সত্যি কি পুরুষরা শিলাজিত খেলে বিছানায় সিংহের মতো হয়ে ওঠেন?



শিলাজিত! নামটা নিশ্চয় অনেকেই শুনেছেন। শক্তি বা স্ট্যামিনা বাড়াতে, ক্লান্তি কমাতে নাকি সাহায্য করে। অনেকে তো একে যৌনশক্তিবর্ধক বলেও দাবি করে থাকে। ভিন রাজ্যের পাহাড়ে, যেমন মানালি বা নৈনিতালের মতো হিলস্টেশনে বেড়াতে গেলে ব্যবসায়ীরা খানিকটা কয়লার মতো দেখতে এই শিলাজিত পর্যটকদের বিক্রির চেষ্টা করেন। এখন অবশ্য আর লুকিয়ে চুরিয়ে নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে রীতিমতো ডিজিটাল মার্কেটিং করে দেদার বিক্রি হচ্ছে শিলাজিত। কিন্তু আসলে কী এই শিলাজিত? সত্যিই কি কাজ করে? করলে কী কাজ করে? কাদের নেওয়া উচিত? কাদের উচিত নয়?


শুরুতেই বলি, কী এই শিলাজিত? বিশেষজ্ঞরা বলেন, হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে পচে যাওয়া প্রাচীন গাছগাছড়ার অবশিষ্টাংশ, যখন প্রচণ্ড চাপ ও তাপের ফলে পাথরের ফাটল থেকে কালো রঙের আলকাতরা মতো বাইরে বেরিয়ে এসে শুকিয়ে চটচটে কালো পিচের মতো আকার ধারণ করে তখন তাকে শিলাজিত বলে। হিমালয়ের কোল ছাড়াও নেপাল, ভুটান, গিলগিট-বাল্টিস্তান এবং তিব্বতের পর্বতেও শিলাজিত মেলে। প্রচুর জৈব পদার্থ, খনিজ মিশে থাকায় এটি বহুগুণ সমৃদ্ধ বলে মনে করেন আধুনিক ফিটনেস কোচেরা। আয়ুর্বেদ ও ইউনানিতেও শিলাজিতের বহুল ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের শরীরে বহু সমস্যায় মিরাক্যালের মতো এই শিলাজিত কাজ করে বলে দাবি করেছেন দুবাইতে বসবাসকারী দিল্লির হেলথ কোচ ঈশানকা ওয়াহি।




তাঁর বক্তব্য মোতাবেক, যে সব মহিলাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হয়, পিরিয়ডের সময় মুড সুইং বা পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় তাদের জন্য শিলাজিৎ নেওয়া অত্যন্ত উপকারী। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে, স্ট্রেস কমাতে, অমনোযোগী মনকে ফোকাস করতে, মহিলাদের মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা কমাতে, এমনকী শিলাজিতের মধ্যে থাকা মিনারেলস ও ফলভিক অ্যাসিড চুল, ত্বক ও হাড়ের বয়স কমাতেও সাহায্য করে।

এবার প্রশ্ন হল, পুরুষদের জন্য কতটা উপকারী শিলাজিত? ডক্টর মিকি মেহতা জানাচ্ছেন, শিলাজিত স্পার্ম কাউন্ট বাড়ায়। প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধ করে। টেস্টোস্টেরোন বাড়ায়। বাড়ায় স্ট্যামিনাও। শরীরকে তরতাজা রাখে ও ক্লান্তভাবের হাত থেকে রক্ষা করে। খারাপ কোলেস্টোরল কমায়। মেন্টাল ফ্যাটিগ বা মানসিক ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। তবে শিলাজিত নেওয়ার জন্য তার বিশুদ্ধ হওয়াটা জরুরি। পাশাপাশি আয়ুর্বেদ মতে ডোজ ও বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানও বাধ্যতামলূক, দাবি ডক্টর মেহতার। তবে বলিউড স্টার থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা ক্যামেরার সামনে এসে যে সব দাবি করেন, সেগুলি সকলের শরীরে একইরকম প্রভাব নাও ফেলতে পারে। ২০১৬-র একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে ঈশানকা ওয়াহি বলছেন, যে সব পুরুষরা টানা ৯০ দিন যাঁরা বিশুদ্ধ শিলাজিত ‘পিল’ বা ‘ট্যাবলেট’ আকারে নিয়েছেন, তাঁদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ২৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

শিলাজিতের এত গুণের কারণেই দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও এখন এর রমরমা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি সংস্থা ১৫ গ্রাম পিছু শিলাজিৎ ৩৭০০ টাকায় বিক্রি করে শিরোনামে উঠে আসে। আজ ভারতের নানা জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গ্রাহকদের শিলাজিত নিতে উৎসাহিত করেন। জানলে অবাক হবেন, পশ্চিমি দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি শিলাজিত ভারত থেকেই রপ্তানি হয়। শিলাজিতের পাশাপাশি অশ্বগন্ধা, নিম ও তুলসি নিয়েও এখন উৎসাহ দেখাচ্ছে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলি।



তবে খেয়াল রাখতে হবে কাদের এটি নেওয়া উচিত নয়। ডক্টর মেহতার দাবি অনুযায়ী, গর্ভবতী মহিলা বা যাঁরা শিশুকে স্তন্যপান করান, সেই মহিলাদের, যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি, যাঁদের কিডনি বা লিভারের সমস্যা রয়েছে তাঁরা শিলাজিত নিলে ফল হিতে বিপরীত হতে পারে। শুধু তাই নয়, ভেজাল শিলাজিত উপকার তো করেই না বরং ক্ষতি করতে পারে। নিলে অ্যালাৰ্জি, rash, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

(এটি একটি সচেতনতামূলক কপি। কোনও বিজ্ঞাপন নয়। যে কোনও ওষুধ নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours