ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মক ড্রিল কিন্তু খানিকটা সাধারণ ব্যাপারই। শুধু যুদ্ধই নয়, যে সকল এলাকায় যে বিপদের আশঙ্কা বেশি, সেখানেই তা এড়াতে নাগরিক ও প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুত রাখে কেন্দ্র।


সাইরেন, অন্ধকার..., আপনার পাড়ায় কীভাবে চলবে মক ড্রিল?
প্রতীকী ছবি


রাত পোহালেই মহড়া। পহেলগাঁও হামলার পর থেকে সাধারণের কাছে এই বাক্যটা যেন প্রতিদিনের। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রতিদিনই সামরিক মহড়া চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। কিন্তু বুধের মহড়া একটু অন্য় রকম। এটা সেনার জন্য নয়। সাধারণের জন্য।

ভারত-পাকিস্তানের আবহাওয়া যে রকম বিষিয়ে গিয়েছে, যদি সত্যি যুদ্ধ লাগে তা হলে নাগরিক কর্তব্য কী? প্রশাসনই বা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে? সেই সব প্রশ্নের জট মুছে দিতে আপৎকালীন মহড়া সেরে রাখতে দেশের সব রাজ্যকে নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই সূত্র ধরেই আগামিকাল অর্থাৎ ৭ই মে ওই মহড়া বা মক ড্রিলের দিন ধার্য করা হয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নাগরিকদের উপর যেন কোনও আঁচ না পড়ে, ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব সামাল দেওয়া যায়, সেই সব বিষয়কে মাথায় রেখেই আগেভাগে প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি দেশে বিমান হামলা কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তাও সেখানো হবে এই মক ড্রিলে।

শুধু যুদ্ধের প্রস্তুতিতেই কি মক ড্রিল হয়?

ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মক ড্রিল কিন্তু খানিকটা সাধারণ ব্যাপারই। শুধু যুদ্ধই নয়, যে সকল এলাকায় যে বিপদের আশঙ্কা বেশি, সেখানেই তা এড়াতে নাগরিক ও প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুত রাখে কেন্দ্র। কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শঙ্কা থাকলেও কিংবা নিরাপত্তা নিয়ে সীমান্ত এলাকায় ভয়। জনগণকে রক্ষা করতেই আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখার পদ্ধতিই হল মক ড্রিল বা মহড়া।

দেশের কোথায় কোথায় হবে মক ড্রিল?

দেশের প্রতিটি রাজ্য মিলিয়ে মোট ২৫৯টি জায়গায় হতে চলেছে এই মক ড্রিল। যার মধ্যে বিশেষ নজর থাকবে অসম, গুজরাট, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, নাগাল্যান্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং বাংলায়। এই রাজ্যগুলি সীমান্তবর্তী বা তার অদূরে হওয়ায় এই সব জায়গায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বিপদের আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই সেই ‘কালো মেঘ’ ঝোড়া হাওয়া শুরু করার আগে আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখতে চায় কেন্দ্র।

বাংলার কোথায় কোথায় হবে মহড়া?

বাংলার ৩০ এলাকায় আগামিকাল চলবে এই মহড়া। ব্ল্যাক আউট হলে কী করণীয়, সেই নিয়ে মক ড্রিল চলবে কলকাতাতেও। তবে সব থেকে বেশি মক ড্রিল চলবে উত্তরবঙ্গে। সাধারণ ভাবেই, নানা সময় সন্ত্রাসবাদীদের ট্রানজিট রুট এই উত্তরবঙ্গই হয়ে থাকে, সেই ভিত্তিতেই বাংলার ‘মাথায়’ বেশি জোর দিচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদা, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট, ফারাক্কায় হবে মক ড্রিল। এছাড়াও, গ্রেটার কলকাতা, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাসিমারা, খড়্গপুর, আসানসোল, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা-সহ হাওড়া, হুগলির একাধিক এলাকায় চলবে মহড়া।

ভারতে প্রথম কবে হয় মক ড্রিল?

ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের দ্বারা মক ড্রিল করানো হত ঠিকই। তবে সেটা কিছু কিছু এলাকায়। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে মোট দু’বার মক ড্রিল হয়। একবার ইন্দো-চিন যুদ্ধের সময়। আর একবার হয়েছিল একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত-পাকিস্তান হাতাহাতির আগে। এই প্রসঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন শিলিগুড়ির নিধুভূষন দাস।

এদিন টিভি৯ বাংলাকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে হওয়া মক ড্রিলের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘সেই সময় আমি ক্লাস সিক্সের ছাত্র। যে টুকু মনে পড়ে, দেখেছিলাম মাথার উপর পাক খাচ্ছে শত্রু বিমান। ঘনঘন বাজছে সাইরেন। সেই সময় আমাদের শেখানো হয়েছিল এমন সঙ্কটকালে কীভাবে আত্মরক্ষা করতে হয়, কীভাবে সুড়ঙ্গ হয়ে পালাতে হয়। এছাড়াও, শেখানো হয়েছিল গোটা এলাকা ব্ল্যাক আউট হয়ে গেলে কোনও মতেই আলো জ্বালানো যাবে না। থাকতে হবে অন্ধকারে।’


নিধুভূষন দাস

আগামিকালের মক ড্রিলে কী কী হবে?

বাজবে যুদ্ধ বিমান আকাশে ওড়ার সময় অশনি সংকেত দেওয়া সাইরেন।
কীভাবে রেডিয়ো কমিউনিকেশনের করা হয়ে থাকে।
কন্ট্রোল রুম থেকে সব কীভাবে পরিচালনা হয়।
শত্রুপক্ষের আক্রমণের আগেই নিজেদের রক্ষা করার জন্য প্রশিক্ষণ।
স্কুল, অফিস, কমিউনিটি সেন্টারে হবে ওয়ার্কশপ। হামলা হলে, কাছাকাছি আশ্রয়স্থল কীভাবে খুঁজে বের করতে হবে, তা শেখানো হবে। হামলার মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করা, প্রাথমিক চিকিৎসা করাও শেখানো হবে।
মিলিটারি বেস, পাওয়ার প্লান্ট বা গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিংগুলি এমনভাবে ঢেকে দেওয়া হবে, যাতে স্যাটেলাইটে ধরা না পড়ে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শেখানো হবে, কীভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালাতে হয়, কীভাবে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয় সাধারণ মানুষকে।
হঠাৎ ব্ল্যাকআউট বা অন্ধকার হয়ে যাবে শহর। নিভে যাবে সব আলো। রাতের অন্ধকারে কোনও এয়ার স্ট্রাইক হলে এই কৌশল নেওয়া হয়। ৭১-এর যুদ্ধের সময় এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours