অভিভাবকহীন হওয়ার দরুণ দীপের ছিল না জন্মের শংসাপত্র সহ অন্য শংসাপত্র।

বালুরঘাট (Balurghat) এ কে গোপালন কলোনি এলাকায় নাবালক খুনের (Murder) ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে ৫ জন। তবে তদন্ত এগোতেই ধীরে-ধীরে ফাঁস হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের তথ্য। জানা গিয়েছে, দীপের বাবা থাকলেও তারা না থাকার সমানই। মা অনেক দিন আগেই দীপকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আর বাবাও থাকেন ভিন রাজ্যে। অভিভাবকহীন হওয়ার দরুণ দীপের ছিল না জন্মের শংসাপত্র সহ অন্য শংসাপত্র। যার ফলে আট বছর বয়সেও দীপকে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। স্থানীয় একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ক্লাস ওয়ানে পড়ত দীপ।



এছাড়াও অনেক সময় দীপ শিশু শ্রমেরও শিকার হয়। যা প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই ঘটনায়। অনেকেই ভাবছেন যদি স্কুলে ভর্তি হয়ে শিক্ষার মূল স্রোতে আসতেন। তাহলে হয়ত, এমন নৃশংস খুনের ঘটনার শিকার হত না দীপ। প্রশাসনিক গাফিলতির কথা মেনেও নিয়েছে খোদ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য প্রসূন ভৌমিক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রসূণ ভৌমিক। পাশাপাশি স্কুলে ভর্তি না হওয়া ও শিশু শ্রমের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। যার ফলে ওই এলাকার এমন কোন শিশুও যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য বিশেষ নজর দিতে চলেছে প্রশাসন। পাশাপাশি দীপের মত আরও শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলাপ্রশাসনের চাইল্ড প্রটেকশন কমেটিকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য প্রসূণ ভৌমিক।

গতকাল বিকেলে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য প্রসূন ভৌমিক সহ অন্যান্যরা আধিকারিকরা মৃত দীপের পরিবারের সাথে কথা বলেন। এদিকে ওই এলাকায় আরও নানান সমস্যা রয়েছে। সেই বিষয়েও খোঁজ খবর নিয়েছেন। তবে ওই ঘটনায় প্রশাসনের একটা বড় ব্যর্থতা নজরে এসেছে। যা নিয়ে সব মহলই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেম

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল শিশুদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সেই নিয়ে জেলায় জেলায় নানা প্রচার ও কর্মসূচির মাধ্যমে সকল শিশুকে স্কুলে পাঠানোর কর্মসূচি চলে। কিন্তু জেলার সদর শহর বালুরঘাট শহরের একে গোপালন কলোনীই খোদ অন্ধকারে। ওই এলাকায় অনেক শিশুই শিক্ষা থেকে পিছিয়ে বলে জানা গিয়েছে। যা মেনেও নিয়েছে শিশু সুরক্ষা কমেটি। যার ফলে প্রশাসনের একটা বড় ব্যর্থতা সামনে এসেছে।

এ বিষয়ে, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য প্রসূন ভৌমিক বলেন, ‘ওই এলাকায় নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। শুনেছি, ওই শিশুর কোনও সার্টিফিকেট বা কোনও পরিচয় পত্রই নেই। যার ফলে স্কুলেও ভর্তি করা যায়নি। টাকার বিনিময়ে সে মানুষের বাড়িতে নানা কাজও করে দিত। দীপের এই ঘটনা আমাদের সমাজের একটা বড় সমস্যাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে। এই হোঁচট থেকেই আমাদের শিখতে হবে। ওই এলাকা তথা সমস্ত জায়গাতেই যাতে আর একটি শিশুও দীপের মত না হয়, তা সকলকেই দেখতে হবে। পাশাপাশি পুলিশকেও বলব, যাতে এই ঘটনার আসল রহস্য খুঁজে বের করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, রবিবার আট বছরের নিখোঁজ নাবালক দেহ উদ্ধারকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বালুরঘাট । নিহতের নাম দীপ হালদার। রবিবার একটি খাঁড়ি থেকে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয় ওই নাবালকের। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রতিবেশি এক পরিবারকে গ্রেফতার করা হয়। মূল অভিযুক্ত মানস সিং এবং তাঁর মা, বাবা, বোনকে গ্রেফতার করে তপন থানার পুলিশ। পরে তাঁদের তুলে দেওয়া হয় বালুরঘাট থানার পুলিশের হাতে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours