সম্পূর্ণ ফল সামনে আসার আগেই দেখা যাচ্ছে ধস নেমেছে বিজেপির লিঙ্গায়ত ভোট ব্যাঙ্কে। কর্নাটকের নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে এই বিশেষ সম্প্রদায়ই। বরাবর গেরুয়া শিবিরকেই সমর্থন করেছে এই সম্প্রদায়, এবার কেন তারা মুখ ফেরালো?

Karnataka Election 2023: বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধসের ‘কারিগর’ কি লিঙ্গায়তরাই, কেন মুখ ফেরালেন তাঁরা?ইয়িদুরাপ্পার জায়গা নিতে পারলেন না বোম্মাই
বেঙ্গালুরু: কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচন ২০২৩-এর সম্পূর্ণ ফল এখনও প্রকাশ হয়নি। তবে, ফলের প্রবণতা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, ক্ষমতা হারাচ্ছে বিজেপি। দক্ষিণী রাজ্যে একক ক্ষমতায় সরকার গঠন করতে চলেছে কংগ্রেস। সম্পূর্ণ ফল সামনে আসার আগেই দেখা যাচ্ছে ধস নেমেছে বিজেপির লিঙ্গায়ত ভোট ব্যাঙ্কে। কর্নাটকের নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে এই বিশেষ সম্প্রদায়ই। অন্ততপক্ষে ১০০টি আসনের ফল নির্ভর করে লিঙ্গায়ত ভোটব্যাঙ্কের উপর। বিশেষ করে রাজ্যের উত্তর অংশের যাবতীয় আসনেরই নিয়ন্ত্রক লিঙ্গায়ত। রাজ্যের সবথেকে বড় জনগোষ্ঠী লিঙ্গায়ত, মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ এই সম্প্রদায়ের। এর আগে বরাবরই এই সম্প্রদায়কে গেরুয়া শিবিরের দিকেই ঝুঁকে থাকতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু ফল বলছে, এইবারের নির্বাচনে এই প্রবণতা বদলে গিয়েছে। কেন এরকম হল? হঠাৎ কেন লিঙ্গায়ত সম্প্রদায় মুখ ফেরালো গেরুয়া শিবির থেকে? কী বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা?


কারা এই লিঙ্গায়ত?

বিজেপির লিঙ্গায়ত ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামার কারণ বুঝতে গেলে সবার প্রথমে বুঝতে হবে, কারা এই লিঙ্গায়ত? হিন্দু ধর্ম থেকেই লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মূলত শিবের উপাসক। প্রাথমিকভাবে লিঙ্গায়তরা পরিচিত ছিল বীরাশৈব নামে। লিঙ্গায়তদের একাংশ হিন্দু আচার-আচরণ পালন করলেও, একাংশ মনে করে, তারা হিন্দু ধর্ম থেকে আলাদা। কারণ, লিঙ্গায়ত ধর্মগুরু বাসবান্না হিন্দু ধর্মের জাতিভেদ প্রথা মানতেন না।


বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব

দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দু ধর্ম থেকে পৃথক একটি ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে লিঙ্গায়তরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বৃদ্ধির মূলে রয়েছে এই দাবিই। বিজেপি-আরএসএস হিন্দু ধর্মের সকল সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চায়, তাই তারা লিঙ্গায়তদের পৃথক ধর্মের দাবি মানতে নারাজ। পৃথক ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গায়তদের আরও দাবি, তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তকমা দিতে হবে এবং সংরক্ষণের সুবিধা দিতে হবে। ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া লিঙ্গায়তদের এই দাবি মেনে নিয়েছিলেন। কেন্দ্রের কাছে এই বিষয়ে সুপারিশও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তাদের লিঙ্গায়ত না বীরাশৈব – কী নামে ডাকা হবে, এই প্রশ্নে খোদ লিঙ্গায়ত নেতারাই দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

লিঙ্গায়ত ভোট এবং ইয়েদুরাপ্পা

দীর্ঘদিন পর্যন্ত কর্নাটকের বিজেপির মুখ ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা। তিনি লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়েরই মানুষ। লিঙ্গায়তদের আস্থা ছিল তাঁর উপর। তবে, বয়সের কারণে তাঁকে সরিয়ে তাঁর বদলে বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী পদে এনেছিল গেরুয়া শিবির। বোম্মাইও লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের। তবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইয়েদুরাপ্পার জায়গা নিতে পারেনি তিনি। তাঁকে সামনে রেখে লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বিজেপি। বাধ্য হয়েই নির্বাচনের প্রচারের মুখ হিসেবে ফের ইয়েদুরাপ্পাকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু, রাজ্যের নেতাদের বিরোধিতায় কার্যত প্রচারই করতে বেরিয়ে বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে ইয়েদুরাপ্পাকে।

লিঙ্গায়তদের জন্য সংরক্ষণ

নির্বাচনের আগে, লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের দাবি অন্যভাবে পূরণ করতে চেয়েছিল বিজেপি। ওবিসি মুসলিমদের জন্য যে ৪ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল, অতি সম্প্রতি তা বাতিল করেছিল বোম্মাই সরকার। বদলে লিঙ্গায়ত এবং আরও এক বড় সম্প্রদায় ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের জন্য ২ শতাংশ করে সংরক্ষণ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ফলে লিঙ্গায়তদের জন্য সংরক্ষণ ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ শতাংশ হয়। ওয়াকিবহালের মতে, অন্য এক সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে, তার বদলে তাদের সুবিধা দেওয়াটা ভালভাবে নেয়নি লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা সাফ জানিয়েছিলেন, এটা বাসবান্নার দর্শনের বিরোধী। ‘অন্যের মুখ থেকে রুটি ছিনিয়ে নেওয়া সংরক্ষণ’ চাই না।

আগেই ছিল আভাস

এবারের নির্বাচনে লিঙ্গায়ত ভোট যে কংগ্রেসের পক্ষে যেতে চলেছে, তার আভাস অবশ্য আগেই পাওয়া গিয়েছিল। লিঙ্গায়তদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন, ‘কর্নাটক বীরাশৈব লিঙ্গায়ত ফোরাম’-এর পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours