এক থেকে বারো' নাটক নিয়ে বিস্তারিতভাবে TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত আলোচনা করেছেন নাটকের নির্দেশক, অভিনেতা ও নান্দীকার নাট্যদলে অন্যতম সদস্য সপ্তর্ষি মৌলিক। উল্লেখ্য, নাটকের উপদেষ্টা সোহিনী সেনগুপ্ত।

নান্দীকার’-এর নতুন নাটক মঞ্চস্থ হতে চলেছে আগামী ২৫ অগস্ট, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে, সন্ধ্যা ০৬.৩০টায়। নাটকের নাম ‘এক থেকে বারো’। বিদেশি নাটক ‘টুয়েল্ভ অ্যাংরি মেন’-এর বাংলা নাট্যরূপ। বাংলায় নাটকটিকে রূপ দিয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী ও ‘নান্দীকার’ নাট্যদলের অন্যতম স্তম্ভ স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। একটি খুনের মামলা নিয়ে নাটক। ১২জন বিচারকের চরিত্র রয়েছে সেখানে। নাটকটি যখন শুরু হয়, দেখা যায় একজন বলছেন অভিযুক্ত নির্দোষ, ১১জন বলছেন দোষী। রেশিও ১১:১। নাটকের শেষে এক আশ্চর্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সেই পরিবর্তনে চরিত্রগুলোরও বদল দেখা যায়। নাটক নিয়ে বিস্তারিতভাবে TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত আলোচনা করেছেন নাটকের নির্দেশক, অভিনেতা ও নান্দীকার নাট্যদলে অন্যতম সদস্য সপ্তর্ষি মৌলিক। উল্লেখ্য, নাটকের উপদেষ্টা সোহিনী সেনগুপ্ত।

২০১২-১৩ নাগাদ একটি কর্মশালার মাধ্যমে ‘নান্দীকার’-এ আসেন সপ্তর্ষি। সেই থেকে নাট্যদলের সঙ্গে থেকে গিয়েছেন অভিনেতা। নিয়ত ১০০ থেকে ১৫০জন ছেলেমেয়ে ‘নান্দীকার’-এর কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকেও কিছুজন পাকাপাকিভাবে দলে থেকে গিয়েছেন। এই যোগ হতে-হতে এখন ‘নান্দীকার’-এ ছেলেমেয়ের সংখ্যা প্রায় ১০০-র কাছাকাছি। এই ১০০জনকে একটি নির্দিষ্ট নাটকে যোগদান করানো বেশ কঠিন কাজ দলের কাছে। স্বীকার করেছেন সপ্তর্ষি নিজেই। কিছু ছেলেমেয়ে আছেন, যাঁরা সক্রিয়ভাবে অভিনয় করতে চান না। আসলে যে কোনও নাট্যদলেই অভিনয় ছাড়া অন্যান্য কাজও থাকে। কেউ আছেন দিনরাত দল নিয়েই মেতে থাকেন। কেউ আবার চাকরি করতে-করতে থিয়েটার করেন।

‘এক থেকে বারো’ নাটকের মহড়ায়…

২০২০ সাল নাগাদ, লকডাউনের সময়, সকলেরই মনে সংশয় তৈরি হয়েছিল। অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত ছেলেমেয়েদের থিয়েটার করা অনেক কমেও এসেছিল। অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়ছিল সব ক্ষেত্রে। থিয়েটারেও সেই আঁচ এসে লেগেছে। প্যান্ডেমিক কাটিয়ে ওঠার পর ‘মানুষ’ ও ‘মাধবী’র মতো নাটক ফের মঞ্চস্থ করে ‘নান্দীকার’। তারই মধ্যে দলের গুরুমা স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত অসুস্থ হন এবং তিনি প্রয়াত হন। তারপরও ‘মানুষ’, ‘মাধবী’ মঞ্চস্থ হয় একাধিকবার।

সপ্তর্ষি TV9 বাংলাকে বলেছেন তাঁর স্ত্রী ও ‘নান্দীকার’-এর অন্যতম স্তম্ভ সোহিনী সেনগুপ্ত সম্পর্কে, “এই সময়টায় সোহিনী আমাদের বল ভরসা দিয়েছেন খুব। আমাদের এতগুলো ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনিই। ছেলেমেয়েরা যে মঞ্চে উঠে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিনয় করতে পারেন, সেই বিশ্বাসও দিয়েছেন সোহিনীই।”

‘নান্দীকার’-এর নতুন নাটক ‘এক থেকে বারো’-র নির্দেশকের চেয়ারে সপ্তর্ষি। বলেছেন, “নান্দীকারের প্ল্যাটফর্ম বড়সড় ব্যাপার। যেভাবে এখানে ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষিত হন, সেটা একেবারেই আলাদা। আমরা অনেকদিন থেকেই নতুন নাটক নিয়ে আলোচনায় মেতে ছিলাম। স্বাতীদি চলে যাওয়ার পর ওঁর জিনিসপত্র গোছানো হচ্ছিল। তখনই ‘এক থেকে বারো’ নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে আসে। মনে হয় এই স্ত্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতে পারি। মহড়া শুরু করি আমরা। দেখা যায়, ২৫-৩০জন ছেলেমেয়ে রয়েছেন। এদিকে পাঠ আছে মাত্র ১২টা। ১২টাই ছেলেদের পাঠ। মনে হল মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিকতা হবে। কারণ, দলে অনেক নতুন মেয়ে আছে, যাঁরা সত্যিই পরিশ্রম করছেন, কিংবা দলকে অনেকটা সময় দিচ্ছেন। তাই ১২টি পুরুষ চরিত্রের মধ্যে ৩-৪টি মহিলা চরিত্রও রাখা হয়েছে সেই কারণেই।”
এক থেকে বারো’ নাটকের মহড়ায়…

এ ছাড়াও, ‘এক থেকে বারো’ নাটকের একটি চরিত্রের জন্য দু’জন অভিনেতাকে তৈরি করা হয়েছে। দু’জনই দারুণ পারফর্ম করছেন বলে জানিয়েছেন সপ্তর্ষি। অনেকেই এই চ্যালেঞ্জকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। এমনও হয়েছে, কেউ গ্রহণ করতে পারেননি। বলেছেন, “নাটকে আমরা নাম যাচ্ছে নির্দেশক হিসেবে। অনেকটা অংশে অভিনয়ও করেছি। কিন্তু প্রথম থেকেই সকলকে বলেছিলাম, অভিনয় করতে এসে আদানপ্রদান না থাকলে কাজটা ভালভাবে হবে না। আমার যেহেতু টেলিভিশনের কাজের ব্যস্ততাও থাকে (সম্প্রতি ‘এক্কা দোক্কা’ বাংলা সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন সপ্তর্ষি) দলের অর্ঘ্য এবং অনিন্দিতা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। ছেলেমেয়েদের ঘষামাজার কাজটা অর্ঘ্য করেছে। রোজ ফোনে কথা বলতাম আমরা। এই বিষয়টা দলের সিনিয়রদের থেকে শিখেছি।”

থিয়েটার করে অর্থ রোগজার করা কঠিন বিষয় এই রাজ্যে। সেই বিষয়ের দিকেও দৃষ্টিপাত করেছেন সপ্তর্ষি। বলেছেন, “বাজারে তো কেউ বিনা অর্থে শ্রম দিতে চান না। অভিনয় করব, অথচ টাকা পাব না, এমনটা অনেকের মধ্যেই ধারণা হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, থিয়েটার খুব একটা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমও নয়। আমাদের দলে যদিও স্যালারিড সদস্যরা আছেন। যে গ্রান্ট আমরা পাই সরকারের থেকে, তা ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়। এরকম করতে-করতেই নাটক তৈরি হয়।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours