দিঘার মন্দির তৈরির পর থেকে নানা ভাবে সরব হয়েছে ওড়িশা সরকার। সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। মন্দির তৈরি হওয়ার পরক্ষণেই তো তারা সরব হয়েছিলেন কীভাবে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে 'ধাম' বলছে তৃণমূল সরকার? এই প্রশ্ন নিয়ে।


পুরীর গর্ভগৃহে ঢুকে পড়ল কপিরাইট, কাদের থেকে রক্ষা পেতে এত তৎপরতা?


পুজো ও কপিরাইট, এই দু’টি শব্দ একই সঙ্গে থাকার ক্ষমতা রাখে? মানুষ ধর্মযুদ্ধ দেখেছে। ধর্ম নিয়ে বিবাদও দেখেছে। কিন্তু ধর্ম সে কি কপিরাইটের অংশ হতে পারে? বিশেষ করে পুজো-অর্চনা। সেক্ষেত্রে কপিরাইট সম্ভব? উত্তর সময় দেবে। কিন্তু ভাবনা যে চলছে তা তো অস্বীকার করার নয়। ঈশ্বরও এবার ‘কপিরাইট ম্যাটার’।


জানা গিয়েছে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতির ‘কপিরাইট’ নিতে চায় ওড়িশা সরকার। গোটা বিষয়টাই এখনও আলোচনা পর্বে রয়েছে। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে এই ‘কপিরাইট’ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন খোদ পুরীর সাম্মানিক রাজা তথা জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান গজপতি মহারাজ দিব্যসিংহ দেব। তাঁর কথায়, মূলত পুরীর পুজো রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠানকে নিরাপদ ও বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা করতেই নাকি এই সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে মন্দির কমিটি। কিন্তু হঠাৎ করেই এই কপিরাইটের এখনই কি দরকার পড়ল? সাধারণ নিয়ম বলে, কোনও কিছু নকল হওয়া থেকে রক্ষা করতে এই কপিরাইটের ব্যবহার হয়। পুরীর মন্দির কিংবা তার পুজো রীতিনীতির নকল হল নাকি? প্রশ্ন এখন সেটাই।



বোলপুরে অরিজিৎ সিংয়ের গাড়ি আটকাল জনতার ভিড়, গায়কের সঙ্গে কী ঘটল?
দেবের সঙ্গে ছবি পোস্ট করলেন জ্যোতির্ময়ী, কী লিখলেন নায়িকা?
'যদি সন্তান থাকে, তাহলে...', কী কারণে মা হলেন না রেখা জানেন?
এই প্রশ্নটা বিতর্কিত। কারণ, দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি হওয়ার পর থেকে পুরীর মন্দির নিয়ে বাড়তি তৎপরতা দেখাতে শুরু করেছে সেখানকার মন্দির কমিটি। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, কপিরাইট ইস্যুটা সেই তৎপরতারই আরও একটি নজির। দিঘার মন্দির তৈরির পর থেকে নানা ভাবে সরব হয়েছে ওড়িশা সরকার। সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। মন্দির তৈরি হওয়ার পরক্ষণেই তো তারা সরব হয়েছিলেন কীভাবে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ‘ধাম’ বলছে তৃণমূল সরকার? এই প্রশ্ন নিয়ে।

মন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণপত্রের ছবি তুলে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, ‘এটি মন্দির নাকি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র? কারণ এর আমন্ত্রণ পত্রে লেখা রয়েছে জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র।’ এমনকি, নামের সঙ্গে ‘জগন্নাথধাম’ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একই প্রশ্ন শোনা গিয়েছিল ওড়িশা সরকারের মুখেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্দিরের নাম ‘পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে’ বলে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। এবার সেই ‘ধাম’ প্রসঙ্গে সরব সাম্মানিক রাজাও। রবিবার তিনি আপত্তি তুলে বললেন, ‘দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে জগন্নাথ ধামের আখ্যান দিচ্ছে ইসকন। বছরের যখন-তখন রথযাত্রা ও স্নানযাত্রা পালন করছে। এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে জগন্নাথ ভক্তদের উদ্বিগ্ন করছে। এটা আমাদের ধর্মগ্রন্থ ও প্রাচীন ঐতিহ্যের উপর আঘাত।’

শুধু পুজো রীতিনীতিতেই কপিরাইট নয়। ধাম-বিবাদও মেটাতে চায় পুরীর কর্তৃপক্ষ। মাস কতক আগেই জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাধি জানিয়েছিলেন, এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নাম নিয়ে স্বত্ব আবেদনের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ খুব শীঘ্রই হয়তো ‘জগন্নাথধাম’ এই নামেও কপিরাইটের দাবি করতে পারে পুরীর মন্দির কমিটি। মুখ্য প্রশাসক বলেছিলেন, ‘জগন্নাথ মন্দিরের পবিত্রতা, ঐতিহ্য এবং অনন্য পরিচিতিকে সংরক্ষণ করতে আইনি পথে মন্দির-সম্পর্কিত শব্দগুলিকে বাছবিচারহীন ভাবে ব্যবহার থেকে আটকাতে হবে। যা এই সময় অত্যন্ত জরুরি।’

বস্তুত, পুরী-দিঘার এই অলিখিত সংঘাত যে শুধুই ধাম বা স্বত্ব নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে এমনটা নয়। দিঘায় মন্দির তৈরি হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত যা অনুষ্ঠান হয়েছে, সবটাই মিশে রয়েছে বিতর্কের রঙ। মন্দির তৈরির পর পুরীর এক সেবায়েত দাবি করেছিলেন, পুরীতে জগন্নাথের নবকলেবর নির্মাণের পরে যে নিমকাঠ উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত ছিল, তা দিয়ে দিঘার মন্দিরের জন্য বিগ্রহ তৈরি হয়েছে। এরপরই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। রাজ্যে আসরে নামে দুই শিবির। তদন্ত শুরু হয় পুরীর মন্দিরেও। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিমকাঠ চুরির অভিযোগ তোলে বঙ্গ বিজেপি। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ‘ওড়িশায় আলুর টান বাংলা জোগায়। ঝড়-বাদলে তাদের পাশে দাঁড়াই আমরা। বাংলার পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি পুরীর মন্দিরে যান রথ ও উল্টোরথে। আমরা যদি একটা জগন্নাথধাম তৈরি করি, আপনাদের আপত্তির কী আছে?’ অবশ্য, সেই নিমকাঠ বিতর্কে বেশিদিন দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে থাকতে হয়নি রাজ্যকে। দিন কতক পরে মন্দির প্রশাসনের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ওড়িশার মন্ত্রী হরিচন্দন জানান, নবেকলেবরের উদ্বৃত্ত কাঠ দিয়ে দিঘার মন্দিরের বিগ্রহ নির্মিত হয়নি।

তবে নিমকাঠ বিতর্ক পিছু ছাড়লেও, মাস কয়েকের মধ্যে তাতে নতুন সংযোজন হয় প্রসাদ বিতর্ক। দিঘার মন্দির উদ্বোধনের সময় হওয়া পুজোর প্রসাদ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যজুড়ে বিলির নির্দেশ দিলে, তার পাল্টা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বিলি করতে দেখা যায় শুভেন্দুকে। অর্থাৎ যখনই একদিকে দিঘার জগন্নাথ মন্দির, তখনই ঠিক তার উল্টো পিঠে ঠাঁই পেয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দির। বিতর্কই যেন তৈরি করেছে দূরত্ব। তাতে নতুন সংযোজন ‘কপিরাইট’।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours