কুর্সি কি পেটি বাঁধ লিজিয়ে, মৌসম বিগড়নে ওয়ালা হ্যায়!’ ঠিক ধরেছেন। এটা তো ‘পাঠান’ ছবির মোস্ট পপুলার ডায়ালগ। 


তবে যারা প্রায়ই বিমানে সফর করেন, তাদের কাছে এই ঘোষণাটা বেশ চেনা। কারণ মাঝ আকাশে মাঝেমধ্যেই খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিমানে অল্পবিস্তর ঝাঁকুনি অনুভব করেন যাত্রীরা। তবে সেটা কয়েক মিনিটের জন্যই। পাইলট ঘোষণা করেন, বাইরে আবহাওয়া অনুকূল নয়, আপনি সিটবেল্ট পরে থাকুন। কিছু পরেই ফের বলা হয়, এখন আমরা প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে এসেছি। আপনি সিটবেল্ট খুলে বসতে পারেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিমানগুলিকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বিমানে উঠতে ভয় পান। শুধু ভয় নয়, বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যার মধ্যেও পড়েন। তাদের কাছে এই ঝাঁকুনি বেশ আতঙ্কের। তবে এবার তাঁদের জন্য খারাপ খবর রয়েছে। একথা প্রায়ই জানা যায় যে, কোনও বিমানে এই ঝাঁকুনি জেরে যাত্রীরা সিটবেল্ট বাঁধার পরেও আহত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ঝাঁকুনির কারণে প্রতিবছর এয়ারলাইন্সগুলিও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীনও হয়। আমেরিকায় টার্বুলেন্সে বিমানের ক্ষতির কারণে কোম্পানিগুলির 50 কোটি ডলার পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই টার্বুলেন্সের পরিমাণ দিনের পর দিন আরও বাড়বে। ফলস্বরূপ আগামী দিনে বিমান যাত্রা খুব একটা সুখকর হবে না। তবে অনেকেই এই এয়ার টার্বুলেন্স সম্পর্কে জানেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক।


টার্বুলেন্স (Turbulence) হল বায়ুর এক প্রকার অনিয়মিত প্রবাহ, যার ফলে হঠাৎই বিমানে এক বা একাধিক মারাত্মক ঝাঁকুনি লাগতে পারে। কোনও প্রকার সংকেত ছাড়াই এমনটা হয়। হাওয়ার চাপ খুব বেশি থাকলেও বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে বিমানের কাঠামোতে ক্ষতিও হতে পারে। সবথেকে বড় সমস্যার ব্যাপার হল, আগে থেকে এনিয়ে কোনও আন্দাজও পাওয়া যায় না। ফলে পাইলটদের কাছে এ ধরনের ঘটনা বেশ অপ্রত্যাশিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা বজ্রপাতের সময় দেখা যায়। তবে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই টার্বুলেন্সের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

এয়ার টার্বুলেন্স কত প্রকার?

টার্বুলেন্স বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে- ক্লিয়ার এয়ার টার্বুলেন্স, থার্মাল টার্বুলেন্স, টেম্পারেচার ইনভার্সন টার্বুলেন্স, মেকানিক্যাল টার্বুলেন্স, ফ্রন্টাল টার্বুলেন্স, মাউন্টেন ওয়েব টার্বুলেন্স এবং থান্ডারস্টর্ম টার্বুলেন্স।



কত পরিমাণে বেড়েছে বলে জানাচ্ছে গবেষকরা?

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিমানের ঝাঁকুনির ঘটনাও বাড়ছে। জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার রিপোর্টে ব্রিটেনের রিডিং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে এয়ার টার্বুলেন্সের ঘটনা বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, উত্তর আটলান্টিকের একটি নির্দিষ্ট জায়গা, যা পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত বিমান রুট। সেখানে এয়ার টার্বুলেন্সের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। 1979 থেকে 2020 সালের মধ্যে সিভিয়ার এয়ার টার্বুলেন্সের মাত্রা 17.7 ঘণ্টা থেকে বেড়ে 27.4 ঘণ্টা হয়েছে, যা আগের তুলনায় 55% বেড়েছে।

টার্বুলেন্সের জন্য বিমান ভ্রমণকারীদের কী-কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

গবেষকরা জানাচ্ছেন, যদি বিমানে কোনও রকম ঝাঁকুনি হয়, তাহলে তা দেখে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। শুধু একটু সাবধান হওয়া দরকার। বিমানে ওঠা থেকে নামা পর্যন্ত পুরো সফরেই সিটবেল্ট বেঁধে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিমানের পাইলটরাও তাদের সিটবেল্ট সবসময় বেঁধে রাখেন। এতে যাত্রীরা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। আর সবথেকে যেটা জরুরি, তা হল আতঙ্কিত না হওয়া।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours