গত ৪ মাসে সব মিলিয়ে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এতে সুদের হার কমেছে ১ শতাংশ। কিন্তু বারবার কেন সুদের হার কমাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক?



 ৪ মাসে রেপো রেট কমেছে ১০০ বেসিস পয়েন্ট, কী চাইছে RBI?


ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ থেকে জুন মাসের ৬ তারিখ। ৪ মাসের মধ্যে ৩ বার রেপো রেট কাটছাঁট করেছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হওয়ার পরই প্রথমবারের জন্য রেপো রেট কাট করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসের ৯ তারিখ ফের রেপো রেট কাট দেখতে পাই আমরা। আর শেষবার জুনের ৬ তারিখ একেবারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয় রেপো রেট।

উল্লেখ্য, যে সুদের হারে দেশের অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলোকে টাকা ধার দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, তাকেই বলা হয় রেপো রেট। গত ৪ মাসে সব মিলিয়ে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এতে সুদের হার কমেছে ১ শতাংশ। এর ফলে, হোম লোন বা অন্যান্য কিছু লোন যে সব গ্রাহকরা নিয়েছেন বা আগামীতে নিতে চলেছেন, কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন তাঁরা। আরবিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী রেপো রেট কমলে তার ৩ মাসের মধ্যে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোকেও তাদের সুদের হার কমাতে হয়।

কিন্তু বারবার এই রেট কাট, কী চাইছে RBI?

প্রথমত, দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা

রেপো রেট কমলে কম সুদে ঋণ নিতে পারেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষ কম সুদে ঋণ পেলে তাঁদের মধ্যে খরচের প্রবণতা বাড়বে। আর তেমন হলে বাড়বে দেশের জিডিপি-ও।
এই কারণে, রেপো রেট কমলে ব্যাঙ্কগুলো ঋণে সুদের হার কমানোর পাশাপাশি ফিক্সড ডিপোজিট, রেকারিং ডিপোজিটের মতো সঞ্চয় প্রকল্পের সুদও কমিয়ে দেয় যাতে মানুষ সঞ্চয় কম করে ও তার বদলে খরচ বা বিনিয়োগে নজর দেয়।
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক স্লোডাউনের মোকাবিলা করা

৪ মাসের মধ্যে রেপো রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানোয় এটা বোঝা যায় দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমতে থাকা নিয়ে চিন্তিত আরবিআই।
দেশে উৎপাদন কমে যাওয়া, চাহিদা কমে যাওয়া বা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার মতো ইঙ্গিত পেলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমন পদক্ষেপ করতে পারে।
তৃতীয়ত, সস্তা ঋণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, আবাসন, কৃষি ও পরিকাঠামো খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এর ফলে এই খাতে কর্মসংস্থান বাড়বে। আর এতে আখেরে উন্নতি হবে দেশের অর্থনীতির।

চতুর্থত, রেপো রেট কমানোয় সহজে ঋণ পাবেন সাধারণ মানুষ। আর এতে মানুষের হাতে টাকা থাকবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য কী?

কেন্দ্রীয় সরকার চায় দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে। রেপো রেট কমায় কম সুদে বড় বড় প্রজেক্টের জন্য ব্যাঙ্কগুলো থেকে ঋণ পাবে সরকার। এ ছাড়াও কম সুদে ঋণ ব্যবসা থেকে বেসরকারি খাত, দেশে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থানে উৎসাহ দেয়।

শুধুমাত্র রেপো রেট কাট হলেই কি অর্থনীতিতে গতি আসে?

অর্থনীতিবিদ সুপর্ণ পাঠক বলছেন, “আরবিআই রেপো রেট বাড়ালে ঋণের চাহিদা কমবে। ঋণের চাহিদা কমলে, বাজারে নগদের জোগানও কমবে। নগদের জোগান কমায়, কমবে পণ্যের চাহিদা। আর তাতে কমবে মুদ্রাস্ফীতি। আর এই ভাবেই মুদ্রাস্ফীতির উপর একটা হ্রাস টানার চেষ্টা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। আরবিআই সব সময় চেষ্টা করে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে। কারণ একটা লেভেল পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি হলে তাতে গতি পায় অর্থনীতি, লাভ হয় বাজারেরও। কারণ, সেই ক্ষেত্রে সুদের হার এমন একটা জায়গায় থাকে যাতে ঋণ দাতা ব্যাঙ্ক ও ঋণ গ্রহীতার মধ্যে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাপার থাকে। আর মানুষ খরচও করে।”

বাজারকে কী বার্তা?

রেপো রেট কমলে ঋণ পাওয়া সহজ হয়। এর ফলে, বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। এর ফলে, ভারতের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রবেশ করার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। ঋণের ইএমআই কমায় রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ বাড়ে। ফলে চাঙ্গা হয় ওই সেক্টর।

কী বলছেন অর্থনীতিবিদ?

অর্থনীতিবিদ সুপর্ণ পাঠক বলছেন, “বাজারের চাহিদাটাকে চাগাড় দিতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সুদের হার কমানোর রাস্তায় হেঁটেছে। আর এতে বাড়বে চাহিদা। তাতে গতি পেতে পারে দেশের অর্থনীতি।”

কিন্তু আমেরিকায় ফেড রেট কাট হলে কেঁপে যায় গোটা বিশ্বের বাজার। কিন্তু পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতে রেপো রেট কাটের তেমন কোনও প্রভাব পড়ে না বিশ্ব বাজারে। এমন কেন হয়? “আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও বিকিকিনি হয় ডলারে। টাকা এখনও সেই জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। আর সেই কারণেই রেপো রেট কাটের প্রভাব বাইরের বাজারে খুব বেশি পড়ে না।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours