হাল্লা বোল কর্মসূচি থেকে বক্তৃতা রাখেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি এদিন বলেন, কেন্দ্রে বিজেপির সরকার আসার পর থেকে ঘৃণা ও ক্রোধ বেড়ে গিয়েছে দেশে।


দেশজুড়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। ৭ সেপ্টেম্বর কন্য়াকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। এর আগে রবিবার রাজধানীর অলিন্দে কংগ্রেসের হাল্লা বোল কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্যই এই কর্মসূচি করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সহ কংগ্রেসের একাধিক নেতা। তবে এই কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বেশ কয়েকজন জি২৩ নেতাকে। এদিন বক্তব্য রাখেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। তিনি মূল্যবৃদ্ধি সহ একাধিক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তৃতার পর ভাষণ দেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি এদিন বলেন,


কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতা আসার পর থেকেই দেশে ঘৃণা ও ক্রোধ বেড়েই চলেছে। ভয়ের একটি রূপ হল ঘৃণা। যাঁদের মনে ভয় তৈরি হয় তাঁদেরই ঘৃণা তৈরি হয়। ভারতে ভয় বেড়েই চলেছে। ভবিষ্যতের ভয়, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়ে ভয় বেড়েই চলেছে। এই কারণেই ভারতে ঘৃণা বাড়ছে। এই ঘৃণার কারণে দেশ আরও দুর্বল হয়ে যায়।
বিজেপি ও আরএসএস নেতারা দেশকে ভেঙে দেয়। এবং জেনে শুনে ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করে। মানুষকে ভয় দেখায় এবং ঘৃণা তৈরি করে মানুষের মনে। এই ভয় ও ঘৃণার সুবিধা ভারতের দুই উদ্যোগতি নিচ্ছেন। এয়ারপোর্ট, পোর্ট, সড়ক, ফোন, তেল- সবকিছু এই দুই ব্যক্তির কাছেই যাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদী নোটবন্দী করেছিলেন। তাতে কি গরিবদের কোনও সুবিধা হয়েছিল? গরিবদের পকেট থেকে পয়সা গিয়েছিল। তাঁদের বলা হয়েছিল, কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই।
দেশের বহু উদ্যোগপতিদের ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষকদের ঋণ মকুব করা হয় না। কৃষকদের বিরুদ্ধে তিনটি কালো কৃষি আইন আনব আর বলব এই আইন কৃষকদের লাভের জন্য আনা হয়েছে। যদি তা কৃষকদের ভালোর জন্যই নিয়ে আসা হয় তাহলে দেশের সব কৃষকরা এর বিরুদ্ধে কেন দাঁড়িয়েছিলেন? পথে নেমে আপনার বিরুদ্ধে কেন দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা? কারণ এই তিন আইন কৃষকদের জন্য ছিল না। ওই দুই উদ্যোগপতির জন্য ছিল। ভারতের কৃষকরা তা খুব ভালভাবেই বুঝে গিয়েছিলেন। তাই ভারতের কৃষকরা এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদীজিকে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। আর নরেন্দ্র মোদীজি যেদিন বুঝেছিলেন, দেশের কৃষকরা তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সেখানেই তিনি এই আইন প্রত্যাহার করে নেন।
এই একই জিনিসই জিএসটির সঙ্গে হয়েছিল। কংগ্রেস অন্য জিএসটি আনতে চেয়েছিল। কিন্তু বিজেপি সেই জিএসটি বদলে দিয়েছে। এই জিএসটির প্রভাব পড়ে শ্রমিক, কৃষক, ছোটোখাটো দোকানদারের উপর।
এখন চাইলেও ভারতের যুবদের কর্মসংস্থান দিতে পারবে না এই দেশ। এই দুই উদ্যোগপতি দেশকে রোজগার দেয় না। দেশে রোজগার তৈরি করে ছোটো ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। কিন্তু তাঁদের মেরুদন্ড নরেন্দ্র মোদীজি ভেঙে দিয়েছেন। তাই তাঁরা এখন আর দেশে রোজগার তৈরি করতে পারবেন না। এই বেকারত্ব কিন্তু আগামী দিনে আরও বাড়বে।
একদিকে বেকারত্ব, অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধি। ২০১৪ সালে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৪১০ টাকা ছিল। এখন তা ১০৫০ টাকা। পেট্রল তখন ৭০ টাকা লিটার, এখন যা ১০০ টাকা প্রতি লিটার। ডিজেলের দাম তখন ছিল ৫৫ টাকা প্রতি লিটার। এখন তা হয়েছে ৯০ টাকা প্রতি লিটার। সর্ষের তেলের প্রতি লিটারের দাম ছিল ৯০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা প্রতি লিটার।
ভারত রকম মূল্যবৃদ্ধি এর আগে কোনওদিন দেখেনি। কংগ্রেসের ৭০ বছরে আমরা দেশে কোনও মূল্যবৃদ্ধি হতে দিইনি।
ভারতের আম জনতা অনেক দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। বিরোধীরা এই বিষয়ে সংসদে কথা তুলতে গেলেই নরেন্দ্র মোদীজি ও তাঁর সরকার বিরোধীদের কথা বলতে দেয় না। কৃষকদের বিষয়, চিনের আক্রমণ, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি- এই সবকিছু নিয়েই আমরা সংসদে কথা বলতে পারি না।
এই সংবাদ মাধ্যম ওই দুই উদ্যোগপতিদের। তাই তাঁরাও নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারেন না। গোটা সংবাদ মাধ্যমে তাঁদের হাতে। তাহলে সত্যি কীভাবে দেখানো হবে? সত্যি কীভাবে শোনা যাবে?

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours