দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে বিজেপির সংগঠন সামলালেও, এতটাই লো-প্রোফাইলে থাকেন ভজনলাল, যে রাজ্যের বাইরে তাঁর সেভাবে পরিচিতিই নেই। তাই, সকলকে চমকে দিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁর নাম রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার পর, অনেকের মনেই জেগেছে প্রশ্ন, কে এই ভজনলাল শর্মা?

 কে এই ভজনলাল শর্মা? এক নজরে চিনে নিন রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে
দুই ডেপুটির সঙ্গে রাজস্থানের নয়া মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা (এখনও শপথ গ্রহণ হয়নি)

জয়পুর: প্রত্যাশা মতোই ছত্তীসগঢ় এবং মধ্য প্রদেশের পর, রাজস্থানেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এক নতুন মুখ বেছে নিল বিজেপি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, অশ্বিনী বৈষ্ণব, ‘রাজস্থানের যোগী’ হিসেবে পরিচিত বাবা বালকনাথদের মতো নেতাদের নাম ছিল মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে।

 কিন্তু, শেষ পর্যন্ত রাজস্থানেও এক তুলনামুলকভাবে লো-প্রোফাইল নেতাকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিল বিজেপি। বসুন্ধরা রাজেই এদিন রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমনত্রী হিসেবে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ভজনলাল শর্মার নাম ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে বিজেপির সংগঠন সামলালেও, এতটাই লো-প্রোফাইলে থাকেন ভজনলাল, যে রাজ্যের বাইরে তাঁর সেভাবে পরিচিতিই নেই। তাই, সকলকে চমকে দিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁর নাম রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার পর, অনেকের মনেই জেগেছে প্রশ্ন, কে এই ভজনলাল শর্মা?

২০২৩ সালের নির্বাচনেই প্রথম নির্বাচনী রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয় ভজনলাল শর্মার। তাঁর বাড়ি জয়পুরের জওহর সার্কেলে। তবে, তিনি মূলত ভরতপুরের বাসিন্দা। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে, তাঁকে প্রথমবার বিধায়ক প্রার্থী হিসেবে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। তবে, ভরতপুর থেকে নয়, তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল জয়পুরের সাঙ্গানার আসন থেকে। আসলে বরতপুরে বিজেপির শক্তি তুলনামূলকভাবে কম। সেই দিক থেকে সাঙ্গানার আসনে বিজেপি জয় এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। সাঙ্গানারের মতো নিরাপদ আসন তাঁকে প্রার্থী করায়, বোঝা যায়, প্রথম থেকেই সম্ভবত তাঁকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল গেরুয়া শিবিরের। তাই সাঙ্গানার আসনের জয়ী বিজেপি বিধায়কের বদলে, তাঁকেই টিকিট দেওয়া হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন ভজনলাল, সেই হলউনামা অনুযায়ী, তাঁর বয়স বর্তমানে ৫৬ বছর। এই বছর প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, নেপথ্য থেকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বিজেপির উচ্চবর্ণের এই নেতা, পরপর চারবার রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, রাজস্থানে দলের যে কোনও কর্মকাণ্ডে তিনিই ছিলেন সবথেকে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। উচ্চবর্ণের নেতা হওয়াও তাঁর সাঙ্গানার আসন থেকে প্রার্থীপদ পাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত। তাঁর জিততে কোনও অসুবিধাই হয়নি। কংগ্রেস প্রার্থী পুষ্পেন্দ্র ভরদ্বাজকে তিনি ৪৮,০৮১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।

বিজেপির সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে থেকেই অবশ্য তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯৩ সালে জয়পুরের রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন তিনি। ছাত্র জীবনেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন, আরএসএস-এর ছাত্র শাখা, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-র সঙ্গে। এবিভিপি এবং আরএসএস-এর ঘর থেকেই বিজেপির সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি, তিনি শ্রী কৃষ্ণ কানহাইয়া অ্যান্ড কোম্পানি নামে এক সংস্থার মালিক। ভারত সরকারের রেল মন্ত্রকের বেতনভুক কর্মচারীও বটে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি। এছাড়া, ঋণ রয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকার।

ভজনলাল শর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের পাশাপাশি, দিয়া কুমারী এবং ডঃ প্রেম চাঁদ বৈরওয়াকে উপমুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। মজার বিষয়, ভজনলাল শর্মা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের আর, দিয়া কুমারী রাজপুত। অন্যদিকে, প্রেম চাঁদ বৈরওয়াকে তফসিলি জাতির প্রতিনিধি।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours