রের মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেও এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের গণ্ডি পেরতে পারল না এটিকে মোহনবাগান (ATK MB)। বুধবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কুয়ালা লামপুর সিটি (KLC) এফসি তাদের ৩-১-এ হারিয়ে উঠে পড়ল ফাইনালে। গোটা ম্যাচ জুড়ে এটিকে মোহনবাগানের যে বিষয়টি নজর কাড়ল, তা হল দলে গোল চেনা স্ট্রাইকারের অভাব। এ মরসুম শুরুর আগেই বহু যুদ্ধের নায়ক রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসকে ছেড়ে দিয়েছিল সবুজ-মেরুন। এই তারকা স্ট্রাইকারদের অভাবই কি অনুভব করছে সবুজ-মেরুন?

কৃষ্ণদের অভাব!

কুয়ালা লামপুর সিটির বিরুদ্ধে এএফসি কাপের ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলেনে এটিকে মোহনবাদান কোচ জুয়ান ফেরান্দোকে (Juan Ferrando) কৃষ্ণদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, কাঁর সাফ জবাব. 'আমার মনে হয় না (কৃষ্ণদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল)। ম্যাচ হারলেই তখন এইসব বিষয়গুলি সামনে উঠে আসে। তবে আমার মনে হয় যারা এখানে নেই, সেইসব খেলোয়াড়দের বিষয়ে ভেবে বা কথা বলে এনার্জি নষ্ট করা উচিত নয়। যারা স্কোয়াডে রয়েছে, তাদের নিয়েই আমায় কাজ করতে হবে আমায়। ম্যাচ হেরে সকলেই ভীষণ হতাশ। তবে আমরা নিজেদের পরিশ্রম করা চালিয়ে যাব।'

তবে সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ কোচ মেনে নিচ্ছেন দলের ফিনিশং, তাঁর চিন্তার কারণ। 'আজকের ম্যাচে মনবীর, লিস্টন, আশিকরা বেশ কয়েকটি ভাল সুযোগ পেয়েছিল বটে। তবে গোল করতে না পারাটা আমাদের দুর্বলতার মধ্যে পড়ে। কতটা বল দখলে রাখলাম, কটা পাস খেললাম, সেসবের গুরুত্বপূর্ণ নেই। আমি চাই দল গোল করুক। আমার শটগুলি তো ওদের কিপার সহজেই ধরে নিচ্ছিল। অনেক সময়ই মাঝমাঠ দখল করলেই শুধু হয় না। গোলের সামনে ক্ষিপ্রতাটাও দেখানো খুবই জরুরি হয়ে পড়ে।' মত ফেরান্দোর। 


ম্যাচের হালহকিকত

এ দিন ম্যাচের শুরু থেকে এটিকে মোহনবাগানের খেলায় শুরুতে গোল তুলে নেওয়ার যে সামান্য তাড়া দেখা যায়, কুয়ালা লামপুরের খেলায় তাও ছিল না। তাই এটিকে মোহনবাগান প্রতিপক্ষকে শুরু থেকেই চাপে রাখার চেষ্টা করে। সারা ম্যাচে তাদের বল পজেশন ৭৮ শতাংশ থাকলেও ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা। সব মিলিয়ে কলকাতার দলের ছ’টি শট লক্ষ্যে থাকলেও তার মধ্যে মাত্র একটি জালে জড়ায়। অপরদিকে, কেএলএসি-র তিনটি গোলমুখী শটই সবুজ-মেরুন গোলকিপার বিশাল কায়েথকে পরাস্ত করে।

প্রথমার্ধে ৮১ শতাংশ পজেশন থাকলেও যে পরিচিত গতিতে শুরু করে ফেরান্দোর দল, সেই গতি এ দিন প্রায় ছিল না বললেই চলে। হয়তো ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে যেতে পারে, এই কথা মাথায় রেখে অযথা শক্তি ব্যয় করতে চাইছিল না কোনও পক্ষই। কিন্তু তাতে ম্যাচটা ম্যাড়মেড়ে হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও প্রথমার্ধের মতোই হয়। এটিকে মোহনবাগান সমানে বিপক্ষকে চাপে রেখে গেলেও তার তীব্রতা কম ছিল। গতিময় আক্রমণ এই অর্ধেও দেখা যায়নি। কিন্তু ৬০ মিনিটের মাথায় হঠাৎ যে গোলটি করে ফেলেন কেএলসি-র অধিনায়ক জোসু, তার পরেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে যায়। অদ্ভূত ভাবে গোল খায় এটিকে মোহনবাগান। তাদের বক্সের সামনে আক্রম মাহিনানের ছোট পাস থেকে বাঁ পায়ে দূরপাল্লার গোলমুখী শট নেন জোসু, যা বিশাল কায়েথের ডানদিকে ওপর দিয়ে সোজা জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।

ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে শুরু করে এটিকে মোহনবাগানও। ৯০ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে জটলা থেকে পাওয়া বলে প্রথমে গোলে শট নেন কোলাসো। তাঁর শট গোলকিপারের হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসার পরে সেই বলে গোলে শট নেন ডানদিকে থাকা ফারদিন ও জালে জড়িয়ে দেন তিনি (১-১)। অসাধারণ এই গোলের আনন্দে যুবভারতীর গ্যালারিতে যে উৎসব শুরু হয়, তা দু’মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি। পরিবর্ত খেলোয়াড় ফকরুল আইমানের হেডে করা গোলে ফের এগিয়ে যায় কেএলসি। ডান দিকের উইং থেকে নেওয়া জোসুর ফ্রিকিক থেকে হেড করেন ফকরুল (২-১)। ৬ মিনিটের বাড়তি সময়ে ফের গোল পায় কুয়ালা লামপুর সিটি। এ বার কর্নার থেকে গোল পান রোমেল মোরেলস। তাঁর ডান পায়ে নেওয়া অসাধারণ শট গোলের বাঁ দিকের নীচের অংশ দিয়ে সোজা গোলে ঢুকে পড়ে (৩-১) এবং সবুজ-মেরুন বাহিনীর স্বপ্ন তখনই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours