কাশ্মীরের চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদীর উপর তৈরি চেনাব রেল ব্রিজ পৃথিবীর উচ্চতম রেল ব্রিজ ও আর্চ ব্রিজ। কাশ্মীরের অর্থনীতি থেকে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সর্বত্রই প্রভাব রাখবে এই ব্রিজ।


কাশ্মীরের 'গেম চেঞ্জার' চেনাব রেল ব্রিজ! কীভাবে?



এপ্রিল মাসে ২২ তারিখ, ভারত ও কাশ্মীরের ইতিহাসে এক কালো দিন। পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় ভারতীয় পর্যটকদের নাম, ধর্ম জিজ্ঞাস করে তাদের গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি জঙ্গিরা। পাকিস্তান ভেবেছিল এইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করবে। আর যার প্রভাব পড়বে কাশ্মীর থেকে ভারতের অর্থনীতি, সর্বত্র। কিন্তু পাকিস্তান তাদের এই নোংরা খেলায় সফল হয়নি। তারপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর লঞ্চ করে ভারতীয় সেনা। আর সেই অপারেশনের মধ্যেই পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ফেলা হয়।


পাকিস্তানের এই চক্রান্ত সফলভাবে যখন রুখে দিয়েছে ভারত। তখনই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে আসমুদ্র হিমাচল। বিরোধী দলগুলোও দেশের নিরাপত্তার ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিঃশর্ত ভাবে সমর্থন করেছে। আর অপারেশন সিঁদের সঙ্গে সঙ্গেই যে কখন কাশ্মীরে ‘অপারেশন উন্নয়ন’ শুরু হয়ে গিয়েছে, তা বুঝতেও দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

কাশ্মীরিরাও বলছেন গত কয়েক বছরে উপত্যকায় শান্তি ফিরে এসেছিল। আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল হওয়ার পর কাশ্মীরে উন্নয়নের জোয়ার এসেছিল। উপত্যকা শান্ত হয়ে যাওয়ায় সেখানে ভিড় বাড়াতে শুরু করেছিল পর্যটকরা। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের হাতে টাকা আসতে শুরু করেছিল। আর কাশ্মীরের এই উন্নয়নেই ঈর্ষায়িত হয় পাকিস্তান। কাশ্মীরের অর্থনীতিকে একেবারে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা।

তবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে ফের জোয়ার আসতে চলেছে কাশ্মীরের অর্থনীতিতে। ৬ জুন, ২০২৪ কাশ্মীরের চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদীর উপর তৈরি চেনাব রেল ব্রিজ উদ্বোধন করলেন তিনি। এই রেলব্রিজ ২৭২ কিলোমিটার লম্বা ‘উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক’ প্রকল্পের অধীনে তৈরি হচ্ছিল। এই ব্রিজ তৈরি হয়ে যাওয়ায় কাশ্মীর উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে ভারতীয় রেল।

কাশ্মীরের চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদীর উপর তৈরি চেনাব রেল ব্রিজ পৃথিবীর উচ্চতম রেল ব্রিজ ও আর্চ ব্রিজ। কাশ্মীর উপত্যকার অর্থনীতিতে জোয়ার আনতে পারে এই ব্রিজ। এ ছাড়াও এই ব্রিজ ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নেও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চেনাব রেল ব্রিজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

জম্মু কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় তৈরি হয়েছে এই চেনাব রেল ব্রিজ। নদীখাত থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচুতে রয়েছে এই ব্রিজ। উচ্চতার বিচারে যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু।
‘উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক’ প্রকল্পের অধীনে এই ব্রিজ তৈরি হয়েছে যা কাটরা ও বানিহালকে সংযুক্ত করছে।
এই ব্রিজ কাশ্মীর উপত্যকাকে বাকি দেশের রেল ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
কাশ্মীর উপত্যকায় অর্থনৈতিক প্রভাব

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এই ব্রিজ তৈরি হওয়ায় কাশ্মীরের বারামুলা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। যার ফলে জম্মু থেকে শ্রীনগর বা বারামুলা যেতে আসতে আগের তুলনায় অনেক কম সময় লাগবে। এ ছাড়াও কাশ্মীরের মতো দুর্গম এলাকায় রাস্তা দিয়ে যাওয়া অনেক বেশি কষ্টসাধ্য ও খরচ সাপেক্ষ। ফলে ট্রেন যোগাযোগ সেখানে অত্যন্ত সফল হবে। এ ছাড়াও বরফ পড়ে অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেনের ক্ষেত্রে সেই অসুবিধা হবে না। ফলে, অতি সহজেই কাশ্মীরের মানুষ থেকে ব্যবসায়ী তাদের কাজ করতে পারেবন। ফলে, উন্নতি হবে সমগ্র কাশ্মীরের।
পর্যটনে উন্নতি কাশ্মীরে ট্রেনে করে পৌঁছানোর সুবিধা মেলায় সেখানে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে। এ ছাড়াও ট্রেনের খরচ কম হওয়ায় অনেক সস্তায় মধ্যবিত্ত পর্যটকরাও সেখানে পৌঁছতে পারবে। আর এর ফলে কাশ্মীরের হস্পিটালিটি, ট্রাভেল সার্ভিস, হ্যান্ডিক্র্যাফট ও পর্যটন সেক্টরের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি হবে।
কৃষিজ পণ্য ও ফল রফতানিতে সুবিধা কাশ্মীর থেকে আপেল, আখরোট, জাফরান ও ড্রই ফ্রুটস খুব সহজেই গোটা দেশ ও বিশ্বের বাজারে ছড়িয়ে পড়বে। এর ফলে, জিনিস নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিমাণ কমভে। আখেরে লাভবান হবেন কৃষকরাই।
কর্মসংস্থান ও স্থানীয় ব্যবসার প্রসার চেনাব ব্রিজ তৈরির সময় বেশ কিছু কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এবার সেই ব্রিজকে ব্যবহার ও তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে আরও বেশ কিছু কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও ট্রেন চলাচলের ফলে উন্নত লজিস্টিক্স স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আরও উদ্বুদ্ধ করবে।
ইস্যু যখন দেশের নিরাপত্তা বারামুলা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করলে সেই ট্রেনে খুব সহজেই মিলিটারি মুভমেন্ট হতে পারবে। এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
তবে, শুধুমাত্র এই ব্রিজ একা হাতে কাশ্মীরের অর্থনীতিকে তুলে ধরতে পারবে এমন নয়। কাশ্মীর বা যে কোনও জায়গার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়। যার মধ্যে রয়েছে সেই জায়গার রাজনৈতিক ও সামাজিক শান্তি, সেই জায়গায় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ, সরকারি নীতি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এটাও ঠিক যে, কাশ্মীরের উন্নতির জন্য চেনাব রেল ব্রিজ অবশ্যই একটা ‘গেম চেঞ্জার’। এই ব্রিজ কাশ্মীর উপত্যকাকে বাকি দেশের রেল ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করেছে। এবার এর সঙ্গে উপত্যকায় শান্তি ও পর্যটক একসঙ্গে ফিরলে খুশিতে ঝলমল করবে ভূস্বর্গ।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours