দেশের সংবিধানে ধর্মাচারণের অধিকার সংরক্ষিত হলেও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা টেনে নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। কর্নাটকের স্কুলে পড়ুয়াদের হিজাব নিষিদ্ধ (Karnataka Hijab Row) করার মামলার শুনানিতে এমনই মন্তব্য করল শীর্ষ আদালত। আদালতের প্রশ্ন, ‘‘ধর্মাচারণের অধিকার খাটানোই যায়। কিন্তু যে স্কুলের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে, সেখানে ধর্মাচারণের অধিকার টেনে নিয়ে যাওয়া যায় কি?’’ এমন চললে, অধিকারের দোহাই দিয়ে পড়ুয়ারা স্কুলে মিনিস্কার্ট পরে চলে যেতে পারে কি, প্রশ্ন আদালতের।

হিজাব বিতর্কে স্কুলে ধর্মাচারণের অধিকার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

কর্নাটকের স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বিতর্ক চলছে। সেই মামলা পৌঁছয় শীর্ষ আদালতেও। সোমবার তার শুনানিতেই এমন মন্তব্য করে আদালত। বলা হয়, ‘‘বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত বলেন, ‘‘এক মুহূর্তের জন্য ধরে নিলাম, স্কুলে হিজাব, স্কার্ফ বা নিজের পছন্দের অন্য যা কিছু পরার অধিকার রয়েছে। কিন্তু স্কুলের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে যেখানে, সেখানে হিজাব পরা যায় কি!’’

কর্নাটকের স্কুল এবং কলেজগুলিতে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্ক চলছে। হিজাব পরিহিত মেয়েদের ক্লাস করতে না দেওয়া, পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। সেই মামলাই শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে পৌঁছয়। পোশাকের জন্য কোনও পড়ুয়াকে ক্লাস করতে না দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, প্রশ্ন তোলেন মামলাকারীরা। ধর্মাচারণের অধিকারের আওতায় হিজাব পরা বৈধ বলও যুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া বলেন, ‘‘কারও অধিকার হরণের কথা বলাই হচ্ছে না। কর্নাটক সরকার শুধু বলছে, নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরেই স্কুলে আসতে হবে পড়ুয়াদের।’’


তার প্রেক্ষিতে মামলাকারীদের আইনজীবী স্কুলের ইউফর্ম হিসেবে ওড়নার সঙ্গে হিজাবের তুলনা টানেন। স্কুলের ইউনিফর্মে ওড়না থাকলে, হিজাবে কেন আপত্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। কিন্তু বিচারপতিরা বলেন, ‘‘ওড়না এবং হিজাবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কাঁধ ঢাকতে ব্যবহার করা হয় ওড়না।’’ মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, অনেক ক্ষেত্রে ওড়না দিয়ে মাথাও ঢাকেন মেয়েরা। জবাবে বিচারপতি গুপ্ত বলেন, ‘‘পঞ্জাবের শিখ মেয়েরা শুধুমাত্র গুরুদ্বারে যাওয়ার সময়ও মাথায় ওড়না দেন। তার বেশি কিছু না।’’

এর পর মামলাকারীদের আর এক আইনজীবী রাজীব ধওয়ান আদালতে সংবিধান তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে ধর্মের অধিকার দিয়েছে। হিজাবও তার মধ্যেই পরে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত আদালতের। এর জবাবে বিচারপতি গুপ্ত বলেন, ‘‘ধর্মাচারণের অধিকার অত্যাবশক হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মাচারণের উপর জোর দেওয়া যায় কি, বিশেষ করে সংবিধানের মুখবন্ধে যেখানে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে!’’

৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি

বেশ কিছু রেস্তরাঁ এবং গল্ফ কোর্সেও পোশাক বিধি রয়েছে বলে মন্তব্য করে আদালত। আদালতের আরও সংযোজন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোশাকবিধি চালু করতে পারে না বলে দাবি করতেই পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে একজন পড়ুয়া কি স্কুলে মিনিস্কার্ট, মিডি বা নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরে যেতে পারে? হিজা বা স্কার্ফ পরা যেতেই পারে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরে ধর্মাচারণের অধিকার টেনে নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত! শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। শুধু ইউনিফর্ম পরে আসতে বলা হচ্ছে।’’ আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours