আসামে কামাখ্যা মন্দিরে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধা কে বাড়ী খুঁজে দিতে গঙ্গাসাগরে নিয়ে হ্যাম রেডিও কাছে হস্তান্তর।
সঞ্জিত দেবনাথ , সৎ মায়ের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে বাবা ৭ বছর বয়সেই মথুরা তে বড় ছেলের কাছে পাঠিয়ে দেন। বড় ছেলে তখন ছোট একটি দোকান চালাতো। এখন তার বড় হোটেল , ৪টি নিজের ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়। দাদার কাছে কিছু দিন থাকার পর বাড়ী ফিরতে চান সঞ্জিত । এক জানা পরিচিত ট্রাক চালকের সাথে ট্রাকে করে রাওনা দেন । রাস্তায় গুজরাট পুলিশ ধরে । বাচ্চা ছেলে পাচার হচ্ছে ভেবে আটক করে। রাখা হয় একটি বড় ঘরে । ঐ একই সঙ্গে ঘরে অনেক লোক। কেউ চোর, পকেটমার ইত্যাদি। শুধু খাওয়া দাওয়া আর ঘুম । কোনো রকমের কথা বলতে চাইলেই মার। এইভাবে ৬ বছর । তারপর ওখানকার আটকে থাকা অবস্থায় সকলেই বিছানার চাদর দিয়ে চেন তৈরী করে রাত্রি বেলায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে রাজস্থানের এক দোকানে কাজ নিয়ে ৩ বছর । তিন বছরে বুঝতে পারে ওটা আসলে চা দোকানের মালিক পিছনে গাজা চরস বিক্রী করে , তা পরে পুলিশকে বলে আটক করে। চোর পুলিশ ব্যবসায় ভালো ব্যবসা । ওখান থেকে পালিয়ে যায় এক ট্রাক চালকের সঙ্গে। বাড়ী ফিরে সৎ মা বিয়ে করতে বলে । পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে রঙের কাজ শুরু করে। বিয়ে করে ভালোই কাটছিল সময়। মাস দুই আগে কামাখ্যা যাবে ঠিক করে বন্ধুদের সাথে। বাড়িতে দুই ছেলে বৌ এর সাথে অশান্তি করে বেড়িয়ে আসে ।
কামরূপ কামাখ্যা মন্দিরের পথে বৃষ্টির কারণে এক বাড়ীতেই থাকে সবাই । অনেক পুনর্থী ছিল ওখানে । রাতেই ব্যাগ হারিয়ে ফেলে সঞ্জিত। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সকালে আলো ফুটলে পেয়ে যাবে ভেবে শুয়ে পরে। সকালে মন্দিরের লাইন দিতে বন্ধুরা সবাই চলে যায় , সঞ্জিত ঘুমিয়ে পরে। ভিড়ে আর পায়নি বন্ধুদের। রাস্তার ধারে এক চা দোকানে কাজ করে খাবার পাবে চুক্তিতে কাজ করতে থাকে । ওখানেই পুজা দিতে আসা চা দোকানের খরিদ্দার এক পুনর্থীর সাথেই বাংলায় ফেরে সঞ্জিত । ঐ পুণ্যার্থীর সাথেই আসে গঙ্গা সাগরে । তিনি নিশ্চিত ছিলেন সাগরের মেলায় হাজার হাজার মানুষকে বছরের পর বছর হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়, একেও পারবেই । তাই ওই সাগরের বাসিন্দাই এক স্থানীয় যুবকের জয়দেব শ্যামল ও মিলন মাইতির মাধ্যমে হ্যাম রেডিওর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের দিবস মন্ডলের কাছে খবর দেন। সেখান থেকেই বার্তা পাঠান হয় পুষ্পেন্দু মজুমদারের কাছে । নদিয়ার এস.ডি.ডি.এম. ও. সঞ্জয় মল্লিক এবং হ্যাম রেডিওর সদস্য পুস্পেন্দু মজুমদার ছেলে সুজিত দেবনাথ কে খুঁজে বের করেন । বাড়ী ৪ নম্বর ওয়ার্ড, নবদ্বীপ চটিরমাঠ, বনিকনগর, নদীয়া। দিবস সাগর থেকে ভিডিও কল করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলায়। আজ ছোটছেলে সুজিত দেবনাথ ও স্ত্রী সুমিতা দেবনাথ গঙ্গাসাগর থেকে গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানার ওসি পার্থ সাহা, হ্যাম রেডিওর সদস্য দিবস মণ্ডল-এর উপস্থিতিতে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরলেন বাড়ির ঠিকানায়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours