ঘর-বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন পাহাড়ি গুহায় আশ্রয় নিচ্ছে জঙ্গিরা। পুঞ্চে সেনার ট্রাকে হামলাকারী জঙ্গিরাও ছিল এরকমই এক গুহায়। খোঁজ মিলল তাদের গোপন আস্তানার।

Poonch Attack: 'বাড়িতে নয়, থাকত গুহায়', খোঁজ মিলল সেনার ট্রাকে হামলাকারী জঙ্গিদের গোপন আস্তানারএই ট্রাকেই হামলা করেছিল জঙ্গিরা (ফাইল ছবি)
Follow us on

google-news-icon
শ্রীনগর: ৯/১১ হামলার পর, আমেরিকা যখন আল কায়দার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করেছিল, তারপর ওসামা বিন লাদেন-সহ আল কায়দা জঙ্গিদের আশ্রয় নিতে হয়েছিল তোড়া বোড়া অঞ্চলের পাহাড়ি গুহায়। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের মুখে পড়ে, জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গিদেরও এখন প্রায় সেই রকমই অবস্থা। ঘর-বাড়ি ছেড়ে তাদের এখন আশ্রয় নিতে হচ্ছে উপত্যকার বিভিন্ন পাহাড়ি গুহায়। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে। এমনকি, ২২ এপ্রিল পুঞ্চ সেক্টরে ভারতীয় সেনার ট্রাকে যে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল, সেই হামলাকারীরাও এরকমই এক গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুঞ্চে এইরকম বেশ কিছু গুহা পাওয়া গিয়েছে, যেখানে জঙ্গিদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। গুহার বাইরে পাওয়া গিয়েছে, সফট ড্রিঙ্কের বোতল, পলিথিনের ব্যাগ, তরিতরকারির খোসা ইত্যাদি।

পুঞ্চ সেক্টর হাতের তালুর মতো চেনেন পুলিশকর্মী ফয়জল খান। তিনি জানিয়েছেন, পুঞ্চের পাহাড়ে শতাধিক প্রাকৃতিক গুহাকে সন্ত্রাসবাদীরা তাদের গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। তার মতে, কৌশল বদল করেছে জঙ্গিরা। আগে তারা গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে কখনও বা তাদের সহানুভূতি আদায় করে, গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে থাকত। এখন তারা আর বাড়িতে নয়, পাহাড়ি গুহাতেই আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে গুহাগুলি। পুঞ্চে সামরিক ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটানো জঙ্গিরাও এরকমই এক গুহায় লুকিযে ছিল বলে দাবি সেনার। ফয়জল জানিয়েছেন, গুহাটিতে সম্ভবত তিন থেকে চারজন সন্ত্রাসবাদী আশ্রয় নিয়েছিল। গুহাটির ভিতরের যা উচ্চতা তাতে কোনও ব্যক্তি আরামে করে ভিতরে বসতে পারবেন। গুহাটি যথেষ্ট গভীরও।

ওই গুহাটি থেকে একটু নীচে আরও একটি গুহা রয়েছে। সেই গুহাটি থেকে একটি গদি উদ্ধার করেছে পুঞ্চ পুলিশ। নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমান, ওই দ্বিতীয় গুহাটিতে কোনও একজন সন্ত্রসবাদীকে রাখা হয়েছিল, উপরের গুহাটি পাহারা দেওয়ার জন্য। কারণ দ্বিতীয় গুহাটি থেকে নীচের উপত্যকাটি পুরোটা সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। অন্যদিকে, পাথর এবং কাঁটাওয়ালা ঝোপঝাড়ের আড়ালে থাকায়, গুহাগুলির মুখ নীচ থেকে প্রায় চোখে পড়ে না বললেই চলে।

এদিকে, সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য করার অভিযোগে পুঞ্চ পুলিশ, ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নিসার নামে এক ব্যক্তি, যে জঙ্গি সংগঠনের ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার বলে দাবি নিরাপত্তা বাহিনী। তাঁর কাকা মুস্তাক, তাঁর নাবালক ছেলে বিলাল এবং ফরিদ নামে আরেক আত্মীয়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে। নিসারের স্ত্রী শামীম ও মেয়ে আজরার অবশ্য দাবি, নিসার নির্দোষ। শামীম জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে সবেমাত্র ক্লাস টেনের পরীক্ষা দিয়েছিল। তাঁকেও জঙ্গিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করার সন্দেহ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও, তদন্তকারীদের মতে প্রযুক্তিতে সড়গড় বিলাল জঙ্গিজের অ্যাপ নেভিগেট করতে সাহায্য করেছিল। ফলে, তারা পাকিস্তানে তাদের হ্যান্ডলারদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছিল। মজার বিষয় হল নিসার এবং মুস্তাকের বাড়ি থেকে একটু উপরেই অবস্থিত সেই গুহাগুলি, যেখানে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছিল বলে দাবি নিরাপত্তা বাহিনীর।

নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, ওই অঞ্চল সীমান্ত এলাকা থেকে খুব কাছে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে ঘন জঙ্গল রয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদীরা স্থানীয়দের থেকে সমর্থনও পায়। তাই এই এলাকা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই এলাকায় এখনও প্রায় ২০ জন সন্ত্রাসবাদী লুকিয়ে আছে বলে সন্দেহ নিরাপত্তা বাহিনীর।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours