোগ, ‘ওটাওয়া চুক্তি’ লঙ্ঘন করেছে কম্বোডিয়া। সীমান্তে লাগাতার আগ্রাসনের অভিযোগ কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে। সংঘাত আবহে থাইল্যান্ড তাদের দেশে কম্বোডিয়ার পর্যটকদের ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে। কম্বোডিয়া-ও পাল্টা থাই পর্যটক, জিনিসপত্র সে দেশে ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে। দুই দেশের সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে সেনা।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours