চিতার জন্য কুনো পালপুর জঙ্গলকে বেছে নেওয়া হয় এখানকার তৃণভূমি, জলবায়ুর কারণে। মনে করা হচ্ছে, চিতা আসায় জঙ্গলের জীববৈচিত্র্য আবার ফিরে আসবে।


অবশেষে ভারতের মাটিতে পা রাখল ৮টি আফ্রিকান চিতা। প্রায় সাত দশক পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে নামিবিয়া থেকে এদেশে এল চিতা। আজ, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭২তম জন্মদিন থেকে মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানই এই চিতাদের বাড়ি। ৭৫ বছর পর দেশের জঙ্গলে ঘুরবে চিতা। পাশপাশি বাড়বে কুনো পালপুর জঙ্গলের জনপ্রিয়তাও—এমনটাই আশা ওয়াইল্ড লাইফপ্রেমী থেকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের। মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জঙ্গল খুব একটা জনপ্রিয় নয় পর্যটকদের কাছে। এই জঙ্গলে লেপার্ডের দেখা মিললেও জঙ্গল সাফারিতে ইচ্ছুক হন না পর্যটকরা। এবার চিতা আসায় বদলে যেতে পারে চিত্রটা।


চিতার জন্য কুনো পালপুর জঙ্গলকে বেছে নেওয়া হয় এখানকার তৃণভূমি, জলবায়ুর কারণে। মনে করা হচ্ছে, চিতা আসায় জঙ্গলের জীববৈচিত্র্য আবার ফিরে আসবে। প্রায় ৭৪৮ বর্গকিলোমিটারের এই জঙ্গলে ও ঘাসজমি এলাকায় ফিরে আসবে ‘ইকোসিস্টেম’। এতে উন্নতি হবে পর্যটন শিল্পেরও। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দেরও লাভ হবে। মধ্যপ্রদেশের কানহা টাইগার রিজার্ভ, বান্ধবগড় টাইগার রিজার্ভ, পান্না টাইগার রিজার্ভের মতো অভয়ারণ্যগুলো ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। চিতা আসায় এবার সেই তালিকায় নাম লেখাতে চলেছে কুনো। তবে এখন কুনোর বিশেষত্ব হল: দেশের একমাত্র অভয়ারণ্য যেখানে দেখা মিলবে আফ্রিকান চিতার।

দেশের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ভারতে অন্য দেশের প্রাণী ছেড়ে দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। তা-ই সরকারি খাতায় এই আফ্রিকান চিতাদের ‘ইনট্রোডাকশন’-এর বদলে ‘রিইনট্রোডাকশন’ বলা হচ্ছে। কুনোর পরিবেশে এই আফ্রিকান চিতাগুলো খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তাই কুনোর জঙ্গলে পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার আগে এক মাসের কোয়ারান্টিনে রাখা হবে চিতাদের। সেই সঙ্গে অন্যান্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে চিতাদের দেখভালের জন্য। তাছাড়া কুনোয় লেপার্ডের দেখা মেলে। চিতার শাবক যাতে লেপার্ড বা অন্য বন্যপশুর শিকার না হয়ে যায়, তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে। আবার ওই চিতা যদি জঙ্গলের গণ্ডি পেরিয়ে বেরিয়ে পড়ে, তাহলে স্থানীয় মানুষও সমস্যা পড়তে পারে।

এক সময় ভারত ছিল এশীয় চিতাদের আবাসস্থল। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলেই সেই প্রমাণ মিলবে। রাজা-মহারাজাদের শিকারের কারণে এবং সঠিক দেখভাল না হওয়ার জেরে ধীরে-ধীরে দেশে কমতে থাকে এশীয় চিতার সংখ্যা। ১৯৪৭ সালে শেষবার রাজা রামানুজ প্রতাপ সিংহ দেও তিনটি চিতা শিকার করেন। তিনি ছিলেন অধুনা ছত্তিসগড়ের অন্তর্গত সুরগুজার কোরিয়া অঞ্চলের মহারাজ। এরপর থেকে ভারতের জঙ্গলে এশীয় চিতার দেখা আর মেলেনি। প্রায় পাঁচ বছর পর, ১৯৫২ সালে সরকারি ভাবে এশীয় চিতাকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। আজ, সাত দশক পর ফের ভারতের জঙ্গলে দেখা মিলবে চিতার। কিন্তু এশীয় নয়, আফ্রিকান।



Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours