ইরানের হিজাব বিরোধী আন্দোলনের এক প্রতিবাদীর বিরুদ্ধে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরানের প্রশাসন। বিশ্বের একাধিক দেশ এর নিন্দা করেছেন।


গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলন চলছে। শেষে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে এক ধাপ পিছু হঠেছে ইরানের প্রশাসন। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ‘নীতি পুলিশি’। তবে ‘নীতি পুলিশি’ নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের আগ্রাসী মনোভাব কমেনি। দু’ মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ-প্রতিবাদে এই প্রথম কোনও প্রতিবাদীর মৃত্যুদণ্ডের নিদান কার্যকর করল ইরান প্রশাসন। হিজাব বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন এক নিরাপত্তা রক্ষীর উপর ছুরি নিয়ে হামলা করার অভিযোগ উঠেছিল ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এছাড়াও তেহরানের রাস্তা অবরোধের মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরিতে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। গতকাল তাঁকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়।


প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসে যথাযথভাবে হিজাব না পরার কারণে ‘নীতি পুলিশ’-র কড়া নজরে পড়েন ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি। আর পুলিশি হেফাজতেই তাঁর মৃত্যুর পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইরানের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে গোটা দেশেই প্রতিবাদ দেখা দেয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সেই রাষ্ট্রের কড়া পোশাকবিধির বিরুদ্ধে ও মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নামে। মেয়েরা প্রতিবাদে সামিল হয়ে নিজেদের হিজাব খুলে আকাশে উড়িয়ে দেন। প্রকাশ্য রাস্তায় চুল কাটেন। তাঁদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন পুরুষরা। প্রসঙ্গত, প্রশাসনও বুক চিতিয়ে এই প্রতিবাদ দমনে কড়াকড়ি করে। বিক্ষোভের আগুন জ্বলতেই ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী লাঠিচার্জ করে, গুলি চালায়। হয় ধর পাকড়ও। ১৯৭৯ সালে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এটি সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনের জন্য প্রতিবাদীদের উপর চড়াও হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত সোমবার দেশের ও ইসলামের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক কাজের ক্ষেত্রে নির্বিচারে বিনা দ্বিধায় নির্দেশ দেওয়ার জন্য বিচারব্যবস্থার কাছে আবেদন করেছে। এই আবহেই গতকাল এক প্রতিবাদীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল। তাসনিম সংবাদ সংস্থা অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির নাম মোহসেন শেকারি। এদিকে সে দেশের সংবাদ মাধ্যমের তরফে ওই ব্যক্তির এক ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, তিনি স্বীকার করছেন ছুরি নিয়ে এক নিরাপত্তারক্ষীকে তিনি আক্রমণ করেছেন এবং মোটরবাইক নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছেন। এ দিকে এক পক্ষ দাবি করেছেন, শেকারির উপর অত্যাচার করে তাঁকে এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছে।


অন্যদিকে, বিশ্বের একাধিক দেশ প্রথম থেকেই মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে এই বিক্ষোভকে সমর্থন করেছেন সেরকম এই মৃত্যুদণ্ডের পরও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁরা। ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি টুইটারে জানিয়েছেন, ‘ইরানের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সে দেশের প্রশাসনেরই এহেন অত্যাচারের প্রতি গোটা বিশ্ব চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।’ জার্মানির তরফেও এই মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে জানানো হয়েছে, অন্তত ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে ইরান প্রশাসন। তারা জানিয়েছে, ‘ইরানের কর্তৃপক্ষকে শীঘ্রই সমস্ত মৃত্যুদণ্ড বাতিল করতে হবে। তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পরও যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ নস্যাৎ করতে হবে।’ এদিকে নিজের দেশে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ছড়ানোর জন্য অন্য দেশের দিকে আঙুল তুলেছে ইরান। আর সেই অভিযোগের তির আমেরিকার দিকে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours