ধর্মতলা 'ধর্নামঞ্চ' এই নাম এখন সকলের চেনা। যোগ্য প্রার্থীরা হকের চাকরির দাবিতে লাগাতার অনশন করেছেন, বিক্ষোভ করেছেন। এমনকী বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তাঁদের জুটেছে পুলিশের মারও।

Primary Recruitment Case: 'মৃত ইঁদুর খুঁজতে কি গুদাম ঘরে আগুন লাগানো যায়?', রাস্তায় নেমে প্রশ্ন চাকরিহারাদেরবিক্ষোভরত চাকরি প্রার্থী (নিজস্ব চিত্র)
শিলিগুড়ি: শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমের খোঁচায় প্রাথমিকে ২০১৬ সালের প্যানেলের ৩৬ হাজারের নিয়োগ বাতিল হয়েছে। ইন্টারভিউতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, এই ৩৬ হাজারের মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে চাকরি হারিয়েছেন ৩০০ জন প্রাথমিক শিক্ষক। শনিবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা।


ধর্মতলা ‘ধর্নামঞ্চ’ এই নাম এখন সকলের চেনা। যোগ্য প্রার্থীরা হকের চাকরির দাবিতে লাগাতার অনশন করেছেন, বিক্ষোভ করেছেন। এমনকী বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তাঁদের জুটেছে পুলিশের মারও। এই ছবিটা দীর্ঘদিন ধরেই দেখেছিলেন রাজ্যবাসী। তবে এবার দেখা গেল উল্টো ছবি। এবার পথে নামলেন চাকরিহারারা। তাঁদের দাবি আদালতে ভরসা আছে। তবে তাঁদের স্বচ্ছ নিয়োগই হয়েছে। প্রত্যেকেই মেধাবী। চাকরিহারাদের প্রশ্ন, কেন তাঁদের থেকে কথা না শুনে শুধুমাত্র ২০-৩০ জনের বক্তব্য নিয়ে এ হেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?

চাকরিহারা এক ব্যক্তি প্রীতম অধিকারী বলেন, “বিচারপতি যদি পচা মৃত ইঁদুরের গন্ধ পেয়ে থাকেন তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব প্রশাসনের। আদালতের। বিচারপতির। এবং সংস্থার। এবার মৃত ইঁদুর বাছতে না পেরে সম্পূর্ণ গুদাম ঘরে কি আগুন লাগানো যায়? আমরা স্বচ্ছও যোগ্য মেধাবী। আমরা সিবিআই এবং ইডি-কে সব নথি দিয়েছি।” আরও এক চাকরিহারা বলেন, “আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ-আদালতে যাব। আমাদের বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একজন তো আত্মহত্যা করেছেন। মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছেন অনেকে। এই রায় প্রত্যাহার করতে হবেই। বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।”


প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে নিয়োগ হয়েছিল। সেখানে ৪২ হাজার ৫০০ জনের নিয়োগ হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৬ হাজারের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। যাঁদের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হল অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক। তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকে ৪২ হাজার ৫০০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩৬ হাজার অপ্রশিক্ষিতদের চাকরি খারিজের যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা এতদিন ধরে বিভিন্ন স্কুলগুলিতে চাকরি করছিলেন, সেই স্কুলগুলির কী হবে? এক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টে থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, সম্প্রতি যে টেট পরীক্ষা হয়েছে, সেখান থেকে নিয়োগ করতে হবে। এর পাশাপাশি যে ৩৬ হাজারের চাকরি বাতিল হচ্ছে, তাঁরা আগামী চার মাস প্যারা টিচারের বেতন নিয়ে কাজ করবেন। তাঁরা পুরো বেতন পাবেন না।

প্রাথমিকের এই মামলার দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলেছিল। মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, প্রায় ৩৬ হাজার নিয়োগের ক্ষেত্রে বেনিয়ম হয়েছে। ওই নিয়োগগুলির ক্ষেত্রে কোনওরকম অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ডেকে আনা হয়েছিল ইন্টারভিউয়ারদেরও। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালের ওই প্যানেলে থাকা অপ্রশিক্ষিত ৩৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল করতে হবে। তবে ৪২ হাজার ৫০০ জনের প্যানেলে অপ্রশিক্ষিতরা ছাড়া প্যানেলে যাঁরা প্রশিক্ষিত রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চাকরিতে কোনও সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছে আদালত।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours