বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকালে বোমা বিস্ফোরণের মতো এক বিকট শব্দে শুনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওড়িশার তিন জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে। কিন্তু কীসের থেকে এই শব্দের উৎপত্তি, রাত পর্যন্ত তা রহস্যই থেকে গিয়েছে।


সাত সকালেই বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ! থর থর করে কেঁপে উঠল দরজা-জানলা, পায়ের তলার মাটি। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওড়িশার তিন জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে। ভয়ে ঘরদোর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন এলাকার লোকজন। কিন্তু কীসের থেকে এই শব্দের উৎপত্তি, বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাত পর্যন্ত তা রহস্যই থেকে গিয়েছে। ঠিক কী কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ওই জোরালো শব্দ শোনা গেল, তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। এই অবস্থায়, ওই রহস্যময় শব্দের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব উঠে আসছে। কিন্তু, নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি।



জজপুর, ভদ্রক এবং কেওনঝর জেলার একটা বড় অংশের মানুষ ওই শব্দ শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। প্রায় ১০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁদের মতে বেশ কয়েক সেকেন্ড ধরে শোনা গিয়েছে ওই শব্দটি। অনেকে মনে করেছিলেন, কাছাকাছি কোথাও হয়ত কোনও বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। আবার অনেকে ভেবেছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু, শব্দ শুনে যারা আতঙ্কে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এসেছিলেন, তারা বাইরে এসে কিছুই দেখতে পাননি। ভদ্রকের এক ব্যক্তি বলেছেন, “কোনও ভূমিকম্প বা অন্য কোনও বিপর্যয়ের চিহ্ন ছিল না।” কেওনঝরের জজপুর এবং আনন্দপুরের লোকেরাও একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

কিন্তু, কোনও বোমা বিস্ফোরণ বা ভূমিকম্প ওই এলাকায় যে ঘটেনি, তা নিশ্চিত করা গিয়েছে। ইন্ডিয়ান মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি – দুই সংস্থাই জানিয়েছে, ওড়িশায় এদিন কোনও ভূমিকম্প ঘটেনি। ভুবনেশ্বরের আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, তাদের কাছে ওড়িশায় কোনও ভূমিকম্পের কোনও তথ্য নেই। অন্যদিকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির মতে, এদিন ভারতে মাত্র একটি ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই তালিকায় ওড়িশা নেই। তারা বলেছে, “আজ, ভোরে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্র রাজ্য থেকে একটি ভূমিকম্প রিপোর্ট করা হয়েছে। ওড়িশার তিনটি জেলায় যে বিকট শব্দ শোনা গিয়েছে, তা কোনও ভূমিকম্পের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।”

রাজ্য সরকার এবং পুলিশও বিষয়টি নিয়ে ধাঁধায় রয়েছে। শব্দের উৎস সম্পর্কে তাদেরও কোনও ধারণা নেই। সংবাদ সংস্থা পিটিআই ওড়িশার এক পদস্থ পুলিশ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলেছে, “তিনটি জেলার মানুষের মধ্যে যে শব্দ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, আমাদের কাছে এমন কোনও শব্দ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই।”

এই অবস্থায় একাংশের মানুষ সন্দেহ করছেন শব্দটি খনি এলাকা থেকে এসেছে। ওড়িশার রাজস্ব ও বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা বলেছেন, “কিছু মানুষ লোক সন্দেহ করছে যে শব্দটি খনি এলাকা থেকে এসেছে। সেখানে বিস্ফোরণের জন্য ভারী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হচ্ছে।” আবার জনগণের একাংশ মনে করছে শব্দটি ছিল সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের ‘সনিক বুম’। জেট বিমানের গতি যখন শব্দের বেগ অতিক্রম করে, তখন প্রচণ্ড শব্দ হয়। একেই বলে সনিক বুম। এই তত্ত্বের বিশ্বাসীদের দাবি, খড়গপুরের কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে ওড়া কোনও যুদ্ধবিমানই এই রহস্যময় শব্দের উৎস।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours