গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে কালা জ্বরে আক্রান্ত ৬৫ জনের সন্ধান মিলেছে। কালা জ্বর নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে। এই রোগের উপসর্গ কী? চিকিৎসাই বা কেমন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
গত কয়েক সপ্তাহে দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, কালিম্পং সহ ১১ টি জেলায় মোট ৬৫ জন কালাজ্বরে (Kala Azar) আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। কালাজ্বরের এমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার খবরে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মহল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও অসুখটি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন জাগছে। কালা জ্বর বা ব্ল্যাক ফিভার (Black Fever) হয় লিশম্যানিয়া পরজীবীর সংক্রমণে কারণে। স্ত্রী বেলেমাছি কালাজ্বরের জীবাণু বহন করে। কালাজ্বর দম দম ফিভার, ভিস্যার্যাুল লিশম্যানিয়াসিস নামেও পরিচিত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলির প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই রোগের প্রকোপ বেশি।

এই রোগে যকৃৎ ও প্লীহার রেটিকুলো এন্ডোথেলিয়াল তন্ত্রে প্রদাহ হয়। সাধারণত শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। কালাজ্বরের জীবাণুবাহী বেলে মাছি কোনও সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে কালাজ্বরের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। দেখা দেয় নানা রকম শারীরিক উপসর্গ। প্রোটোজোয়া বা পরজীবী শরীরে প্রবেশ করার পরে দেহের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলিকে আক্রমণ করে।

কালজ্বরের ইনকিউবেশন পিরিয়ড হতে পারে ২ থেকে ৪ মাস। সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে রোগীর শরারিক পরিস্থিতি ৬ থেকে ২ বছর পরে অত্যন্ত খারাপ হতে পারে।

কালাজ্বরের ধরন

কিউটেনিয়াস লিশম্যানিয়াসিস: কালাজ্বরের এই বিশেষ ধরনে ত্বকের খোলা অংশে নানা ধরনের ক্ষত তৈরি হয়। ক্ষত থেকে দাগ তৈরি হয়। ক্ষত বেদনাদায়ক অথবা বেদনাহীন হতে পারে। বিশেষ করে ক্ষতগুলি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত হলে ব্যথার উদ্রেক ঘটতে পারে।

কিউটেনিয়াস লিশম্যানিয়াসিলের নানা প্রকৃতি

মিউকোসাল লিশম্যানিয়াসিস: এই ধরনের কিউটেনিয়াস লিশম্যানিয়াসিসে ত্বক থেকে প্যারসাইট পৌঁছে যায় ন্যাসো ওরিফ্যারিঞ্জিয়াল মিউকোসায় (নাক ও গলার সংযোগস্থল)।

রোগ লক্ষণ

• এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রা সহ জ্বর। রোগীর অত্যন্ত ঠান্ডা লাগে।

• প্লীহা ও যকৃতের আকার বেড়ে যায়। সঙ্গে পেট ফুলে যাওয়ার লক্ষণ থাকে। পা ফোলার লক্ষণও থাকে। ত্বকে কালো দাগ দেখা যেতে পারে।

• ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, টিউবারক্যুলোসিস এবং ছত্রাক সংক্রমণের মতো একই উপসর্গ নিয়ে হাজির হতে পারে কালাজ্বর।

• রোগীর শরীরে রক্তশূন্যতা দেখ যেতে পারে।

• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

রোগ নির্ণয়ক পরীক্ষা

ডিরেক্ট অ্যাগুলেশন টেস্ট, আরকে৩৯ ডিপস্টিক এবং এলাইজা।

চিকিৎসা

একাধিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ
কর্দমাক্ত, স্যাঁতস্যাঁতে মাটির দেওয়াল বা মেঝেতে স্ত্রী বেলে মাছি ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে। দেখা গিয়েছে যেসব অঞ্চলে নিকাশি ব্যবস্থা ভালো নয় সেখানে এই রোগের প্রকোপ বেশি। বেলে মাছির বংশবৃদ্ধি রোধ করতে তাই প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকায় ডিডিটি ছড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। র্যা পিড টেস্টের ব্যবস্থাও করা দরকার। প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকায় চালাতে হবে নজরদারি।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours